কাঁচা মরিচে অস্থিরতা: সুপারশপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ভোক্তা অধিদপ্তর

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: কাঁচা মরিচের বাজার অস্থিতিশীল করায় সুপারশপগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

রোববার রাজধানীর কাওরান বাজারে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

কাঁচা মরিচ, আদা, রসুন ও চিনির মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে সুপারশপ, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘যে সকল ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করবে, তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে- ৪০০ টাকার কাঁচা মরিচ ৬২০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি করেছে সুপারশপগুলো। তাদের এ পণ্যের দাম বাইরের বাজার প্রভাবিত করেছে। কাঁচা মরিচের অস্থির বাজারে কয়েকটি সুপারশপ কাঁচা মরিচ বিক্রি করে অতিরিক্ত মুনাফা করেছে।’

অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সুপারশপগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৫০ টাকার ওপরে মিনা বাজার এবং ৬২০ টাকা করে স্বপ্ন কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছে। যে সময়টাতে অন্য সুপারশপগুলোতে কাঁচা মরিচের দাম ছিল ৫০০ টাকার মধ্যে। ওই দিন পাইকারি বাজার থেকে ৪২০ টাকা মধ্যে কাঁচা মরিচ সংগ্রহ করেছিল সুপারশপগুলো।

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘যে সকল সুপারশপ অস্বাভাবিক লাভ করে কাঁচা মরিচের বাজারকে অস্থিতিশীল করেছে তাদেরকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে শোকজ করা হবে। শোকজের তিন দিনের মধ্যে এর জবাব প্রদান করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘কাঁচা মরিচের মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিক কিছু কারণ আছে যেমন, বৃষ্টি, ঈদের সময়ে পরিবহন সমস্যা, ছুটির জন্য পোর্ট বন্ধ থাকা ইত্যাদি। কিন্তু কাঁচা মরিচের মূল্য যে পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে তার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য কাঁচা মরিচের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের অবশ্যই ক্রয়-বিক্রয় রশিদ সংরক্ষণ করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ঈদের দুই দিন আগে থেকে কাঁচা মরিচের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়সহ সকল বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয় বাজারে একযোগে অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযানে কাঁচা মরিচ বিক্রির ক্ষেত্রে প্রাপ্ত অসংগতি যথা মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, ক্রয় রশিদ সংরক্ষণ না করা, বিক্রয় রশিদ না দেওয়া, চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে সময়ে সময়ে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, কৃষি বিপণন আইন-২০১৮ অনুযায়ী নির্ধারিত সর্বোচ্চ লাভের চেয়ে বেশি লাভ করা, বেপারী ও আড়তদারের মধ্যে মোবাইল ফোনে দাম নির্ধারিত হওয়া ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

সভায় অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক (অভিযোগ) মো. মাসুম আরেফিন এবং ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বিগত দিনগুলোতে কাঁচা মরিচের উপর পরিচালিত অভিযানের সংক্ষিপ্ত তথ্য তুলে ধরেন।

কারওয়ান বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক বলেন, ‘কারওয়ান বাজারের আড়ৎদারগণ শুধু কমিশন পান, লাভ হয় ব্যাপারীদের। পরে স্বপ্ন, প্রিন্স বাজার, ডেইলিশপ ও আগোরা সুপার শপের প্রতিনিধিরা তাদের সুপার শপে গত ২৬ জুন থেকে ০৬ জুলাই পর্যন্ত কাঁচা মরিচ ক্রয়-বিক্রয়ের উপাত্ত তুলে ধরেন। এতে সুপার শপে কাঁচা মরিচ বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কৃষি বিপণন আইন-২০১৮ অনুযায়ী নির্ধারিত সর্বোচ্চ লাভের চেয়ে বেশি লাভে বিক্রয় করার বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়।’

আলোচনা সভায় কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া বলেন, ‘ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করলে পণ্যে মূল্য কমে যায়। কিন্তু এ রকম মানসিকতা ব্যবসায়ীদের হওয়া উচিৎ নয়।’

ব্যবসায়ীদের নীতি-নৈতিকতা মেনে মানবিক দিক বিবেচনায় রেখে মুনাফা করার আহ্বান জানান তিনি।

এফবিসিসিআই’র পরিচালক সাম্প্রতিক সময়ে কাঁচা মরিচের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির তীব্র নিন্দা জানান। তিনি অসাধু ব্যবসায়ীদের ছাড় না দিয়ে আরও কঠোর ভাবে বাজার মনিটরিং করার জন্য অনুরোধ জানান।

অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘বাজার ব্যবস্থাপনা উন্মুক্ত ও স্বাধীন হওয়ার সুযোগ নিচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীদের লাভ যেন গ্রহণযোগ্য হয়।’

সভায় ডিজিএফআই’র প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি, এনএসআই’র প্রতিনিধি, ক্যাবের প্রতিনিধি, স্বপ্ন, আগোরা, ডেইলি শপ, ইউনিমার্ট, আমানা বাজার, মীনা বাজারসহ বিভিন্ন সুপারশপ প্রতিনিধি, কারওয়ান বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

-এসআর/এমএ