শুধু সতর্ক করেই অভিযান শেষ

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: চালের বাজারে অস্থিরতা শুরু হওয়ায় বাজার তদারকি শুরু করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তবে বাজার ঘুরে ট্রেড লাইসেন্স না থাকা, বেশি দামে চাল বিক্রি ও মূল্যতালিকা না থাকাসহ সুনির্দিষ্ট নানা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও সতর্কতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

শুক্রবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটের দিকে রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজারে তদারকিতে আসে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কুল প্রদীপ চাকমার নেতৃত্বে একটি টিম। সেখানে ১১টা ৩৯ মিনিট পর্যন্ত অবস্থান করেন তারা।

বিক্রেতারা বলছেন, যেখানে অভিযান চালালে দাম কমবে সেখানে না গিয়ে খুচরা পর্যায়ে অভিযান চালানো আইওয়াশ ছাড়া কিছুই না।

এ সময় দেখা যায়, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রথমেই মেসার্স জাকির ট্রেডার্স নামের প্রতিষ্ঠানে যান। তারা প্রতিষ্ঠানটির টাঙানো তালিকার সঙ্গে চালের নমুনার মিল আছে কি না সেটি খতিয়ে দেখেন। সব নমুনা চালের মধ্যে নাম ও দাম সংবলিত কাগজ লাগানোর নির্দেশ দেন কর্মকর্তারা। এরপর পর্যায়ক্রমে মেসার্স সেলিম রাইস ভাণ্ডার, ইয়াসিন ট্রেডার্স, ফিরোজ ট্রেডার্স, মানিক স্টোরসহ বেশ কয়েকটি খুচরা চালের দোকান পরিদর্শন করেন তারা।

বেশকিছু দোকানে লাইসেন্স, মূল্যতালিকা পাওয়া যায়নি। এমনকি কিছু দোকানে অতিরিক্ত দামে চাল বিক্রি করতেও দেখা যায়। তবে ৩০ মিনিটের এই অভিযানে মৌখিক সতর্কতা ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি টিম।

এর আগে মদিনা রাইস এজেন্সি নামক চালের দোকানে গিয়ে চালের মূল্য জানতে চান কর্মকর্তারা। এ সময় প্রতি কেজি আটাশ চালের দাম জানতে চান কর্মকর্তারা। ক্রেতা মনির জানান, একজাতের আটাশ ৫১ টাকা যা কেনা পড়েছে ৪৮ টাকায় এবং অন্যজাতের আটাশ চাল ৫৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে, যা ৫১ টাকায় কেনা।

তখন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিক্রেতাকে জানান, পাইকারি বাজারে কেনাদামের চেয়ে ২ টাকা বেশিতে চাল বিক্রি করা যাবে। এর বেশি বিক্রি করা অন্যায়। পরে বিক্রেতা পরিবহন খরচ এবং আড়তে কমিশন দেওয়ার কথা জানান।

এ সময় কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক চালের দাম কেজিতে ২ টাকা লাভ রেখে বাকিটা কমানোর নির্দেশ দেন। আড়তটির একজন কর্মচারী সঙ্গে সঙ্গে তালিকাটি সংশোধন করেন।

বাজার তদারকি প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কুল প্রদীপ চাকমা বলেন, আমরা দেখেছি কয়েকটি দোকানে নামভেদে চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে, আবার যারা বস্তা কিনছেন, তাদের থেকে ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে। সবমিলিয়ে চালের বাজারে আমরা একটা অসামঞ্জস্যতা পেয়েছি। আমরা তাদের নতুন করে চালের দাম লিখে দিতেও বলেছি।

তিনি বলেন, আমাদের আজকের মনিটরিং ছিল শুধুমাত্র সচেতন করার জন্যই। এরপরও যদি তারা ঠিক না হয় তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি কোনো ভোক্তা অতিরিক্ত দামে চাল কিনে, এক্ষেত্রে তিনি চাইলে ভোক্তা অধিদপ্তরে মামলা করতে পারে। এমনকি ভ্রাম্যমাণ টিমকে যদি কোনো ভোক্তা অভিযোগ জানায় তাহলে তারা ব্যবস্থা নেবে।

মানিক স্টোরের মালিক বলেন, আমরা ছোট ব্যবসায়ী, আমাদের লাইসেন্স, বাজার দর দেখে তো কোনো লাভ নেই। আমাদের কাছে দেখতে আসলে আমরা দেখিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু বড় বড় মিল মালিক ও চালের আড়ত এগুলোতে যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে কোনো ভাবেই চালের দাম কমবে না। বরং বাড়তেই থাকবে।

রফিক মিয়া নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, এখন তো বাজারে নতুন চাল আসছে, সে প্রেক্ষিতে বাজারে বরং চালের দাম কমার কথা, কিন্তু উল্টো ৭/৮ টাকা বেড়ে গেছে। এটা সিন্ডিকেটের কারসাজি। যখন দেখল নির্বাচন চলে গেছে, নতুন করে মন্ত্রীরা এখনো ওইভাবে কাজ শুরু করেনি, এই সুযোগে তারা দামটা বাড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা সারা দিনে চাল বিক্রি করি ২/৪ বস্তা, এখানে অভিযান চালিয়ে লাভ কী? দাম কমাতে চাইলে যেতে হবে গোঁড়ায়। বড় বড় কোম্পানিকে চাপ দিয়ে দাম কমালে আমরা এমনিতেই কম দামে বিক্রি করব।