কিশোরগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস দুর্নীতির আখড়া

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:

কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দালাল সিন্ডিকেটের সিল ছাড়া নড়ে না পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের আবেদনপত্রের ফাইল। সিল থাকলেই আবেদন ফাইল দ্রুত গতিতে চলে। আর এজন্য প্রতি আবেদন ফাইলে নেওয়া হয় এক হাজার ১০০ টাকা।
‘চ্যানেল ফাইল’ নামে এভাবেই প্রতিদিন শত শত পাসপোর্ট আবেদন থেকে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি এখন ঘুষ ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি জেলা শহরের বাইরে সদর উপজেলার লতিবাবাদ ইউনিয়নের কাটাবাড়িয়া এলাকায় অবস্থিত। পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন ১৫-২০টি কম্পিউটার দোকান গড়ে উঠেছে। এসব কম্পিউটার দোকানকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দালাল ও কম্পিউটার মালিকদের নিয়ে একটি দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছে। আর এই দালাল সিন্ডিকেটদের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালকসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গোপন আঁতাত রয়েছে। দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সুকৌশলে আদায় করা হয় ঘুষ বাণিজ্যের টাকা। জেলা থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩-৪শ’ পাসপোর্ট আবেদন জমা হয় পাসপোর্ট অফিসে। এ আবেদনগুলি কম্পিউটারের দোকান থেকে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। আবেদনের সময় দোকান মালিক ও দালালরা আবেদনকারীদের কাছ থেকে ব্যাংকের নির্ধারিত ফি ছাড়াও অতিরিক্ত ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা আদায় করেন।

কম্পিউটার মালিকরা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) অভিযোগ করে জানান, ‘চ্যানেল ফাইল’ এর নামে এক হাজার ১০০ টাকা পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিতে হয়। পাসপোর্ট আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় আবেদনপত্রের সঙ্গে চালান ফরমের যেকোনো স্থানে কম্পিউটার দোকানের সংকেত চিহ্নযুক্ত সিল ব্যবহার করা হয়। আর এ সিলের কারণে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বুঝতে পারেন এ আবেদনপত্রগুলো কার মাধ্যমে আসছে। এ ধরনের আবেদনপত্রগুলো পাসপোর্ট অফিস ও দালালদের মধ্যে ‘চ্যানেল ফাইল’ বলে প্রচলন রয়েছে। একেক কম্পিউটার দোকানে একেক সংকেত চিহ্ন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ধরনের আবেদনপত্র খুব সহজেই পাসপোর্ট অফিসে গ্রহণ করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিদিন বিকেল ৪টার পরে ‘চ্যানেল ফাইল’ এর নামে কোন দালালের কয়টি আবেদনপত্রের ফাইল জমা হয়েছে তার হিসাব-নিকাশ করে দালালদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী হিসাব রক্ষক আনিছুর রহমান। পরে ‘চ্যানেল ফাইল’ এর প্রতিদিনের টাকা পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক ও তার কর্মচারীরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন।

‘চ্যানেল ফাইল’ নিয়ে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী হিসাবরক্ষক আনিছুর রহমান সঙ্গে কথা বলা হয়। তিনি বলেন, ‘চ্যানেল ফাইল’ এর নাম করে টাকা নেওয়া হয় না। তবে তিনি পাসপোর্ট অফিসের বিষয়ে কথা বলতে সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আনিসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

অন্যদিকে সব নিয়ম মেনে পাসপোর্ট আবেদন করে পাসপোর্ট প্রাপ্তির তারিখ অতিবাহিত হলেও পাসপোর্ট আবেদনকারীরা মাসের পর মাস ঘুরেও তাদের পাসপোর্ট পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।