টাকা ছাড়া মিলছে না টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড!

লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি:

টিসিবির পণ্য ক্রয়ের জন্য ফ্যামিলি কার্ড পেতে লালমনিরহাটে সুফলভোগীদের গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৫০০ টাকা।

রোববার (২৭ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে গেলে সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খরচ বাবদ কার্ড প্রতি ৩০ টাকা নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করেন।

জানা গেছে, ঊর্ধ্বমুখি বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ভর্তুকি দিয়ে ন্যায্যমূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। তাই দেশের নিম্ন আয়ের ছিন্নমূল মানুষদের মাঝে টিসিবি পণ্য বিক্রি করতে সুফলভোগীদের তালিকা প্রণয়ন করার দায়িত্ব পান স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। তালিকা চূড়ান্তের পরে সুফলভোগীদের হাতে ফ্যামিলি কার্ড তুলে দেওয়া হয়। এ কার্ডধারী ব্যক্তিরা আসন্ন রমজানে দুই কিস্তিতে টিসিবির পণ্য ক্রয়ের সুযোগ পাবেন। কার্ড ছাড়া কেউ এ সুযোগ পাবেন না। তাই স্বচ্ছতার সঙ্গে তালিকা প্রণয়ন করে বিনামূল্যে কার্ড পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

তালিকা চূড়ান্তের পরে কার্ডধারীদের ছবি সম্বলিত কার্ড প্রস্তুত ও বিতরণের দায়িত্বও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে দেওয়া হয়। লালমনিরহাটে লক্ষাধিক পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন।

কার্ড প্রস্তুত হওয়ার পর সুফলভোগীদের হাতে পৌঁছে দিয়ে পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। এ সুযোগ পেয়ে সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবি কার্ড প্রতি খরচ বাবদ ৩০ টাকা করে নিয়ে কার্ড দিতে সদস্যদের নির্দেশ দেন। চেয়ারম্যানের এমন অলিখিত নির্দেশনার সুযোগ পেয়ে ইউপি সদস্যরা কার্ড প্রতি ৫০ টাকা থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

বড়বাড়ি ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের জিনাত আলী বলেন, ইউপি সদস্যকে একশ টাকা দিয়ে তবে কার্ডটি নিতে হয়েছে। টাকা ছাড়া কার্ড কাউকে দেওয়া হচ্ছে না।

একই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের শহিদুল ইসলাম বলেন, ৫শ টাকা মেম্বরকে গুনে নিয়ে তবেই এ কার্ড পেয়েছি। কার্ড ছাড়া তো কম দামের পণ্য পাওয়া যাবে না।

এমন অভিযোগ ইউপি মাঠে পণ্য নিতে আসা শত শত মানুষের। টাকা ছাড়া মিলছে না টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড। শুধু বড়বাড়ি ইউনিয়নই নয় পার্শ্ববর্তী মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নেও কার্ড নিতে সুফলভোগীদের গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা।

বড়বাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের এক নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আশরাফুল আলম বলেন, চেয়ারম্যান কার্ডের খরচ বাবদ ৩০ টাকা করে নিতে বলেছেন। তাই নিয়েছি। এ সময় কেউ চা খাওয়ার জন্য আরও ২০ টাকা মিলে মোট ৫০ টাকাও দিয়েছেন।

বড়বাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবি টাকা নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সরকার কার্ড তৈরির নির্দেশনা দিলেও জনবল বা তার জন্য কোনো বরাদ্দ দেয়নি। দুই হাজার ৪শ কার্ড তৈরি করতে যারা শ্রম দিয়েছেন তাদের পারিশ্রমিক বাবদ কার্ড প্রতি ৩০ টাকা নিয়ে ইউপি সদস্যদের হাতে কার্ড বুঝে দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কেউ নিয়ে থাকলে তার জবাব সেই দেবে। টাকা নেওয়ার সরকারি কোনো নির্দেশনা না থাকলেও খরচ বাবদ এটা নেওয়া হয়েছে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন বলেন, ফ্যামিলি কার্ডের বিপরীতে একটি টাকাও নেওয়ার নিয়ম নেই। কেউ নিয়ে থাকলে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টিসিবির পণ্য নিয়ে কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।