৫০ লাখ মানুষ অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভুগছে

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:

উপমহাদেশের বিখ্যাত সংগীত শিল্পী ও সুরকার বাপ্পী লাহিড়ী মারা গেছেন চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি। এনডিটিভির খবরে বলা হয়, অনেকগুলো জটিল রোগে ভুগছিলেন এ শিল্পী। ডাক্তারদের মতে, ওএসএ (অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া বা নিদ্রা জনিত রোগ) আক্রান্ত হয়েই মারা যান তিনি।

এদিকে, অভিনেতা অপূর্বর বাবা ওমর ফারুক ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে মারা যান। ছয় মাস ধরে ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি। তবে অপূর্ব জানিয়েছেন, রাতে ঘুমের মধ্যে কোনও এক সময় তার বাবা মারা যান। সকালে ডাকাডাকির পর যখন সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন চিকিৎসক ডাকা হয়। চিকিৎসক এসে সকালের দিকে ওমর ফারুককে মৃত ঘোষণা করেন।

এখন অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়াকে বলা হচ্ছে নীরব ঘাতক। চিকিৎসকরা বলছেন, ওএসএ নিয়ে বেশিরভাগ মানুষই জানে না। অনেক সময় এই রোগে আক্রান্তরাও বুঝতেও পারেন না যে তারা ওএসএ-তে ভুগছেন।

ওএসএ কী?

ওএসএ তথা অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া হল ঘুম সম্পর্কিত শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত একটি রোগ। এতে আক্রান্ত হলে ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাস অনিয়মিত হয়। অনেক সময় শ্বাস আচমকা বন্ধ হয়ে আসে।

বিভিন্ন ধরনের স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে। এর মধ্যে বেশি দেখা যায় অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া। এতে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

গবেষণা বলছে, অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, বার্ধক্যজনিত ও শ্বাসনালীর সমস্যা এই রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

ওএসএ আক্রান্ত ব্যক্তির ঘুমের মধ্যে মৃত্যুর আশঙ্কাও সাধারণ মানুষের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

চিকিৎসকরা বলছেন, যারা এ রোগে আক্রান্ত হন, তাদের গলার পেশী স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি শিথিল হয়ে আসে।

ওই পেশী মুখগহ্বরের ভেতরের দিক, আল জিভ ও টনসিলের মতো অংশগুলোকে ধরে রাখে। ফলে এটি শিথিল হলে শ্বাস নেওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে আসে ও ঘুমের সময় হঠাৎ শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ২ থেকে ৪ শতাংশ ওএসএ’তে ভোগেন। আক্রান্তদের বেশিরভাগই মধ্যবয়সী।

নাক ডাকা, ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসা, আচমকা ঘুম ভেঙে যাওয়া, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, ঘুম থেকে ওঠার পর মাথাব্যথা, দিনে ঘুমের প্রবণতা বেড়ে যাওয়া, মেজাজ খিটখিটে হয়ে আসা বা ঘন ঘন মেজাজ বদল এ সমস্যার সাধারণ উপসর্গ।

অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, শ্বাসনালীর সমস্যা এ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। শ্বাসকষ্ট, ধূমপানের অভ্যাস এবং পরিবারে কারও অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া থাকলেও এ রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

চিকিৎসকরা বলছেন, স্লিপ অ্যাপনিয়া একটি অবহেলিত ঘাতক ব্যাধি। এখনও এ রোগে আক্রান্ত ৯০ শতাংশ ব্যক্তিই চিকিৎসার বাইরে। দেশে এই রোগ সম্পর্কে আরও সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে শহুরে জনসংখ্যার শতকরা চার দশমিক ৪৯ শতাংশ পুরুষ ও দুই দশমিক ১৪ শতাংশ নারী ওএসএ’তে আক্রান্ত।

বিএসএমএমইউ-এর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, যাদের নাক ডাকার সমস্যা আছে, ঠিকমতো ঘুম হয় না, শরীর স্থূলকায়, তারা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। এর চিকিৎসা রয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে রোগীর সার্জারিরও প্রয়োজন হয়।

বিএসএমএমইউতে এ রোগের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা হয় বলেও জানান তিনি। লক্ষ্মণ দেখা দিলেই চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. শারফুদ্দিন।

বাংলাদেশে কত মানুষ অবস্ট্রকাটিভ অ্যাপনিয়াতে ভুগছেন প্রশ্নে সিলেট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনি লাল আইচ লিটু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাংলাদেশে এর কোনও পরিসংখ্যান নেই। তবে প্রচুর রোগী আছে।

তিনি আরও জানান, বিশ্বজুড়ে চার থেকে পাঁচ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। সেই হিসেবে বাংলাদেশের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এতে ভুগছে।

তিনি বলেন, ঘুমের ভেতর এক ঘণ্টায় পাঁচবারের বেশি যদি ১০ সেকেন্ডের জন্য নিঃশ্বাস বন্ধ থাকে তখনই সেটাকে অবস্ট্রাকটিভ অ্যাপনিয়া বলা হয়। ওজন, মদ্যপান ও ধূমপান তো বটেই, অনেকের আবার ঘুমানোর পজিশনের কারণেও এমনটা হতে পারে।

পরীক্ষা

ওএসএ রোগে আক্রান্তদের পলিসনোগ্রাফি পরীক্ষা করা হয়। সেখানে দেখা হয়, ঘণ্টায় কতক্ষণের জন্য রোগীর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়, কতবার হয় এবং কোথায় কোথায় অবস্ট্রাকশন রয়েছে।

ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, এ রোগে আগে মানুষ সচেতন ছিল না। এখন কিছুটা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এতে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে খারাপ দিক হচ্ছে, এর সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, হৃদরোগের আশঙ্কাও বেড়ে যায়। অনেকে নতুন করে এসব রোগেও আক্রান্ত হয়।