আদার দাম কেজিতে বেড়েছে ৭০ টাকা

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্গে এবার আদার দামও বাড়তে শুরু করেছে। প্রতিকেজি আদাতে দাম বেড়েছে ৭০ টাকা।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে আদার দাম বাড়ার রেকর্ড সৃষ্টি হয়।

কয়েকদিন আগেও খাতুনগঞ্জের পাইকারি মোকামে চীন থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি আদা বিক্রি হয়েছিল ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। কিন্তু একই মানের সেই আদা এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়। পাইকারিতে পণ্যটির দাম এত বেশি বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। খুচরা বাজারে এখন এক কেজি আদা কিনতে গুনতে হচ্ছে প্রায় ১৯০ টাকা। তাই এখন ‘ডাবল সেঞ্চুরি’র অপেক্ষায় আছে পণ্যটির দাম। অথচ কয়েকদিন আগেও খুচরাতে পণ্যটি বিক্রি হয়েছিল ১২০ টাকায়। শিগগির সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে আদার দাম ২০০ টাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা বলছেন ব্যবসায়ী, আমদানিকারকসহ সংশ্নিষ্টরা। তাদের মতে, ডলারের দাম বৃদ্ধি ও বাড়তি ক্ষতির আশঙ্কায় আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ী-আমদানিকারকরা। আমদানি-নির্ভরতা ও সরবরাহ সংকটের কারণে কম সময়ের ব্যবধানে দাম এত বেশি বেড়েছে। এদিকে, পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মাঝে হঠাৎ করে আদার দাম এত বেশি বেড়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে নিম্ন-মধ্যবিত্তদের। নির্ধারিত টাকায় দৈনন্দিন খরচ সামাল দিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁরা।

অন্যান্য সময়ে খাতুনগঞ্জের আড়তে আমদানি করা পেঁয়াজ, রসুনের সঙ্গে সারি সারি অবস্থায় রাখা হতো আমদানি করা আদা। তবে বর্তমানের চিত্র অনেকটা ভিন্ন। সরেজমিন খাতুনগঞ্জের কয়েকটি মোকাম ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ আড়তে আমদানি করা পেঁয়াজ ও রসুন থাকলেও নেই আদার সারি সারি বস্তা। আগের কেনা কিছু আদা থাকলেও তাও অনেকটা শেষের দিকে।

কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছর আদার চাহিদা প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ৮০ হাজার টন। বাকি চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশই আমদানি করা হয় চীন থেকে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরবরাহ সংকটে আদার দাম মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে অনেক বেড়েছে। পাইকারিতে প্রতি কেজি আদার দাম এত বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে খুচরাতে। আগে বুকিং দেওয়া আদা গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারে আসতে পারেনি। তাছাড়া দুর্গাপূজার কারণে দেশের সব স্থলবন্দরও বন্ধ রয়েছে। যার সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সরবরাহে। ডলারের দাম বৃদ্ধি ও বাড়তি ক্ষতির আশঙ্কা থেকে আমদানিকারকরা আদা আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন।

গ্রামীণ বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী বোলাই কুমার পোদ্দার বলেন, হঠাৎ করেই গত কয়েকদিন ধরে বাজারে আমদানি করা আদার সরবরাহ একেবারে কমে গেছে। যে কারণে বেশিরভাগ আড়তে আমদানি করা আদা নেই। পরিচিত কয়েকজন আমদানিকারক আগে চীন থেকে আদার বুকিং দিলেও সেসব আদা এখনও বাজারে এসে পৌঁছায়নি।

হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ডলারের অতিরিক্ত মূল্যের কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই বাড়তি লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। আমদানি করা আদার একটি বড় অংশ এরই মধ্যে নষ্টও হয়ে গেছে। যে কারণে ক্ষতি থেকে বাঁচতে তাঁরা আগের চেয়ে আমদানির পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। দাম বৃদ্ধি ও সরবরাহ সংকটের জন্য এটি একটি অন্যতম কারণ।

খাতুনগঞ্জে প্রধানত হিলি স্থলবন্দর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আসে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে গত ২ অক্টোবর থেকে পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের মোট চাহিদার এক-তৃতীয়াংশেরও কম আদা উৎপাদন হয় দেশে। তাই আমদানি- নির্ভরতাই একমাত্র ভরসা। আর স্বাভাবিক গতির আমদানি সরবরাহে একটু সমস্যা দেখা দিলেই হু হু করেই পণ্যটির দাম অনেক বেড়ে যায়। খাতুনগঞ্জের আদার বাজার পুরোপুরি চীননির্ভর। বাজারে দেশি আদা থাকলেও মান ভালো না হওয়ায় চাহিদা খুবই কম। তবে চীন থেকে আমদানি করা আদার মান খুবই ভালো।

ক্যাবের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা সবসময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। অতীতে এর অনেক প্রমাণও পেয়েছি আমরা। সে পথেই সংকট দেখিয়ে কারসাজি করে আদার দাম বাড়ানো হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত। তাই বাজারের আসল চিত্র তুলে ধরতে প্রশাসনকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।