চালের দাম কমলেও পাইকারি-খুচরা পর্যায়ে বিস্তর ফারাক

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় ঈদুল ফিতরের পর গত এক সপ্তাহে মোটা ও চিকন সব ধরনের চালের দাম কমেছে। এতে দীর্ঘদিন পর চালের বাজারেও অস্থিরতা কমেছে।

তবে পাইকারি বাজারে চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা কমলেও খুচরা বাজারে কমেছে মাত্র ২ থেকে ৩ টাকা। বেঁচে থাকার জন্য জরুরি এ খাদ্যপণ্যের দাম কমায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ক্রেতারা স্বস্তি বোধ করছেন। একই সঙ্গে বাজার স্থিতিশীল রাখতে মিল মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের ওপর নজরদারিতে বাড়াতে গুরুত্বারোপ করেছেন।

এদিকে নতুন চাল বাজারে এলে কয়েক দিনের মধ্যে দাম আরও কমে যাবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, এ সময়ে চালের দাম কমা স্বাভাবিক। প্রতি বছর বিশেষ করে এপ্রিল, মে মাসে নতুন ধান ঘরে ওঠে। এছাড়া হাওর অঞ্চল থেকে কয়েকটি মোকামে নতুন ধান আসা, পুরনো চালের কেনাবেচা না থাকা, ব্যবসায়ী, পাইকার ও ফড়িয়াদের কাছে প্রচুর ধান-চালের মজুদ থাকে। কয়েকদিন পর থেকে বাজারে নতুন চাল আসতে শুরু করবে। ফলে দাম কম থাকবে।

বৃহস্পতিবার (৪ মে) রাজধানীর কয়েকটি খুচরা ও পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুচরা বাজারে জাত ও মান ভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭৪ টাকা। নাজিরশাইল চাল ৭০ থেকে ৭৮ টাকা, মাঝারি মানের বিআর আটাশ চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা এবং মোটা স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা ও হাইব্রিড মোটা ৪৮ টাকা।

এক সপ্তাহ আগেও খুচরা বাজারে জাত ও মান ভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৭০ থেকে ৭৬ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৭২ থেকে ৮০ টাকা, মাঝারি মানের বিআর আটাশ চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা, মোটা চাল স্বর্ণা ৫৫ টাকা এবং হাইব্রিড মোটা ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল।

পাইকারি বাজারে বর্তমানে চিকন চাল প্রতি কেজি মিনিকেট মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৪ টাকা। ৫০ কেজির বস্তা ৩০০০ থেকে ৩২০০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে মান ভেদে বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৭৪ টাকা আর বস্তা ৩৫০০ থেকে ৩৭০০ টাকা। নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭১ টাকা আর ৫০ কেজির বস্তা ৩০০০ থেকে ৩৫৫০ টাকা যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৬৫ থেকে ৭৭ টাকা, বস্তা ৩২৫০ থেকে ৩৮৫০ টাকা। দেশি বাসমতী চাল প্রতিকেজি ৭০ টাকা, বস্তা ৩৫০০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৭৬ টাকা, আর বস্তা ৩৮০০ টাকা।

মাঝারি মানের প্রতি কেজি বিআর ২৮ চাল ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা আর বস্তা ২৭৫০ থেকে ২৮৫০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, বস্তা ২৯০০ থেকে ৩০০০ টাকা। লতা প্রতিকেজি ৫৭ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, আর বস্তা ২৯০০ থেকে ৩০০০ টাকা।

মোটা চাল প্রতি কেজি স্বর্ণা/পাইজাম চাল মান ভেদে ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা আর বস্তা ২৩৫০ থেকে ২৪০০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৫২ টাকা আর বস্তা ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা। হাইব্রিড ধানে চাল (গুটি) বা সব চেয়ে মোটা চালের দাম কেজিতে ৪৩ টাকা, আর বস্তা ২১৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৪৬ টাকা কেজি, বস্তা ২৩০০ টাকায় বিক্রি হতো।

এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ বছর বোরোতে রেকর্ড ২ কোটি ২০ লাখ টনের মতো চাল উৎপাদন হবে। চলমান ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৯ লাখ ৭৬ হেক্টর জমি। আর আবাদ হয়েছে প্রায় প্রায় ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে। মাঠে ধানের অবস্থা ভালো, হাওরের ধানও ভালোভাবে কাটা গেছে। আশা করছি, লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১০ লাখ টন বেশি চাল উৎপাদন হতে পারে। কৃষকেরা ভালো দাম পাচ্ছেন। ধান কাটার পরই জমি থেকে ৯০০ থেকে ১১০০-১২০০ টাকা মণ দরে কৃষকেরা ধান বিক্রি করতে পারছেন।