মেঘনায় ইলিশের সঙ্গে ধরা পড়ছে পাঙ্গাস

চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় নিরাপদে ইলিশের ডিম ছাড়ার জন্য সরকারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে সোমবার (২৫ অক্টোবর) দিনগত রাত ১২টায়।

এরপরই মাছ শিকারে নেমেছেন জেলেরা।

ছয় থেকে সাত ঘণ্টায় ইলিশ খুব বেশি না উঠলেও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাঙ্গাস। একেক জেলে নৌকায় ১০-১৫টি করে পাঙ্গাস মাছ পাওয়া যাচ্ছে। আবার জমে উঠেছে মেঘনা পাড়ের আড়তগুলো। আসতে শুরু করেছেন পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা।
মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টায় সদর উপজেলার হরিণা ফেরিঘাট এলাকায় মেঘনার পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, আড়তগুলো বেশ জমাজমাট। বড় বড় ট্রলারগুলো ঘাটে এসে ভিড়ছে। ট্রলার থেকে আড়তে নামানো হচ্ছে ইলিশ ও বড় বড় পাঙ্গাস। জেলেরা তাদের নির্দিষ্ট আড়তে মাছগুলো উঠাচ্ছেন। হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি হচ্ছে পাইকারি ও খুচরা।

সদরের হানারচর ইউনিয়নের গোবিন্দিয়া গ্রামের জেলে আলম ও মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সোমবার দিনগত রাত ১২টার পর ১০ জন জেলে নৌকা নিয়ে নদীতে নেমেছেন। ভোরে তারা আড়তে এসেছেন। ইলিশ মাছ পেয়েছেন প্রায় ৩০ কেজি। বেশি পেয়েছেন পাঙ্গাস। তাদের পাওয়া আটটি পাঙ্গাস মাছের মধ্যে প্রতিটি বিক্রি হয়েছে পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত। ইলিশের চাইতে পাঙ্গাস পেয়ে তারা অনেক আনন্দিত। গোল্টি জালেই পাঙ্গাস বেশি ধরা পড়ে।

চাঁদপুর শহরের রঘুনাথপুর এলাকা থেকে হরিণা আড়তে ইশিল কিনতে এসেছেন রাকিব হোসেন ও তার চাচা আব্দুল্লাহ। রাকিব বলেন, শহরের বাজারের চাইতে হরিণা আড়তে ইলিশের দাম কম। ছয়টি বড় সাইজের ইলিশ ডাকে কিনেছি দুই হাজার আটশ’ টাকা দিয়ে। ওজন হবে পাঁচ কেজির বেশি।

আড়ত থেকে ঠিকা ছোট ও বড় সাইজের ইলিশ কিনে স্তুপ করছেন ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর গাজী। তিনি বলেন, আমি সব সময় এ আড়ত থেকে পাইকারি ইলিশ কিনে ফরিদগঞ্জ উপজেলার চান্দ্রা বাজারে বিক্রি করি। ভোরে এসেছি। ২২ দিন পর আজ শুরু হলো ব্যবসা। ইলিশের দাম মোটামুটি ভালো। তবে পাঙ্গাসের আমদানি অনেক বেশি। ১৪টি আড়তের মধ্যে অধিকাংশ আড়তেই আজ পাঙ্গাস বিক্রি হচ্ছে।

ঘাটের প্রবীণ মৎস্য ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম সৈয়াল বলেন, অভিযান মাত্র শেষ হয়েছে। জেলেরাও মধ্যরাতে নেমেছেন নদীতে। ভোর থেকেই ইলিশ ও পাঙ্গাস মাছ আসছে। আশা করা হচ্ছে, ইলিশ ও পাঙ্গাসের আমদানি ভালো হবে।

অপর মাছ ব্যবসায়ী মোক্তার গাজী বলেন, প্রতিটি পাঙ্গাস মাছ গড়ে পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আমাদের আড়তের মাছগুলো ঠিকা বিক্রি হয়। ইলিশ প্রতি হালি বড় সাইজের দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। ছোট সাইজের ইলিশের হালি চারশ’-পাঁচশ’ থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য পদ্মা-মেঘনায় গত ২২ দিন ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণই বন্ধ রাখা হয়। এতে সাগর থেকে উঠে আসা সব প্রজাতির মাছেরই বিচরণ বাড়ে নদীতে। আশা করছি, এখন ইলিশসহ সব ধরনের মাছের আমদানিই বাড়বে। শুধু ইলিশই নয়, গত কয়েক বছর পাঙ্গাসের আমদানি অনেক বেড়েছে।