ডিজিটাল পেমেন্ট নিতে রেস্টুরেন্টের অনীহা, গ্রাহকদের ভোগান্তি

রাজধানীর অনেক বড় রেস্টুরেন্ট এবং খাবারের দোকানগুলো যেমন, কাচ্চি ভাই, সুলতানস ডাইন এমনকি বারও ডিজিটাল পেমেন্ট নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে

সারা দেশে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ব্যাপকভাবে নগদ অর্থে লেনদেন হয়েছে। তবুও ব্যাংক কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ এ বছরের জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা কমেছে। মে মাসের তুলনায় আগস্টে ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন প্রায় ১ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা বা ৬.৮% কমেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউন শেষ হওয়ায় এবং গণটিকা কার্যক্রমের কারণে এমনটি হয়েছে।

তাহলে কি ডেবিট কার্ড জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে?

রেস্টুরেন্টে নেওয়া হয় কেবল নগদ অর্থ

রাজধানীর অনেক বড় রেস্টুরেন্ট এবং খাবারের দোকানগুলো যেমন, কাচ্চি ভাই, সুলতানস ডাইন এমনকি বারগুলোও ডিজিটাল পেমেন্ট নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে না জেনেই খাবারের অর্ডার দেওয়ার পরে গ্রাহকদের হয়রানি হতে হচ্ছে।

তবে কয়েকটি রেস্টুরেন্ট প্রবেশপথে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে রেখেছে।

শুধুমাত্র নগদ অর্থে বেচা-কেনার কারণ চাইলে ক্যাশিয়ার বা ওয়েটাররা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কারণ হিসেবে “সফটওয়্যার-সম্পর্কিত সমস্যা” বলে অভিহিত করেন।

রেস্টুরেন্ট এবং দোকানে লেনদেনের সফটওয়্যার সেটআপ করেন জোবায়ের শিহাব। তিনি বলেন, “আমাদের সফটওয়্যারের মাধ্যমে লেনদেন করে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান কার্ডে টাকা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।”

সম্প্রতি ধানমন্ডির একটি রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন এমন একজন গ্রাহক জানান, “খাওয়ার পরে দেখলাম রেস্টুরেন্টে কার্ড বা বিকাশ পেমেন্ট নিতে চায় না। বাধ্য হয়ে আমি অপেক্ষা করি এবং আমার বন্ধু বাইরে গিয়ে এজেন্টের কাছ থেকে ক্যাশআউট করে এরপর আমরা বিল দেই। অথচ ঢোকার সময় বা অন্য কোথাও তারা শুধুমাত্র নগদ গ্রহণের বিষয়ে কোনো নোটিশ টানায়নি।”

নগদ অর্থ লেনদেনে ভ্যাট এবং ব্যাংক চার্জ দিতে হয় না

বাধ্যতামূলক হলেও অনেক রেস্টুরেন্টই পণ্যের মূল্যের সঙ্গেই ভ্যাট অন্তর্ভুক্তির সরকারি নির্দেশনা মানছে না।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা বলছেন, এর পেছনে ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

রেস্টুরেন্ট মালিকরা অবশ্য হয়রানির জন্য এনবিআরকে দায়ী করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মালিক বলেছেন, “কোভিড-১৯ এর সময় আমাদের ব্যবসা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এনবিআর ভ্যাট ও ট্যাক্স নিয়ে আমাদের ওপর অনেক চাপ দিতে থাকে। আর এনবিআরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা আমাদের হয়রানি করছে।”

এনবিআরের ভ্যাট অডিট, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান বলেন, “কারও বিরুদ্ধে লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ পাওয়া গেলে এনবিআর তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে এবং সেই অভিযোগগুলো ক্ষতিয়ে দেখবে এবং দোষী প্রমাণিত হলে তাদের কঠোর শাস্তি হবে।”

শুধুমাত্র নগদ অর্থে লেনদেনের কারণ জানতে চাইলে একটি রেস্টুরেন্টের মালিক ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “সোজা কথায়, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে করা কোনো লেনদেনে ভ্যাট বা ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ কারণেই সম্প্রতি অনেক রেস্টুরেন্ট কার্ড লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে। তাছাড়া, কার্ড লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত চার্জও নেয় যা মালিকদের পকেট থেকে যায়।”

মইনুল খান বলেন, “সাধারণত ভ্যাট কর্মকর্তারা অনুসন্ধানের সময় ডিজিটাল লেনদেন চেক করেন। এখন ব্যবসায়ীরা নতুন পদ্ধতি বেছে নিলে আমাদেরও সিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে। কেন তারা এমনটা করছে তা আমরা জানতে চাইব। আর ভ্যাট ফাঁকি বা কর প্রদানে অবহেলার কোনো সমস্যা থাকলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

রাজস্বের ওপর প্রভাব

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাসের পর আগস্ট মাস শেষ হয়েছে ৫ হাজার ২১০ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতির মধ্য দিয়ে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এনবিআর আগস্টে রাজস্ব সংগ্রহ করেছে ১৯ হাজার ১৯৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, যা জুলাই মাসে ছিল ১৫ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। যা মাসিক রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা কম।

মইনুল খান বলেন, “নতুন প্রশাসন ভ্যাট আদায়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এর ফলে রাজস্বও বাড়ছে। তাছাড়া, আমরা লক্ষ্য করেছি সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে দায়িত্বশীলভাবে ভ্যাট দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।”