ভারতের ডিম দেশের বাজারে বিক্রি নিয়ে শঙ্কা

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: দেশের বাজারে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সম্প্রতি ১০ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর এ খবরে এরই মধ্যে ভারতে ডিমের দাম বেড়ে গেছে। ডিমের ওপর ৩৩ শতাংশ শুল্ক থাকায় বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করা নিয়েই শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

যদিও অনুমতি পাওয়ার ১৯ দিনেও একটি ডিমও আমদানি হয়নি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এ সপ্তাহে আমদানি করা ডিম বাজারে আসবে, তখন ডিমের দাম কমে যাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর চার প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় ২১ সেপ্টেম্বর আরও ছয় প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে ছয় কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয় হয়। গত ০২ অক্টোবর থেকে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমদানি অনুমতিপত্র দিচ্ছে আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর। ফলে আশা করা যাচ্ছে চলতি সপ্তাহে আমদানি করা ডিম চলে আসবে। তখন আর ডিমের সংকট থাকবে না। পাশাপাশি ডিমের দামও কমে আসবে। সপ্তাহ শেষ থেকে সরকার নির্ধারিত দামেই ডিম পাওয়া যাবে।

আমদানিকারকরা বলছেন, গত ০২ অক্টোবর আমদানিকারকদের আইপি দেওয়া হয়েছে। এখন এলসি খুলে ডিম আমদানি করতে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে সংকট হয়েছে অন্য জায়গায়। বাংলাদেশের আমদানির খবরে ভারতে ডিমের দাম বেড়ে গেছে। বর্তমানে ভারতে প্রতিটি ডিমের দাম এখন ৫.৭০ রুপির আশপাশে। যা আমদানির অনুমতি পাওয়ার আগে ছিল ৪.৮০-৪.৯০ রুপি করে। এর সঙ্গে ডিমের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ও ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ রয়েছে। মোট শুল্ক-করভার ৩৩ শতাংশ। সে হিসেবে প্রতিটি ডিম বাংলাদেশে আসতে খরচ পড়বে কমপক্ষে ১০ টাকা।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকতা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ডিম আমদানির অনুমতিপত্র (আইপি) পেয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। আশা করছি চলতি সপ্তাহেই আমদানি করা ডিম বাজারে আসবে। তখন দাম কিছুটা কমবে। আপাতত ডিম আমদানির জন্য নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান আবেদন করেনি। তবে আবেদন করলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেটি বিবেচনা করবে।

এক কোটি ডিম আমদানির অনুমতি পাওয়া চিজ গ্যালারির স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন বলেন, আমরা গত সপ্তাহে আমদানির অনুমতিপত্র পেয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশের আমদানির খবরে এরই মধ্যে ভারতে ডিমের দাম বেড়ে গেছে। একইসঙ্গে ৩৩ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। দেশে আসতে আসতে প্রতিটি ডিমের দাম পড়বে ১০ টাকা, যা কমপক্ষে ১০.৩০ টাকায় বিক্রি করতে হবে। ১০.৩০ টাকার ডিম খুচরা বাজারে অন্তত ১২-১২.৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

মীম এন্টারপ্রাইজের মালিক ইয়ার হোসেন বলেন, গত ০২ অক্টোবর আমরা আমদানির অনুমতিপত্র (আইপি) পেয়েছি। আইপি পাওয়ার পর সপ্তাহ খানেক তো লাগবেই ডিম আনতে। এতদিন আইপি না পাওয়ার কারণে ডিম আমদানির এলসিই খুলতে পারেনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে আশা করছি চলতি সপ্তাহের শেষ নাগাদ আমদানি করা ডিম পাওয়া যাবে বাজারে।

শনিবার রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সরকার নির্ধারিত দাম ১২ টাকায় (একটি), আবার কোথাও কোথাও এর চেয়ে বেশি ১২.৫০ টাকা দরে ডিম বিক্রি হচ্ছে। আর পাড়া মহল্লার দোকানগুলোতে প্রতিটি ১৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে রায়সাহেব বাজারে ডিম ব্যবসায়ী মো: আবুল বাসার বলেন, ডিম আমদানির ঘোষণার পর ডিম দাম কিছুটা কমেছে। তবে সেটি প্রায় এক মাস আগের কথা। তারপর আর ডিমের দাম কমেনি৷ আর ভারতের ডিমও বাজারে আসেনি৷ আজকে আড়ত থেকে ১০০ ডিম ১১৮০ টাকায় কিনেছি। সে হিসেবে প্রতিটির দাম পড়ে ১১ টাকা ৮০ পয়সা। এরসঙ্গে খরচ ২০ টাকা যোগ হয় তখন দাম পড়ে ১২০০ টাকা। আমরা পাইকারি বিক্রি করছি ১২৩০ টাকা। এতে প্রতি হালির দাম পড়ে ৪৯ টাকা ২০ পয়সা। আর খুচরায় ১০০টি ডিম ১২৫০ টাকা বিক্রি করলে হালি ৫০ টাকা পড়ে। কিন্তু পাড়া মহল্লায় সেটি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা হালি।

তিনি বলেন, ভারতের ডিম আসলেও লাভ হবে না, কারণ সেখানেও ডিমের দাম বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বেশি দামে এনে বেশি দামেই বিক্রি করবে। তারাতো আর লোকসান দেবে না। কাজেই সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে সেটি কার্যকর করতে হলে ফার্ম ও আড়ৎদারদের ধরতে হবে। তারা যদি দাম না কমায় আমরা কমাতে পারবো না।

জানা গেছে, বাজারে ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর এসব পণ্যের দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বেঁধে দেওয়া এ দর যথাযথভাবে কার্যকর না হওয়ায় প্রথম দফায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর চার প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে: মীম এন্টারপ্রাইজ, প্রাইম এনার্জি ইমপোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লায়ার্স, টাইগার ট্রেডিং ও অর্ণব ট্রেডিং লিমিটেড।

দ্বিতীয় দফায় ২১ সেপ্টেম্বর আরও ছয় প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে ছয় কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেসব প্রতিষ্ঠান হলো: চিজ গ্যালারি, পপুলার ট্রেড সিন্ডিকেট, এমএস রিপা এন্টারপ্রাইজ, এসএম করপোরেশন, বিডিএস করপোরেশন ও মেসার্স জয়নুর ট্রেডার্স। মোট ১০ প্রতিষ্ঠানকে ১০ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়।

বিদেশ থেকে ডিম আমদানির ক্ষেত্রে চারটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। শর্তগুলো হলো: এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লুমুক্ত দেশ থেকে ডিম আমদানি করতে হবে। আমদানি করা ডিমের প্রতিটি চালানের জন্য রপ্তানিকারক দেশের সরকারের নির্ধারিত বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের দেওয়া এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু ভাইরাস ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ামুক্ত সনদ দাখিল করতে হবে। এছাড়া নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি করা যাবে না এবং সরকারের অন্যান্য বিধিবিধান প্রতিপালন করতে হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, প্রতিদিন ডিমের চাহিদা চার কোটি। দেশের খামারিরা বলছেন করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বেড়ে যাওয়া ফিডের দামের প্রভাবে অনেক খামারি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। যে কারণে ডিমের উৎপাদন পৌনে তিন কোটিতে নেমেছে। অন্যদিকে মাছ, মাংস, সবজির দাম চড়া হওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষের নির্ভরতা বেড়েছে ডিমের ওপর। এ পরিস্থিতির সুযোগে ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম বাড়িয়ে দেয় এবং প্রতিটি ডিমের দাম গিয়ে দাঁড়ায় ১৫-১৬ টাকায়।