সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমলো

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ০১ মার্চ থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে।

মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক টাক্সফোর্সের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

সম্প্রতি ভোজ্যতেলের শুল্ক কমানোর বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, টিকে গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, এস আলম, বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিনিধিরা আছেন। আমি ওনাদের বলেছি, প্রধানমন্ত্রী প্রত্যাশা করেন আমাদের যারা শিল্প এবং ব্যবসায়ী বড় আকারের আছেন তাদেরও সোশ্যাল একটা দায়িত্ব আছে। সবকিছু বিবেচনায় বলবো না যৌক্তিক ভাবে, কিছুটা অযৌক্তিক ভাবেও আমরা উনাদের অনুরোধ করেছি এবং উনারা ভোজ্যতেলের দাম ১০ টাকা প্রতি লিটারে কমানোর জন্য একমত হয়েছেন। উনারা নিজেরাই প্রস্তাবটা করেছেন।

তিনি আরও বলেন, সর্বোচ্চ বাজারমূল্য রমজানে প্রতি এক লিটারের বোতল ১৬৩ টাকা করার বিষয়ে আমরা একমতে পৌঁছেছি। যে মূল্যটা ছিল ১৭৩ টাকা এবং তার আগের বছরে ১৮৫ টাকার মতো ছিল।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের সার্কুলারটা এসেছে ০৮ ফেব্রুয়ারি, যে কোনো জাহাজের বিদেশ থেকে আসতে প্রায় এক মাস লেগে যায় এবং সেটা খালাস করে ভোক্তা পর্যায়ে যেতে মিনিমাম দুই মাস লাগে। দুই মাস আমাদের রমজানের নেই। ওনারা আমাদের বিশেষ অনুরোধে বাজারমূল্যটা ০১ মার্চ থেকে কার্যকর করবে।

তিনি বলেন, যেহেতু তেলের সঙ্গে অনেক কিছু সম্পৃক্ত, ভোক্তা পর্যায়ে একটি স্বস্তি বাজারে আসবে এবং খুচরা পর্যায়ের আমরা যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনবো। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি লুস পর্যায়ে সর্বোচ্চ মূল্য থাকবে ১৪৯ টাকা। আর পাঁচ লিটারের বোতল ৮০০ টাকায় বিক্রি হবে। আশা করছি, এতে আমাদের ভোক্তা সাধারণ উপকৃত হবেন।

আহসানুল ইসলাম বলেন, আমাদের যারা ব্যবসায়ী আছেন বিভিন্ন পর্যায়ের তারা এটুকু নিশ্চিত করেছেন আগামী রমজানে যে পরিমাণ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বাজারে থাকা দরকার তা মোটামুটি পর্যাপ্ত আছে।

তিনি বলেন, আপনারা সবাই জানেন ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধ, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ, বিভিন্ন কারণে পরিবহনের ব্যয় বেড়েছে, ডলারে আমদানি পর্যায়ে ব্যয় বেড়েছে। তারপরও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য ব্যবসায়ীরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যৌক্তিক পর্যায়ে দাম যাতে থাকে সেজন্য কিছু চেঞ্জ করেছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আগামীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় যে পণ্যগুলো আছে, সেগুলো আমদানিতে আরেকটু সহযোগিতা কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো যাতে করে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে, ওই জন্য পদক্ষেপ তারা নেবে। সেই সঙ্গে এনবিআরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যগুলোর ট্যারিফ আগামী বাজেটে যেন যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে গোলাম মাওলা বলেছেন- উৎপাদককারী যারা আছেন তাদের সরবরাহ যদি ঠিক থাকে, উনাদের কাছে যে আমদানিকৃত পণ্য আছে এবং যে পরিমাণ মজুত আছে- এটা রমজানের জন্য যথেষ্ট।

তিনি বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ এবং চিনি আমদানির জন্য যে প্রক্রিয়াগুলো আমরা নিয়েছি, নীতিগত ভাবে ভারত সরকার পেঁয়াজের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। এখন আমরা অফিসিয়ালি কাগজ পেলে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে এসে পৌঁছাতে পারে, সে পদক্ষেপ নেব।

তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমরা যেন বর্ডার থেকে নদী পথে আনতে পারি সে ধরনের একটি এমওইউ ড্রাফট আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এসেছে।

আহসানুল ইসলাম বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে কথা বলেছি উনি ব্যাপারটিকে পজিটিভ ভাবে নিয়েছেন। আমাদের যিনি নৌ-পরিবহন মন্ত্রী রয়েছেন, ওনাকে নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের যে দ্বিপাক্ষিক নৌ পরিবহন চুক্তি আছে তার মাধ্যমে যেন মিয়ানমার থেকে সহজে পণ্য বাংলাদেশে নিয়ে আসতে পারি।

তিনি বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় বছরে দুইবার পেঁয়াজ উৎপাদনের যে উদ্যোগ নিচ্ছে, আশা করছি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চালের মত এটাতেও আমদানি নির্ভর হতে হবে না।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিতরণ শুরু করেছি। এই রমজানে আরও দুইবার আমরা এটা করব। সেখানে চাল পাঁচ কেজি, তেল, ডাল, চিনি, খেজুর এবং ছোলা থাকবে।

তিনি বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের নেতৃত্বে আগামী ২২ তারিখ মৌলভীবাজারে যাবো এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করব। যাতে তারা পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলো ভোক্তাদের জন্য অ্যাভেলেবল রাখতে পারে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আহসানুল ইসলাম বলেন, আজকে শুধু ভোজ্যতেলের বিষয়ে কথা বলেছি এবং দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। আশা করি, বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাকি যে পণ্যগুলো আছে, সেগুলোর দাম যৌক্তিক পর্যায়ে চলে আসবে।

তিনি বলেন, পাম অয়েল আমাদের বোতল আকারে আসে না। একটা বিষয় জানিয়ে রাখা দরকার এই প্রথম আন্তর্জাতিক বাজারে পাম আয়েলের দাম সয়াবিন থেকে বেশি। এটা যদি আমরা এখন পুনর্নির্ধারণ করতে যাই সেটা ভোক্তাদের জন্য বুমেরাং হয়ে যাবে।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ০১ মার্চ থেকে দামটা কার্যকর হবে। আমাদের এই ট্যারিফটা ১৫ তারিখ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এরপর আমরা বসে প্রতি মাসে যেমন তেলের দাম আমাদের ট্যারিফ ঠিক করে, প্রতি মাসে আমাদের যারা মিল মালিক আছে তাদের সঙ্গে বসে দাম রেগুলার বেসিসে পুনর্নির্ধারণ করে দেবো। কারণ আমাদের ব্যবসায়ীরা যদি ব্যবসা না করতে পারে তাহলে পণ্যের সরবরাহে সংকট দেখা দেবে।

বর্তমানে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম রয়েছে ১৭৩ টাকা। আগামী ০১ মার্চ থেকে তা ১০ টাকা কমিয়ে ১৬৩ টাকা করা হয়েছে। আর খোলা সয়াবিন তেল দাম কমার পর বিক্রি হবে ১৪৯ টাকায়। তবে আপাতত পাম তেলের দাম কমানো হচ্ছে না বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।