আমদানির খবরে কমছে কাঁচা মরিচের দাম

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: দেশে কাঁচা মরিচের দাম যেন আকাশ ছোঁয়া। দামের দিক থেকে এবার রেকর্ড তৈরি করেছে কাঁচা মরিচ। শুধু রাজধানী ঢাকা শহরেই নয়, উপজেলা শহরগুলোতেও কাঁচা মরিচের দাম বেশি। কোনো কোনো উপজেলায় এক হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। ঢাকাতে প্রতি কেজি বাজার ভেদে ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে কাঁচা মরিচ।

তবে ভারত থেকে আমদানিকৃত কাঁচা মরিচ বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে। এছাড়া দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতা না থাকায় দাম কমতে শুরু করেছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কেজিতে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। আমদানিকৃত কাঁচা মরিচ দেশের বাজারে এলে দাম আরও কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় ছয় ট্রাক কাঁচা মরিচ দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। রোববার সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচ বোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

ভোমরা বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চার ট্রাক ভারতীয় কাঁচা মরিচ বন্দরে এসেছে। এখনো দুই ট্রাক কাঁচা মরিচ বন্দরের ওয়েট স্কেলে অবস্থান করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেগুলো বন্দরে প্রবেশ করবে। এছাড়াও ওপারে বেশ কিছু কাঁচা মরিচ বোঝাই ট্রাক অবস্থান করছে। সন্ধ্যার আগে সেগুলো বন্দরে পৌঁছাবে।

ভেমরা কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইফেতেখার হোসেন বলেন, চার ট্রাকে ৪৮ টন ভারতীয় কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্দরের কার্যক্রম চলবে এখনো বেশ কিছু কাঁচা মরিচের ট্রাক আসতে পারে।

এদিকে, মাত্র একদিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলিতে কাঁচা মরিচের দাম কমেছে কেজিতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। একদিন আগেও ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সবগুলো বন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হলে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমবে বলে জানান আমদানিকারক ও বিক্রেতারা। দাম কমায় খুশি জানিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার দাবি জানিয়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ।

হিলি বাজারে কাঁচা মরিচ কিনতে আসা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এতে করে আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মধ্যে বিশেষ করে আদা ও কাঁচা মরিচের যে ঝাঁজ তাতে করে আমাদের মতো মানুষদের মরণ অবস্থা দাঁড়িয়েছে। যে হিসেব করে বাজার করতে টাকা নিয়ে আসছি তার কোনোটিই মিলছে না। কাঁচা মরিচের দামের যে ঊর্ধ্বমুখী তাতে করে গত কয়েকদিন ধরে ভয়েই এর দোকানে যাইনি। আজকে শুধু দাম শুনলাম তাতে করেও হাতে আগুন লাগার মত অবস্থা। ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। দামটা যদি কমে তবেই আমরা কিনে খেতে পারব নচেৎ নয়।

কাঁচা মরিচ বিক্রেতা বিপ্লব শেখ বলেন, অতিরিক্ত গরম ও প্রচন্ড খরাসহ বৈরি আবহাওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাঁচা মরিচের ফুল ঝরে গিয়ে ও গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দেশিয় কাঁচা মরিচের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। যেসব ক্ষেত ভালো রয়েছে সেগুলো থেকেও পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁচা মরিচ পাওয়া যাচ্ছে না। যে জমি থেকে পূর্বে কৃষকরা পাঁচ মণ কাঁচা মরিচ পেতেন সেখান থেকে বর্তমানে তারা এক মণ মরিচ পাচ্ছেন। যার কারণে সরবরাহ কমায় পণ্যটির দাম ঊর্ধ্বমুখী।

তিনি বলেন, এর ওপর ভারত থেকে মাত্র একদিন কাঁচা মরিচ আমদানি হওয়ার পরই ঈদের ছুটির কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে মোকামে হু হু করে বাড়তে শুরু করে কাঁচা মরিচের দাম। বিশেষ করে ঈদের পর এর দামটা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। আমরা যখন যেভাবে মোকাম থেকে কাঁচা মরিচ ক্রয় করছিলাম ঠিক সেই মোতাবেক বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি করছি। ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা ক্ষেত থেকে সাধ্যমত কাঁচা মরিচ তুলছেন এছাড়াও মোকামের পাশাপাশি স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত কাঁচা মরিচ বাজারে আসছে যার কারণে সরবরাহ কিছুট বাড়ায় দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। এ কারণে শনিবারের চেয়ে আজ মোকামে কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কম। দেশিয় কাঁচা মরিচের পাশাপাশি স্থলবন্দর দিয়ে আজ থেকে আমদানি শুরু হলে দাম কমে আসবে।

কাঁচা মরিচ আমদানিকারক আনোয়ার হোসেন বলেন, সরবরাহ কমে গিয়ে দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের দাম অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। দাম নিয়ন্ত্রণে ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গত ২৫ জুন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। এ পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দরের সাত জন আমদানিকারক তিন হাজার টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি পান। আইপি হাতে পেয়ে কাঁচা মরিচের এলসি খুলে আমদানিকারকরা ভারতীয় রপ্তানিকারককে কপি দেয়ায় দীর্ঘ ১০ মাস বন্ধের পর ২৬ জুন থেকে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হয়।

তিনি বলেন, কিন্তু একদিন পরেই ঈদের ছুটির ফাঁদে বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে কাঁচা মরিচ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। ছুটি শেষে আজ রোববার থেকে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি শুরু হওয়ায় ওইসব বন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচও আমদানি শুরু হবে। এতে করে বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতে পারে। তবে সোমবার থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি শুরু হবে। দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের বাড়তি চাহিদাকে মাথায় রেখে আমদানির অনুমতি পাওয়া সকল আমদানিকারকরা কাঁচা মরিচ আমদানি করবেন। তারা সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন আজকেই আমদানিকারকরা রপ্তানিকারকদের কাঁচা মরিচের ট্রাক লোডিং করতে বলবেন যেন সোমবার বন্দরে প্রবেশ করতে পারে।

ঈদের আগে বন্দর দিয়ে পাঁচ ট্রাকে ২৭ টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়। এতে করে বন্দরে ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে মরিচ বিক্রি করা হয়েছিল। কিন্তু রপ্তানি শুরু হওয়ায় ভারতের বাজারেই কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। আগে যে কাঁচা মরিচ ১০০ থেকে ১১০ রুপিতে ক্রয় করে আমদানি করা যেত বর্তমানে তা বেড়ে ১৪০ রুপি পড়ছে। তাতে করে পরিবহন খরচ ও আমদানি শুল্ক মিলিয়ে ২৪০ টাকা পড়তা পড়বে যার কারণে ২৫০ টাকার নিচে বিক্রি সম্ভব নয় বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

-এসআর