‘গ্যাসের দাম অসহনীয় হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো’

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: মো. জসিম উদ্দিন। দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি। চেয়ারম্যান, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ও এর প্রভাব নিয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ ক্ষেত্রে সরকারের ভর্তুকি বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।


বিশ্ববাজারে দাম বাড়ছে। এটি আমরাও বুঝি। এ কারণে আমরাও দাম বাড়ানোর পক্ষে। কিন্তু গ্যাসের দাম অসহনীয় হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। এই সময়েই জ্বালানিতে ভর্তুকি বাড়ানো দরকার। এই সেক্টরে রাজস্ব আদায়েও সমন্বয় জরুরি।


ফের গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো। জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে আগেই। বর্ধিত এই মূল্য অর্থনীতির ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন?

জসিম উদ্দিন: বিশ্ব পরিস্থিতির কথা আমরা সবাই জানি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সব কিছু ওলট-পালট করে দিচ্ছে। বিশ্বের কোনো কিছুই আর স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। এই যুদ্ধের কারণে জ্বালানির দাম বেড়ে যায়। সরকার বাইরে থেকে এলএনজি আমদানি করে গ্যাসের চাহিদা মিটিয়ে আসছে কিছুটা। স্পট মার্কেটে এলএনজির দামও বেড়ে যাওয়ায় আমদানি বন্ধ হয়।

এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে আমরা জ্বালানি উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করি। ব্যবসায়ীরা গ্যাসের মূল্য ১৬ টাকার জায়গায় ২৫ টাকা করার প্রস্তাব দেই। সরকার করলো ৩০ টাকা এবং সেটা সবার জন্যই নির্ধারণ করা হলো। অথচ ইন্ডাস্ট্রির ধরন ও আকার অনুযায়ী গ্যাসের মূল্যের পার্থক্য ছিল। এখন সবার ওপর একই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

সরকারের নির্ধারিত মূল্য বহাল থাকলে বিদ্যুতের দামও বাড়াতে হবে। কারণ বিদ্যুতের কাঁচামালও গ্যাস। তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এ কারণেই আমরা অনুরোধ করছি গড়ে ৫৭ শতাংশ বর্ধিত মূল্যের বেশি যেন না করা হয়। একই সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্ববাজারে দাম বাড়ছে। এটি আমরাও বুঝি। এ কারণে আমরাও দাম বাড়ানোর পক্ষে। কিন্তু গ্যাসের দাম অসহনীয় হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। এই সময়েই জ্বালানিতে ভর্তুকি বাড়ানো দরকার। এই সেক্টরে রাজস্ব আদায়েও সমন্বয় জরুরি।

ছোট বা মাঝারি কারখানার জন্য আলাদা মূল্য ছিল বলছিলেন। এখন সবাইকে একই হারে পরিশোধ করতে হবে গ্যাসের মূল্য। এর প্রভাব কী পড়তে পারে বলে মনে করেন?

জসিম উদ্দিন: গ্যাসের মূল্য বাড়লে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে এখন হয়তো কল্পনা করতে পারছি না। সময় সব বলে দেবে। অনেকেই পথে বসে যাবে। আমি প্রয়োগিক অর্থে বলছি। গ্যাস নিয়েই আমাদের ব্যবসা। পৃথিবীতে দাম বাড়লে দেশেও বাড়বে। কিন্তু আমাদের তো সেই সক্ষমতা নেই। এ কারণেই আমরা সরকারের সাপোর্ট প্রত্যাশা করছি। নইলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।

সরকার মূল্যস্ফীতি কমানোর কথা বলছে। আবার জ্বালানির দামও বাড়াচ্ছে। আদৌ সম্ভব?

জসিম উদ্দিন: জ্বালানির দাম বাড়লে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, এটি সহজ হিসাব। উৎপাদন ব্যয় বাড়লে পণ্যের মূল্য বাড়বে। বাজার আরও অস্থির হবে। মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। সরকারই ভালো জানে, কী করে সম্ভব।

তবে সরকার চাইলে অনেক কিছুতে সমন্বয় করে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে। আমি সেক্টর ধরে ধরে ভর্তুকির কথা বলছি। এটি নিয়ে সরকারের আরও কাজ করা দরকার। উৎপাদন বাড়ানোর ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে। আর ব্যয় কমানোর পথও সরকারকেই দেখাতে হবে। আমরা সরকারের দেখানো পথে হাঁটতে পারি।

পোশাক শিল্পের জন্য কী বলবেন?

জসিম উদ্দিন: পোশাক শিল্পের জন্য প্রতিযোগিতা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। জ্বালানির দাম বাড়ছে অন্য দেশেও। ভারত, ভিয়েতনাম, চীনের উৎপাদন ব্যয় বাড়লো কত এবং আমাদের কত বাড়াতে হবে, তা দেখার আছে। শ্রমমূল্য সস্তা বলেই কিন্তু আমরা সব প্রতিযোগিতায় পার পেয়ে যেতে পারি না। আরও বিষয় থাকে। দায় নিয়ে কথা বলতে হয়।


গ্যাসের মূল্য বাড়লে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে এখন হয়তো কল্পনা করতে পারছি না। সময় সব বলে দেবে। অনেকেই পথে বসে যাবে। আমি প্রয়োগিক অর্থে বলছি। গ্যাস নিয়েই আমাদের ব্যবসা। পৃথিবীতে দাম বাড়লে দেশেও বাড়বে। কিন্তু আমাদের তো সেই সক্ষমতা নেই।


চীন বা ভিয়েতনামের সঙ্গে তুলনা করলে আমরা অনেক প্রশ্নেই পিছিয়ে আছি। আমাদের এসব জায়গায়ও কাজ করতে হচ্ছে। দাম এবং মান সবই তো ব্যয়ের ওপর নির্ভর করে।

দিশেহারা আবাসন শিল্প। ফ্ল্যাট বিক্রি নেই বলে জানান এই সেক্টরের ব্যবসায়ীরা। রড-সিমেন্টসহ এই শিল্পের সব পণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। আরও বেসামাল হতে পারে কি না?

জসিম উদ্দিন: এই সেক্টরের প্রায় সব কাঁচামালই আমদানি করতে হয়। আমাদের সম্পদ তো সীমিত। যে কারণে জ্বালানির দাম বাড়লে এই সেক্টর সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবাসন শিল্পের অবস্থা খারাপ আরও আগে থেকে। পণ্যের দাম বেশি বলে ফ্ল্যাটের দাম বেশি। মানুষের আয়ও কমে গেছে। এ অবস্থায় কে বেশি দামে ফ্ল্যাট কিনবে?


সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। তাদের বাঁচিয়ে রাখাটাই সরকারের প্রথম টার্গেট হওয়া উচিত। মানুষের হাতে নগদ টাকা কমে যাচ্ছে। আবার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে। সরকার এখানে নজর না দিলে এই মানুষ কীভাবে বাঁচবে?


সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। তাদের বাঁচিয়ে রাখাটাই সরকারের প্রথম টার্গেট হওয়া উচিত। মানুষের হাতে নগদ টাকা কমে যাচ্ছে। আবার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে। সরকার এখানে নজর না দিলে এই মানুষ কীভাবে বাঁচবে? স্বাভাবিক সময় পার করছি বলেই আমাদের বিশেষভাবে ভাবতে হবে। বিশেষ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সৌজন্যে, জাগো নিউজ।