ব্যবসায়ীরা যে সুরে বাঁশি বাজাচ্ছেন, সে সুরেই দাম ঠিক হচ্ছে

গোলাম রহমান: প্রথমেই যদি বলি বাজার নিয়ে আমাদের অর্থনৈতিক দর্শনটা কী? দর্শনটা হচ্ছে মুক্তবাজার অর্থনীতি। এ অর্থনীতিতে দাম বেঁধে দিয়ে কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। উচিত হচ্ছে, সরবরাহব্যবস্থা ভালো রাখা এবং প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা। কিন্তু উভয়েরই ঘাটতি আছে। ভালো হোক, মন্দ হোক- কোনো প্রতিযোগিতা নেই এখানে। এ কারণে হাতে গোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে এখানে যে সুরে বাঁশি বাজাচ্ছেন, সে সুরেই দাম ঠিক হচ্ছে।

পেঁয়াজের কথা বলতে গেলে একটা কাজ করলেই দাম কমে যাবে। সেটা হচ্ছে আমদানির অনুমতি, যাকে সংক্ষেপে আইপি বলা হয়। এ মুহূর্তে আর কোনো অস্ত্র নেই। দোকানে দোকানে পুলিশ বসালেই তো দাম কমে যাবে না। পুলিশ বসালে আবার নতুন সমস্যা তৈরি হবে। কৃষকের উপকারের জন্য আমরা পেঁয়াজ আমদানি না করার সুপারিশ করে আসছিলাম। কিন্তু ভোক্তারা এখন জিম্মি। জিম্মিটা করেছে কয়েকজনের সিন্ডিকেট। এত লোভ, এত লালসা তাঁদের! অবাক হই।

বাজারের ২৫ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে না আসা পর্যন্ত একশ্রেণির ব্যবসায়ীর দুষ্কর্ম থেকে মুক্তি মিলবে না। এ সময় আরেকটা কাজ করা যেতে পারে। ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ে বিদেশিদের প্রবেশাধিকার দেওয়া। তাহলে বাজারে যদি কিছু ভারসাম্য তৈরি হয়।

মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ ভোক্তারা বিপদে আছেন। মূল্যস্ফীতি অবশ্য ব্যবসায়ীরাই বাড়াচ্ছেন, এক বাক্যে তা বলা যাবে না। সরকারের নীতি-পদক্ষেপও অনেক ক্ষেত্রে এ জন্য দায়ী। দেখলাম বাজার থেকে প্রচুর টাকা ধার নিচ্ছে সরকার। তার মানে প্রচুর টাকা ছাপানো হচ্ছে। এসব টাকার এক টাকা বাজারে এলে তার প্রভাব পড়ে কমপক্ষে পাঁচ গুণ। মূল্যস্ফীতি এ কারণেও হয়।

সয়াবিন ও চিনির ক্ষেত্রে দাম বাড়ার অন্যতম কারণ বলা হয় মুদ্রা বিনিময়ের হারকে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে এক বছরে টাকার মান পড়ে গেছে ২০ শতাংশ। উদাহরণ হিসেবে যদি বলি, দুই বছর আগে প্রতি টন সয়াবিন ৮৫০ ডলার ছিল। এখন এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ১৫০ ডলার। তখন যে দামে সয়াবিন বিক্রি হতো, এখন একই হারে আরেকটু বেশি দামে তা বিক্রি হওয়া সংগত। কিন্তু এখন বিক্রি হচ্ছে অনেক বেশি দামে। তার মানে কী? মানে হচ্ছে, তারা অতিরিক্ত মুনাফা করছেন এবং অতিরিক্ত লোভী হয়ে পড়েছেন।

সভাপতি, কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

সৌজন্যে, প্রথম আলো।