কারসাজি করে দাম বাড়ালে দোকান বন্ধ

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: বিশ্ববাজার প্রেক্ষাপটে দেশে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অতিরিক্ত পণ্য মজুদ করার মাধ্যমে কারসাজি করে কেউ দাম বাড়ালে তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা না করে সরাসরি দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে। একইসঙ্গে লাইসেন্স বাতিলেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটে এক মতবিনিময় সভায় এ হুঁশিয়ারি দেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নেতারা। ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর মজুদ, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ে মতবিনিময়’ এই সভার আয়োজন করে এফবিসিসিআই।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর থেকে বিশ্ববাজারে খাদ্য ও ব্যবহার্য পণ্যের দামে অস্থিরতা তৈরি হয়। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। ফলে ভোজ্যতেল, আটা, ময়দা, মাংস, ডিম, দুধ, কসমেটিক্স পণ্য, চিনি, মশলা থেকে শুরু করে বেশির ভাগ পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে বেশি লাভের আশায় কেউ কেউ অতিরিক্ত মজুদ করে সংকট সৃষ্টি করছে। সংকটের কারণ ও দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিভিন্ন বাজারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করছে এফবিসিসিআই।

সম্প্রতি বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের মজুদ নিয়ে গ্যাজেট প্রকাশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গ্যাজেট অনুযায়ী, পাইকারি পর্যায়ে চাল ৩০০ টন, গম ২০০, চিনি ৫০, ডাল ৪০ ও ভোজ্যতেল ৩০ টন মজুদ রাখা যাবে। দোকানে এসব পণ্য রাখা যাবে সর্বোচ্চ ৩০ দিন। এছাড়া খুচরা পর্যায়ে চাল ১৫ টন ও গম ১০ টন সর্বোচ্চ ১৫ দিনের জন্য মজুদ রাখা যাবে। চিনি, ডাল ও ভোজ্যতেল ৫ টন করে সর্বোচ্চ ২০ দিন রাখা যাবে।

এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার মোহাম্মদপুরে আয়োজিত সভায় সংগঠনটির পরিচালক আবু মোতালেব বলেন, পণ্যের মজুত নিয়ে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করলে তাদের শুধু জরিমানা করা হবে না, ভবিষ্যতে তাদের লাইসেন্স বাতিল ও দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে তারা আর ব্যবসা করতে না পারেন।

সম্প্রতি সয়াবিন তেল মজুদ করে বাজারে এক ধরনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছিল কিছু ব্যবসায়ী। সংকটের কারণ খুঁজতে গিয়ে সারাদেশেই বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে অনেক ব্যবসায়ীকে শাস্তির আওতায় এনেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সংগঠনটির বাজার মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরে বাজারে মশলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। কিন্তু সরবরাহে কোনো সংকট নেই। বিশ্ববাজারকে ইস্যু করে কেউ পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ও সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে এফবিসিসিআই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করবে।

ভোজ্যতেলের বিষয়ে তিনি বলেন, সয়াবিন তেলের বাজারে অস্থিরতা রোধে ১৫ দিন পর পর দাম সমন্বয় করার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিল এফবিসিসিআই। কিন্তু সর্বশেষ দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর ২২ দিন পেরিয়ে গেলেও দাম আর সমন্বয় করা হয়নি। তেল নিয়ে আবার কোনো অস্থিরতা হলে তার দায় ব্যবসায়ীদের থাকবে না।

সম্প্রতি চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, সরকার এখন মিলারদের কাছ থেকে চাল নিচ্ছে, এটা সাধুবাদ পাওয়ার মতো। কিন্তু কেউ এটাকে ইস্যু করে চালের দাম বাড়ালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব জেলা চেম্বারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বাজার তদারকি করতে। তদারকিতে অবহেলা করা হলে চেম্বারগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে এফবিসিসিআই।

তবে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, বর্তমান বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে যেভাবে দাম বাড়ছে, তা বাস্তবতার বাইরে নয়।

বিভিন্ন সময়ে ডিলারদের বিরুদ্ধে পণ্য কারসাজির যে অভিযোগ উঠছে, সেই বিষয়ে তদারকির জন্য বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের কাছে চিনি, লবণ, আটা, ময়দা ইত্যাদি পণ্যের ডিলারদের তালিকা এফবিসিসিআইতে পাঠানোর জন্য মিল মালিকদের আহ্বান করছেন এফবিসিসিআইয়ের নেতারা।

এ সময় মোহাম্মদপুর টাউন হল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. লুৎফর রহমান (বাবুল) জানান, যেসব দোকানি পণ্য মজুদ ও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করার চেষ্টা করেছেন, সমিতি তাদের দোকান বন্ধ করে দিয়েছে।