প্রস্তাবিত সংষ্কার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ক্যাবের ১৩ দফা দাবি

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার নির্ধারণের একক এখতিয়ার বিইআরসিকে ফিরিয়ে দেওয়াসহ ১৩ দফা দাবি জানিয়েছে কনজুমারস এসোসিয়েশনের অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে ক্যাব’র জ্যৈষ্ঠ সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম এসব দাবি জানান।

‘জ্বালানি সংকট ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে ক্যাব।

ভোক্তা যেন সঠিক দাম, মাপ ও মানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সেবা পায়, সেজন্য মূল্যহার নির্ধারণসহ বিদ্যুৎ, জ্বালানি, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের সকল পর্যায়ে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা, সমতা, যৌক্তিকতা ও জবাবদিহি তথা জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপস্থাপিত সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের এই ১৩ দফা দবি উপস্থাপন করে সংগঠনটি।

 লিখিত বক্তব্যে শামসুল আলম ক্যাবের পক্ষে যেসব দাবি উপস্থাপন করেন সেগুলো হলো-

১. বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত উন্নয়নে প্রতিযোগিতাবিহীন যে কোন ধরণের বিনিয়োগ আইন দ্বারা নিষিদ্ধ হতে হবে।
২. সরকার ব্যক্তিখাতের সাথে যৌথ মালিকানায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত হবে না এবং সরকারি মালিকানাধীন কোন কোম্পানীর শেয়ার ব্যাক্তি খাতে হস্তান্তর করবে না, আইন দ্বারা তা নিশ্চিত হতে হবে।

৩. বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি খাতভূক্ত সরকারি ও যৌথ মালিকানাধীন সকল কোম্পানীর পরিচালনা বোর্ড থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উভয় বিভাগের সকল আমালাদের প্রত্যাহার করতে হবে।

৪. নিজস্ব কারিগরি জনবল দ্বারা স্বাধীনভাবে উভয় খাতের কোম্পানী/ সংস্থাসমূহের কার্যক্রম পরিচালিত হতে হবে। সে-জন্য আপস্ট্রিম রেগুলেটর হিসাবে মন্ত্রণালয়কে শুধুমাত্র বিধি ও নীতি প্রণয়ন এবং আইন, বিধি-প্রবিধান অনুসরন ও রেগুলেটরি আদেশসমূহ বাস্তবায়নে প্রশাসনিক নজরদারি ও লাইসেন্সিদের জবাবদিহি
নিশ্চিত করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। এবং ডাউনস্ট্রীম রেগুলেটর বিইআরসিকে সক্রিয়, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হতে হবে।

৫. মুনাফা ব্যতিত কস্ট বেসিসে ৫০ শতাংশের অধিক বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন সরকারী মালিকানায় হতে হবে। কস্ট প্লাস নয়, সরকার শুধু কস্ট বেসিসে বিদ্যুৎ, ও জ্বালানি সেবা দেবে।

৬. গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল, জ্বালানী নিরাপত্তা তহবিলের অর্থ যথাক্রমে গ্যাস অনুসন্ধান, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জ্বালানি আমদানীতে ব্যয় ভোক্তার ইকুইটি বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হতে হবে।

৭. প্রাথমিক জ্বালানি মিশ্রে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদি পরিকল্পনায় কয়লা ও তেলের অনুপাত কমাতে হবে। নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান ও মজুদ বৃদ্ধি এবং নবায়যোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্বারা জ্বালানি আমদানী নিয়ন্ত্রিত হতে হবে।

৮. জলবায়ূ তহবিলসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উৎস থেকে উক্ত ক্ষয়ক্ষতি বাবদ ঋণ নয়, ক্ষতিপূরণ প্রাপিÍ/আদায় নিশ্চিত হতে হবে। এবং সে ক্ষতিপূরণ ক্ষতিগ্রস্থদের সক্ষমতা উন্নয়নে বিনিয়োগ আইন দ্বারা নিশ্চিত হতে হবে।

৯. বিদ্যুৎ, জীবাশ্ম ও নবায়নযোগ্য জ্বালানী উন্নয়ন নীতি, আইন, বিধি-বিধান ও পরিকল্পনা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সম্পাদিত প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

১০. জ্বালানি নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানির মূল্যহার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রনের লক্ষ্যে ÔEnergy Price Stabilized Fund গঠিত হতে হবে।

১১. ভোক্তার জ্বালানী অধিকার সংরক্ষণ ও জ্বালানি সুবিচারের পরিপন্থী হওয়ায় (ক) দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ রদ হতে হবে, এবং (খ) বাংলাদেশ রেগুলেটরী কমিশন (বিইআরসি) আইন ২০০৩ সংশোধনক্রমে সংযোজিত ধারা ৩৪ক রহিত হতে হবে। এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার
নির্ধারণের একক এখতিয়ার বিইআরসি’কে ফিরিয়ে দিতে হবে।

১২. ইতোমধ্যে (ক) বাপেক্স ও সান্তোষের মধ্যে মগনামা-২ অনুসন্ধান কূপ খননে সম্পাদিত সম্পূরক চুক্তি, (খ) বিআরইবি ও সামিট পাওয়ার লিঃ-এর মধ্যে সম্পাদিত বিদ্যুৎ ক্রয় সম্পূরক চুক্তি, এবং বিপিডিবি ও সামিট পাওয়ার লিঃ-এর মধ্যে সম্পাদিত মেঘনাঘাট পাওয়ার প্লান্টের বিদ্যুৎ ক্রয় সম্পূরক চুক্তি বেআইনী ও জনস্বার্থ বিরোধী, এবং জ্বালানি সুবিচারের পরিপন্থী প্রতীয়মান হওয়ায় এ- সব চুক্তি বাতিল হতে হবে। অনুরূপ অভিযোগে অভিযুক্ত অনান্য চুক্তিসমূহও যাচাই-বাছাইক্রমে বাতিল হতে হবে।

১৩. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উন্নয়নে সম্পাদিত সকল চুক্তি বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার সাথে সম্পাদনের লক্ষ্যে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ায় অনুমোদিত মডেল চুক্তি মতে হতে হবে। সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ মতে প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ তথা ভোক্তা সাধারণ। এবং জনগণের অভিপ্রায়ের চরম অভিব্যক্তিরূপে দেশের সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন।

প্রারম্ভিক উপস্থাপনা

১, আইএমএফ-এর ঋণের শর্ত, ভর্তুকি প্রত্যাহার হবে। ক্যাব-এর বক্তব্য, বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানী সরবরাহে সম্পৃক্ত অন্যায় ও অযৌক্তিক তথা লুণ্ঠনমূলক ব্যয় ও মুনাফা রোধ করা হলে ভর্তুকি লাগে না এবং মূল্যবৃদ্ধির চাপও থাকেনা। অথচ ভর্তুকি প্রত্যাহারে মূল্যহার বেশী বেশী, ঘন ঘন বৃদ্ধি অব্যাহত রইল। এবং মূল্যহার নির্ধারণের কাজটি বিইআরসি আইন সংশোধন করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উভয়বিভাগের আমলাদের হাতে দেয়া হলো।

২. বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি খাতে চলমান সংস্কারের উদ্দেশ্য: (১) ব্যক্তিখাতে ছেড়ে দেয়ার জন্য এ-খাতকে বিভাজিত করা, (২) পর্যাপ্ত মুনাফায় দেশী-বিদেশী ব্যক্তিখাত বিনিয়োগ আকর্ষণের অজুহাতে এ-খাতকে বাণিজ্যিক খাতে পরিণত করা, (৩) এ-জন্য ভোক্তাস্বার্থ বিরোধী নীতিসমূহ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দ্বারা অযৌক্তিক ও লূণ্ঠনমূলক ব্যয়বৃদ্ধি করা, (৪) ভর্তুকি প্রত্যাহার করা ও আর্থিক ঘাটতি সমন্বয়ে
মূল্যহার বৃদ্ধি করা, এবং (৫) প্রতিযোগিতাহীন বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টিকরে বিনিয়োগকারীর জন্য এ-খাতকে লাভজনক করা।

৩. কম-বেশী ১৮ শতাংশ মুনাফায় বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা পর্যাপ্ত বৃদ্ধি করা হয়। কম-বেশী ৭ শতাংশ হারে বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধি হলেও উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ১২ শতাংশ। আমদানি ব্যয়বৃদ্ধিজনিত আর্থিক ঘাটতি মোকাবেলায় তেল, গ্যাস, ও বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনও কমানো হচ্ছে। ফলে ভোক্তারা অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির অভিঘাত এবং চরম বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের

শিকার।

৪. আইপিপি পলিসির আওতায় ব্যক্তিখাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। গ্যাস বন্টনে সরকারি খাত বৈষম্যের শিকার। আমদানীকৃত গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ আমদানি দ্বারা সরকার দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ মূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয় নিশ্চিত করেছে। ন্যূনতম ব্যয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পরিবর্তে উচচতর ব্যয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং আমদানি হচ্ছে। কয়লা ও গ্যাস আমদানি চাহিদার তুলনায় কম হওয়ায় বিদ্যুৎ আমদানির ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। উৎপাদনক্ষমতা ব্যবহার কমে আসছে। কিছু দিন আগেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হতো প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এখন দিতে হয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।

৫. ২০২২ সালে গণশুনানীতে জানা যায়, প্রতি ঘনমিটার দেশীয় কোম্পানীর গ্যাস কেনা হয় ১.০৩ টাকায়। অথচ স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি/গ্যাস আমদানি হয় প্রতিঘনমিটার ৮৩ টাকায়। গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অর্থে গ্যাস মজুদ ও উৎপাদন প্রবৃদ্ধি নেই বললেই চলে। তহবিলের ৬৫% অর্থই অব্যবহৃত।

৬.প্রাথমিক জ্বালানি ও বিদ্যুৎ অন্যায় এবং অযৌক্তিক ব্যয় ও মুনাফায় সরবরাহ হওয়ায় আর্থিক ঘাটতি বৃদ্ধি গণশুনানীতে বারবারই আপত্তির সম্মূখীন হয়। প্রতিটি গণশুনানীতে প্রমাণিত হয়, ব্যয় ও মুনাফা ন্যায্য ও যৌক্তিক হলে বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি বাণিজ্য লুণ্ঠনমুক্ত হতো। এবং আর্থিক ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে থাকতো। ফলে সরকারকে ভতুর্কি এবং ভোক্তাকে মূল্যহার বৃদ্ধির চাপে থাকতে হতো না।

৭. ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর জাতীয় সক্ষমতা উন্নয়নের সুযোগ আসে এবং বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি খাত উন্নয়ন প্রাধান্য পায়। স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা পিডিবি ও পেট্রোবংলা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ-খাতে প্রফেশনালরা ক্ষমতায়নের সুযোগ পায়। প্রফেশনালদের সক্ষমতা উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নই মুলত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন। কিন্তু পরবর্তীতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত প্রশাসন আমলাকরণের শিকার হলো। প্রতিটি সংস্থা/ কোম্পানি প্রশাসন আমলার নিয়ন্ত্রণে এলো। ফলে এ-সব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা উন্নয়ন বাধা পড়ে। অনিয়ম-দুর্নীতি এবং লুণ্ঠনমূলক ব্যয়বৃদ্ধি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। জনগণের বিরোধীতার কারণে কয়লা ও গ্যাস রপ্তানী
রহিত হলেও জাতীয় সক্ষমতা উন্নয়ন উপেক্ষিত হওয়ায় নিজস্ব সক্ষমতায় তা উত্তোলন করার পরিবর্তে বিদ্যুৎ, কয়লা, গ্যাস আমদানির ওপর দেশ এখন অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। আমদানি ব্যয়বৃদ্ধি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও সংকট এবং ভর্তুকি প্রত্যাহার- এসব কারণে অব্যাহত অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধিতে ভোক্তারা জ্বালানি সুবিচার বঞ্চিত এবং জ্বালানি নিরাপত্তাহীন।

৮. দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০-এর আওতায় প্রতিযোগীতাবিহীন উচ্চ মূল্যে ব্যক্তিখাত বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায় এবং আর্থিক ঘাটতি দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। সে-ঘাটতি দ্রুত সমন্বয়ের জন্য বিইআরসি আইন ২০০৩ সংশোধনক্রমে বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানীর মূল্যহার যথাক্রমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগই নির্ধারণ করে। তাতে জবাবদিহির পথ রুদ্ধ হয়। উক্ত আইন এবং বিইআরসি আইনের সংশোধনী উভয়ই ভোক্তাদের জ্বালানি সুবিচার থেকে বঞ্চিত এবং জ্বালানি নিরাপত্তাহীন হওয়ার জন্য দায়ী ।

৯. নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি ২০০৮ মতে ২০২১ সালে বিদ্যুতের ১০ শতাংশ হতে হতো নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ। বাস্তবে এক শতাংশও হয়নি। সৌরবিদ্যুৎ এখন ১০ টাকা ব্যয়হারেই উৎপাদন সম্ভব। অথচ আমদানিকৃত কয়লায় বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ আমদানি ব্যয়হার গড়ে ১৭-১৮ টাকা। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় আরো বেশি। বিদ্যুৎ ওলিগোপলির শিকার না হলে বিদ্যুৎ ও ডলার সংকট সমাধানে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ হতো গুরুত্বপূর্ণ।

১০. ইউএসএআইডি-এর অনুশীলন মতে গ্রীডে সংযোগযোগ্য সম্ভাব্য সৌর- পিভি বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ৫০ হাজার মেগাওয়াট। জাতীয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি গবেষণাগারের উইন্ড ম্যাপিং-এর তথ্য মতে বায়ু-বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ৩০ হাজার মেগাওয়াট। পিডিবি’র ২০২২-২৩ অর্থবছরের ক্রয়চুক্তি মতে, সৌর-বিদ্যুতের মূল্যহার ৯.৯৯ ইউএস সেন্টস (১ ডলার = ১০৫ টাকা)। ২০২০ সালের ক্রয়চুক্তি মতে বায়ু-বিদ্যুতের মূল্যহার ছিল ১৩.২০ টাকা। ভারতে এখন উভয় বিদ্যুতের মূল্যহার কম-বেশি ৩ রুপি (১ ডলার = ৮৫ রুপি)। ভারতের পরিকল্পনায় ২০৩০ সালে সৌর-বিদ্যুতের মূল্যহার হবে ১.৯-২.৬ রুপি, এবং বায়ু-বিদ্যুতের মূল্যহার ২.৩-২.৬ রুপি। কারিগরি সক্ষমতা উন্নয়ন ও বিনিয়োগ ব্যয় ন্যায্য ও যৌক্তিক হলে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের মূল্যহার ভারতের মত হতো।১১. পরিকল্পনায় বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ এখনও ১০ শতাংশে আটকে আছে। ২০১৬ সালে বিদ্যুৎ খাত মহাপরিকল্পনা সংশোধনীতে ধরা হয় ২০২০, ২০৩০ এবং ২০৪১ সালের প্রতি ক্ষেত্রেই নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ১০ শতাংশ। সকল মহাপরিকল্পনায় নিজস্ব জ্বালানি সম্পদ মজুদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রম স্থবির রেখে জীবাশ্ম জ্বালানী আমদানী নির্ভরতা বাড়াতে বলা হয়েছে। কারণ, লক্ষ্য: বিদ্যুৎ ও জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি বাজার উন্নয়ন। এসডিজি’র লক্ষ্য অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য টেকসই ‘ক্লিন এনার্জি’ নিশ্চিত হতে হবে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য: (১) সবার জন্য বিদ্যুৎ এবং (২) ২০৩০ সালে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ মাত্র ১০ শতাংশ।

১২. প্রতিবছর জাতিসংঘ বিশ্ব জলাবায়ু সম্মেলন করে। ২০১৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত মতে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপি জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত হবে। সে লক্ষ্যে, দেশে দেশে জ্বালানি সংরক্ষন ও দক্ষতা উন্নয়ন এবং পরিবহণ, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য ও আবাসিকে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রীড বিদ্যুৎ উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানি নবায়নযোগ্য জ্বালানি দ্বারা দ্রুত প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। প্রথাগত জ্বালানিতন্ত্র (Energy System) দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে। দেশে দেশে জন্ম নিচ্ছে কার্বণমুক্ত নতুন জ্বালানিতন্ত্র। এ জ্বালানিতন্ত্রের ব্যবস্থাপনায় জ্বালানি খাতে সুশাসন এবং সমতাভিত্তিক জ্বালানি বাজার ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। তাতে বৈষম্যহীন সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সেই সুযোগে জ্বালানি নিরাপত্তা সংরক্ষণে জাতীয় সক্ষমতা অর্জনই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য। সে-লক্ষ্যে ক্যাব বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংস্কার প্রস্তাব করেছে।