এবার সুলতান’স ডাইনে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: রাজধানীর গুলশানে সুলতান’স ডাইন শাখার কাচ্চিতে মাংস নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছিলেন এক ভোক্তা। সেই অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এরপর শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

সেখানে বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান ও সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল এবং প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. হাসানুজ্জামান ও সহকারী পরিচালক ফারহানা ইসলাম অজান্তা।

অভিযানে দেখা যায়, সুলতান’স ডাইন এর ফ্রিজে মুরগির মাংস থাকলেও খাসির কোনো মাংস নেই। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে যে মাংস খাসির বলে দাবি করা হয়েছে সে রমক চিকন হাড়ের মাংস দেখাতে পারেনি সুলতান’স ডাইন। এছাড়া ভোক্তা অধিদপ্তরের কাছে সুলতান’স ডাইন এর দায়িত্বরত এজিএম এবং ম্যানেজার যে তথ্য দেন, তার মধ্যে গড়মিল পাওয়া যায়। দায়িত্বরত ব্যক্তিরা একেক সময় একেক তথ্য দিতে থাকেন। পরবর্তীতে ভোক্তা কর্মকর্তারা সেসব তথ্য যাচাই করতে গিয়ে মিল পাননি।

সুলতান’স ডাইন এর দায়িত্বরত ব্যক্তিরা দাবি করেন, তারা কাপ্তান বাজারে উপস্থিত থেকে মায়ের দোয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে খাসির মাংস সংগ্রহ করেন। আজও ১৫০ কেজি মাংস স্বশরীরে উপস্থিত থেকে সংগ্রহ করে এনেছেন।

এমন দাবি পরিপ্রেক্ষিতে মায়ের দোয়া খাসির মাংসের দোকানোর ক্যাশ ম্যামোতে থাকা নাম্বারে কল দেন ভোক্তা কর্মকর্তারা। নিজেদের পরিচয় দিয়ে সুলতান’স ডাইনের মাংস তার দোকান থেকে ক্রয় করা হয় কি না জানতে চাওয়া হয়। খাসির দোকানের মালিক সুলতান’স ডাইনে মাংস বিক্রি করেন বলে স্বীকার করেন। তবে নিয়মিত সুলতান’স ডাইনের কোনো কর্মকর্তা নিয়মিত তদারকি করেন না বলেও জানান। তিনি জানান, মাঝে মাঝে তদারকি করতে যান। আজকে ১২৫ কেজি খাসির মাংস সুলতান’স ডাইনে দিয়েছেন তিনি।

এমন তথ্য পাবার পর, সুলতান’স ডাইনের কর্মকর্তার কাছে ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানতে চান, ১২৫ কেজি মাংস দোকান থেকে ক্রয় করেছেন কিন্তু আপনি বললেন আজ মাংস এসেছে ১৫০ কেজি। তাহলে বাকি ২৫ কেজি মাংস কোথা থেকে এলো এবং কিসের মাংস?

এমন প্রশ্নে সুলতান’স ডাইনের কর্মকর্তারা নিজেদের ভুল স্বীকার করে বলেন, আমাদের ভুল হয়েছে। ১৫০ কেজি হবে না, আজ ১২৫ কেজি মাংস আনা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে সুলতান’স ডাইনকে তথ্য প্রমাণাদি নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেয় সরকারের এই সংস্থাটি। আগামী সোমবার (১৩ মার্চ) স্বশরীরে ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে এই ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গুলশানে সুলতান’স ডাইনে প্রায় দেড় ঘণ্টা অভিযান চালায় ভোক্তা অধিদপ্তর।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (৮ মার্চ) দুপুরের পর থেকে ফেসবুকে সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানির মাংস নিয়ে তুমুল হইচই পড়ে যায়। আর অভিযোগটি তুলেছেন কানক রহমান খান নামের এক ভোক্তা।

কাকন রহমান খান স্ট্যাটাসে লেখেন, গত বৃহস্পতিবার তিনি সুলতান’স ডাইন থেকে সাতটি কাচ্চি এনেছিলেন। খাবার সময় মাংসের হাড় দেখে সন্দেহ হয় তার। মাটন (খাসির মাংস) বলা হলেও তিনি অভিযোগ করে লেখেন, মাটনের হাড় এমন চিকন হয় না‌।

এরপর দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, এই ঘটনার পর সুলতান’স ডাইনের গুলশান ২ এর নম্বরে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করেন এটা কিসের মাংস ছিল? পরে তারা দু’জন লোকসহ আবার খাবার পাঠায়। তাদের এজিএম আশরাফও আসেন নতুন খাবারের সঙ্গে।

তিনি লেখেন, আগের প্যাকের খাবারের হাড়ের সঙ্গে এবাবের মাংসের তুলনা করতে বললে এজিএম আশরাফ মানতেই নারাজ হয়ে বলেন, জেনেশুনে এমন মাংস দেয় না।

তারা বলেন, তাদেরকে যে ভেন্ডর মাংস দেয়, তারা আসলে কোন কিছু করতে পারে।

এরপর এজিএমকে প্রশ্ন করা হয়- তাহলে ভেন্ডরের কাছ থেকে মাংস নেয়ার সময় কি আপনাদের মত এত বড় ব্রান্ডের কোনো কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার নেই?

আপনি কি দুইটা মাংস সেইম দেখতে পাচ্ছেন প্রশ্ন করলে তারা উল্টা প্রশ্ন করে তাহলে আপনারা কি দিয়ে মিটাতে চান? ইন্ডিরেক্টলী টাকা অফার করে এবং বলে আপনারা ঝামেলা করলে আমরাও জানি কি করতে হয়।

এরপর ৯৯৯ এ কল দেন ওই ভোক্তা। ৯৯৯ থেকে বলে বিএসটিআই এর নম্বরে অভিযোগ করতে বলা হয়।