শান্তি নিবাস : শিশুদের সঙ্গে হাসবেন প্রবীণরাও

প্রবীণদের জন্য দেশের আট জেলায় শান্তি নিবাস স্থাপন করবে সরকার। এসব নিবাস হবে সরকারি শিশু পরিবারের আঙিনায়। এতে বঞ্চিত শিশুরা পাবেন প্রবীণদের ভালোবাসা আর স্নেহ। অন্যদিকে শেষ বয়সে শিশুদের পেয়ে হাসি ফুটবে প্রবীণদের মুখেও।

জানা গেছে, এতিম শিশুদের ভরণ-পোষণ, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং উপযুক্ত মর্যাদায় সমাজে পুনর্বাসনের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণাধীন সমাজসেবা অধিদফতর সরকারি শিশু পরিবার নামে নিবাস পরিচালনা করছে। এসব নিবাসের ভেতরেই হবে শান্তি নিবাস।

প্রাথমিকভাবে দেশের আট জেলায় এ নিবাস স্থাপন করা হবে। একনেকে ইতোমধ্যে প্রকল্পটি পাস হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩ কোটি ৯৮ লাখ ৯১ হাজার টাকা। পরবর্তীতে দেশের সব জেলায় শান্তি নিবাস স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, আটটি শান্তি নিবাসের মধ্যে চারটি নারী এবং বাকি চারটি পুরুষদের জন্য স্থাপন করা হবে। নারীদের জন্য ময়মনসিংহ, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল এবং পুরুষদের জন্য গোপালগঞ্জ, লালমনিরহাট, সুনামগঞ্জ এবং নোয়াখালী জেলায় এ শান্তি নিবাস স্থাপন করা হবে। শিগগিরই প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হবে। ২০২৪ সালের মধ্যেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার।

আটটি শান্তি নিবাসের মধ্যে চারটি নারী এবং বাকি চারটি পুরুষদের জন্য স্থাপন করা হবে। নারীদের জন্য ময়মনসিংহ, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল এবং পুরুষদের জন্য গোপালগঞ্জ, লালমনিরহাট, সুনামগঞ্জ এবং নোয়াখালী জেলায় এ শান্তি নিবাস স্থাপন করা হবে। শিগগিরই প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হবে। ২০২৪ সালের মধ্যেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহফুজা আখতার বলেন, বর্তমান সরকার প্রবীণদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের জন্য ৮ জেলায় শান্তি নিবাস করা হচ্ছে। মূলত এ বিষয়টি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায়।

তিনি বলেন, অনেকে বৃদ্ধ বয়সে পরিবার থেকে সাপোর্ট পান না। আবার অনেকেই আছেন, অভাবের কারণে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারেন না। সেজন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রবীণরা শিশু নিবাসের আঙিনায় থাকবেন। এতে করে তারা পারিবারিক পরিবেশ পাবেন। প্রবীণদের জন্য সব রকমের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সেখানে থাকবে।

জানা গেছে, তিনতলা বিশিষ্ট শান্তি নিবাসের প্রতি ফ্লোরের আয়তন হবে ৪ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৪০০ বর্গফুট। প্রতিটি শান্তি নিবাস হবে ২৫ শয্যাবিশিষ্ট। ভবনে লিফট, রিসিপশন, ভিজিটর রুম, লিভিং স্পেস, টুইন বেড, হেলথ কেয়ার কর্নার থাকবে।

এছাড়া শান্তি নিবাসে প্রবীণদের জন্য চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা, শরীর চর্চার কর্নার, প্রার্থনার জন্য কক্ষ, প্রশিক্ষণ কর্নার, প্রোডাকশন ইউনিট, কফি কর্নারও থাকবে।

সচিব বলেন, ইতোমধ্যে সাতটি জেলার জমি পাওয়া গেছে। তবে ময়মনসিংহে এখনো পাওয়া যায়নি। খোঁজ চলছে, আশা করছি দ্রুত পেয়ে যাব। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কনসালটেন্সি ফার্ম নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা যায়, এক মাসের মধ্যে কনসালটেন্সি ফার্ম নিয়োগ হয়ে যাবে। এরপর সামগ্রিকভাবে প্রকল্পটির বিভিন্ন ক্রয় কার্যক্রম, ই-টেন্ডারিংসহ অন্যান্য ধাপ শুরু হবে।

তিনতলা বিশিষ্ট শান্তি নিবাসের প্রতি ফ্লোরের আয়তন হবে ৪ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৪০০ বর্গফুট। প্রতিটি শান্তি নিবাস হবে ২৫ শয্যাবিশিষ্ট। ভবনে লিফট, রিসিপশন, ভিজিটর রুম, লিভিং স্পেস, টুইন বেড, হেলথ কেয়ার কর্নার থাকবে।
জাতিসংঘের বৈশ্বিক জনসংখ্যা প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৬ লাখ। এর মধ্যে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষ আছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে, আগামী দুই থেকে আড়াই দশকের মধ্যে বাংলাদেশ প্রবীণপ্রধান দেশে পরিণত হওয়ার আভাস দিয়েছে ইউনিসেফ।

জনসংখ্যাবিদরা বয়সের কারণে অন্যের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর হারকে বিবেচনায় নিয়ে কোনো দেশ বা সমাজকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেন। মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ বা তার বেশি মানুষের বয়স ৬৫ বছরের বেশি হলে সেটি তাদের দৃষ্টিতে প্রবীণপ্রবণ সমাজ (এজিং সোসাইটি)। আর মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ বা তার বেশি বয়স্ক মানুষ হলে সেটি প্রবীণপ্রধান সমাজ (এজড সোসাইটি)।

চলতি বছরের মে মাসে প্রকাশিত এক নীতিপত্রে ইউনিসেফ জানায়, দেশে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশ প্রবীণপ্রবণ সমাজে পদার্পণ করবে ২০২৯ সালে। আর সেখান থেকে আস্তে আস্তে প্রবীণপ্রধান সমাজ পরিণত হবে ২০৪৭ সালে।

প্রবীণদের অবহেলা নয়, বিগত দিনের কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণ করে তাদের সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করতে হবে। আজকে যারা প্রবীণ, বিগত দিনে তারা ছিলেন নবীন। আজকের প্রবীণরা অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। দেশ ও জাতির কল্যাণে তাদের যে কর্মকাণ্ড ছিল, সেগুলো ছিল সম্মানের।

মাহফুজা আখতার বলেন, পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রাথমিকভাবে এ আটটি শান্তি নিবাস স্থাপন করা হবে। তবে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে দেশের সব জেলায় শান্তি নিবাস স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে প্রবীণদের জন্য সফলভাবে কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের জন্য দেশের আট জেলায় আটটি সরকারি শিশু পরিবারে শান্তি নিবাস স্থাপন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রবীণদের অবহেলা নয়, বিগত দিনের কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণ করে তাদের সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করতে হবে। আজকে যারা প্রবীণ, বিগত দিনে তারা ছিলেন নবীন। আজকের প্রবীণরা অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। দেশ ও জাতির কল্যাণে তাদের যে কর্মকাণ্ড ছিল, সেগুলো ছিল সম্মানের।