পরিবেশ ধ্বংসাত্মক জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের দাবি

এস এম নাজের হোসাইন: জাপান সরকার ও সরকারের প্রতিষ্ঠান জাইকা এবং সুমিতম মিতসুবিসি এলএনজি ও কয়লা-বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন বাংলাদেশ বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোট (বিডাব্লজিইডি), ক্যাব চট্টগ্রাম এবং আইএসডিই বাংলাদেশ।

আজ ৩১ মে, মঙ্গলবার নগরীর চান্দগাঁওয়ে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বাংলাদেশ বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোট (বিডাব্লজিইডি) এর সদস্য সচিব হাসান মেহেদী বলেন, সুমিতম মিতসুবিসি ফাইনেন্সিয়াল গ্রুপ (এসএমবিসি)-জাপান-এর বর্তমানে বাংলাদেশে দুটি বিনিয়োগ রয়েছে একটি সামিট গাজীপুর, ফেজ-২, ৩০০ মেঘাওয়াট এইচএফও ভিত্তিক বিদ্যুৎ কোম্পানি (৩ বিলিয়ন ইউএসডি) এবং দ্বিতীয়টি রিলায়েন্স মেঘনাঘাট, ৭৫০ মেঘাওয়াট: এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎ কোম্পানি (১২৬৫ মিলিয়ন ইউএসডি)। যা প্যারিস চুক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জলবায়ুু লক্ষ্যমাত্রা স্থাপনের জন্য সুমিতম মিতসুবিসি ফাইনেন্সিয়াল গ্রুপ (এসএমবিসি) এই বিনিয়োগ কাম্য নয়। যদিও বাংলাদেশে এসএমবিসি’র এ বিনিয়োগ বন্ধের এই দাবিটি বিডাব্লজিইডি এর সদস্য সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে করে আসলেও জাপান এখনো তাদের বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।

তথ্যমতে, ১৯৯২ সালের জলবায়ু-সনদ অনুসারে জাপান শুধু নিজের দেশে নয় বরং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশেরও গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে নীতিগতভাবে বাধ্য। কিন্তু জাপান সরকার ও সরকারের প্রতিষ্ঠান জাইকা এবং সুমিতম মিতসুবিসি এলএনজি ও কয়লা-বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করে আমাদেরকে যেমন বিপদে ফেলছে তেমনি মানবজাতির সমান ক্ষতি করছে। এতে লাভ হচ্ছে জাপানের, কিন্তু ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশের ও পৃথিবীর। ২০৫০ নেট-জিরো বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি যাতে ১.৫º সেলসিয়াসের নিচে থাকে তার জন্যে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রার জন্য যথেষ্ট নয়।

সমাবেশে বিভিন্ন বক্তারা বলেন, “এখন আমরা পরিবেশ নিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থার মধ্যে আছি। আমরা এসএমবিসি’র শেয়ারহোল্ডারদেরকে আহ্বান করছি দ্রুত সব গ্যাস, কয়লা, এবং তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিনিয়োগ বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিন। বিশ্ব আপনাদেরকে দেখছে। আমরা এখন কোন নতুন জীবাশ্ম জ্বালানির প্রকল্প নিতে পারি না এবং বর্তমানে সকল চলমানগুলোকে অবশ্যই বন্ধ করতে হবে যদি আমরা বৈশ্বিক উষ্ণতাকে সম্ভাব্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে দেখতে চাই।”

আইএসডিই বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ২০৫০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি থামাতে হলে পৃথিবীর গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা শূন্যতে নামিয়ে আনতে হবে। গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের সবথেকে বড় কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। এই সময়সীমার মধ্যে শূন্য নির্গমন নিশ্চিত করার জন্য আমাদের হাতে আর সময় নেই। তাই, আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (IEA)-এর সুপারিশ অনুসারে এখনই জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অবশ্যই জাপানকে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বন্ধ করার অঙ্গিকার ও তার বাস্তবসম্মত প্রতিফলন আনতে হবে।

বক্তারা অবিলম্বে কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করা, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জলবায়ু-বিপদাপন্নদের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশকে সহায়তা করা, ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশের শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য জাপানকে উদ্যোগ নেয়ার জোর আহ্বান জানান।

ক্যাব বিভাগীয় সংগঠক জহুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন ক্যাব বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, কলামিস্ট মোহাম্মদ মুসা খান, ক্যাব পাঁচলাইশের সাধারন সম্পাদক সেলিম জাহাঙ্গীর, ব্র্যাক চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ন সম্পাদক মুহাম্মদ জানে আলম, ক্যাব চান্দগাঁও ওয়ার্ডের সাধারন সম্পাদক কলিম উল্যাহ চৌধুরী, প্রজন্ম চট্টগ্রামের প্রধান নির্বাহী চৌধুুরী জসিমুল হক, ক্যাব যুব গ্রুপের এম এ হানিফ নোমান, সাকিলুর রহমান, শাহরিয়ার আলম, তৌসিফ, সিএসডিএফ’র শাম্পা কে নাহার ও আইএসডিই’র মো. জাহাঙ্গীর আলম, আরিফুল ইসলাম, উম্মে রুমানা আকতার, আফিফা তাবাস্সুম অন্তরা প্রমুখ।

(সিটিজি নিউজ)