বেবি কর্ন চাষ হচ্ছে চরাঞ্চলে

বেলে দোআঁশ মাটি বেবি কর্ন চাষের জন্য উপযুক্ত। চরাঞ্চলে পানির ঘাটতি থাকায় চাষাবাদে কষ্ট করতে হয় কৃষকদের। এ ক্ষেত্রে বেবি কর্ন চাষে ঝুঁকছেন শেরপুরের কুলুরচরের কৃষকরা।নিউজ বাংলা টুয়েন্টি ফোর থেকে জানা যায়, অন্য ফসলের তুলনায় বেবি কর্ন চাষে পানি কম প্রয়োজন। কম খরচে লাভ বেশি বলেই এই ফসল চাষে আগ্রহী কৃষকরা।

গবেষকরা বলছেন, বাজার তৈরি করা গেলে, কৃষকদের উৎসাহের সঙ্গে বাড়বে বেবি কর্ন উৎপাদন। বাড়তে থাকা চাহিদা পূরণে কমবে আমদানি নির্ভরতা। জেলার চরাঞ্চলে বেবি কর্ন চাষের সম্ভাব্যতা নিয়ে গবেষণা করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যায়ের পিএইচডির শিক্ষার্থী পার্থ সারথী কর। তিনি পেশায় শেরপুরের জমশেদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের চরাঞ্চলের জমির বেশির ভাগ মাটিই বেলে, ফলে পানি ধারণক্ষমতা কম। জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ ও উর্বরতাও কম। রাসায়নিক সার সংযোজনের মাধ্যমে শস্যের উৎপাদনশীলতা উন্নত করা সম্ভব। কিন্তু রাসায়নিক সার ব্যয়বহুল।

‘চরাঞ্চলের প্রধান ফসল হলো বোরো ও পতিত আমন ধান। তবে এ ধান আকস্মিক বন্যা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। পানির ঘাটতির কারণে বোরো ধানের উৎপাদনও লাভজনক নয়। তবুও কৃষকরা খাদ্য ও গোখাদ্যের জন্য বোরো ধান চাষ করতে বাধ্য হন।’

তিনি আরও জানান, অপর পক্ষে বেবি কর্ন একটি স্বল্পমেয়াদি ফসল, অর্থকরী ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। ধানের তুলনায় বেবি কর্নের পানির চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম। পোকার উপদ্রব ও রোগের সংক্রমণও কম থাকে ফলে উৎপাদন ব্যয় কম। ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে বেবি কর্ন সংগ্রহ করা যায় বলে জানান গবেষক পার্থ সারথী। বেবি কর্ন প্রয়োজনীয় ফাইবার ও প্রোটিন ছাড়াও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ। এটি সাধারণত সবজি ও সালাদে ব্যবহার হয় যা অত্যন্ত পুষ্টিকর।

বেবি কর্নের গাছ সবুজ থাকা অবস্থায় সংগ্রহ করায় এর কাণ্ড ও পাতা গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এগুলো সাইলেজের মাধ্যমে তিন থেকে পাঁচ মাস সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

এ ছাড়া বেবি কর্ন গাছ দ্রুত বর্ধনশীল, রসালো, দূষিত পদার্থমুক্ত এবং যে কোনো পর্যায়ে প্রাণীদের খাওয়ানো যায়। ফলে গরুর দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায় বলে জানান ওই গবেষক।

কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘বেবি কর্নের দুই লাইনের মাঝে ডালজাতীয় ফসল চাষ করার সুযোগ রয়েছে। এতে আমরা একই জমি থাইকা বেবি কর্ন, গরুর খাবার ও ডালজাতীয় ফসলের আবাদ করতে পারতাছি।

‘আমার জমিতে তিন বছর ধইরা বেবি কর্ন চাষ করতাছি। আমি বেবি কর্ন আবাদ করে অনেক লাভবান হইছি।’

কৃষক মজিবর মিয়া জানান, এক একর জমিতে বেবি কর্ন ফলাতে তার খরচ পড়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। আর বেবি কর্ন বিক্রি করে এক লাখ টাকারও বেশি আয় করা যায়।

অভিজাত চাইনিজ রেস্টুরেন্টগুলোয় বেবি কর্ন স্যুপ একটি উপাদেয় খাবার হিসেবে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোয় বেবি কর্ন খুব জনপ্রিয়। সেসব দেশে বেবি কর্ন রপ্তানি হয় চীন ও ভারত থেকে। বাংলাদেশ থেকেও বেবি কর্ন রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. আব্দুল কাদের বলেন, ‘ধান চাষ করলে যেখানে প্রতিদিন দুবার পানি দিতে হয়, সে ক্ষেত্রে বেবি কর্ন চাষে মৌসুমে মাত্র তিনবার পানি দিলেই হয়।

‘যদিও এ বেবি কর্নের এখনও পাইকারি ও খুচরা বাজার গড়ে ওঠেনি। তবে দেশের বিভিন্ন চাইনিজ ও ফাস্টফুড রেস্তোরাঁয় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বেবি কর্নকে সহজলভ্য করতে সরকার, বেসরকারি সংস্থা ও স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাঁর মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে এর বাজার তৈরি করা খুবই সহজ।’

শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মুহিত কুমার দে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় নতুন করে পরীক্ষামূলকভাবে বেবি কর্ন চাষ করা হয়েছে। আমরা এর বাজার সৃষ্টি করার জন্য সার্বিক সহায়তা করব।’

সূত্রঃনিউজ বাংলা টুয়েন্টি ফোর