৩ জেলায় বাড়তি ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে সরিষা

ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় উত্তরাঞ্চলের তিন জেলা ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও পঞ্চগড়ে বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কুয়াশা ও তীব্র শীত থাকলেও এ অঞ্চলে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। আর এতে করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি মাটির উর্বরতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে কৃষি জমিতে থাকা ক্ষতিকারক জীবাণুও। সেইসাথে সরিষা খেতে মৌচাষ করে মধু আহরণের মাধ্যমে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানও হচ্ছে।

আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রতিবছর ৩০ হাজার কোটি টাকার ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। দেশে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ভোজ্যতেলের চাহিদাপূরণ ও ভোজ্যতেলের আমদানি-নির্ভরতা কমাতে সরকার তেলজাতীয় ফসলের বৃদ্ধির জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে।

প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তে কৃষি ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের মাধ্যমে দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করে অধিক ফসল উৎপাদন করতে হবে। বিশেষ করে সরিষা, তিল, সূর্যমুখী, চীনাবাদাম, সয়াবিন উৎপাদন বৃদ্ধিসহ কৃষকের সার্বিক জীবনমান উন্নয়ন করাও এই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য।

এই প্রকল্পের আওতায় দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড়ের ১০ উপজেলার প্রকল্পের আওতাভুক্ত করে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করা হয়েছে। ফলন বাড়াতে কৃষকদের বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে ৩ জেলায় ২৮ হাজার ৭৯৭ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়। আর এ বছর আবাদি জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৬১৯ হেক্টরে।

প্রকল্পের আওতাভুক্ত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমন ধান তোলার পর অনেক জমি পরবর্তী বোরো ধান বপনের আগ পর্যন্ত অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকত। কিন্তু কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃষকরা মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। তারা জানান, সরিষা তোলার পর অনায়াসে বোরো বপন করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা আবাদের কারণে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিকর রোগ-বালাই দমনেও তা কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার ধোবাগঞ্জ ঝাকুয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান, ‘আমি কৃষি বিভাগের কথামতো ৬০ শতাংশ জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। আগে তো জমিগুলো আমন আবাদের পর খালি পরি থাইকতো। এখন আবাদ করেছি। ফলন ভালো হইছে। বাজারে সরিষার দামও ভালো।’

তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের দিনাজপুর অঞ্চলের মনিটরিং অফিসার কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার বলেন, বৃহত্তর দিনাজপুর অঞ্চলে আমন আবাদের পর বোরো লাগানোর আগপর্যন্ত জমিগুলো অনাবাদি পড়ে থাকে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে এই অঞ্চলের জমিগুলোকে চাষের আওতায় এনে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে তেলের ঘাটতি পূরণ ও বৈদেশিক নির্ভরতা কমানোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দিনাজপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ বলেন, সরিষা জমির জন্য একটি অত্যন্ত উপকারী ফসল। সরিষা মাটি থেকে ধানের নিচের লেভেলের খাদ্য গ্রহণ করে। সরিষার আবাদের ফলে জমিতে বাতাস চলাচল বৃদ্ধি পায়। ধান কাটার পর ধানগাছের পড়ে থাকা গুঁড়িতে অনেক রকম রোগজীবাণু বাসা বাঁধে, যা পরবর্তী ফসলের ক্ষতি করে কিন্তু সরিষার আবাদের ফলে জমিতে থাকা রোগজীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়।