আট মাসে ৭ বার বাড়ল ভোজ্যতেলের দাম

গ্রাম বা শহর—যেখানেই থাকুন না কেন, আজ বুধবার থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে হবে লিটারে ৭ টাকা বাড়তি দাম দিয়ে। অর্থাৎ এত দিন যাঁরা ১৫৩ টাকা লিটার দরে সয়াবিন তেল কিনছিলেন, এখন কিনতে হবে ১৬০ টাকা লিটার দরে।

পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল কেনার ক্ষেত্রেও অনেকটা একই রকম বাড়তি দাম গুনতে হবে ভোক্তাদের। অর্থাৎ সয়াবিনের ৫ লিটারের বোতলের দাম গতকাল পর্যন্ত ছিল গড়ে ৭২৮ টাকা, আজ থেকে দাম ৭৬০ টাকা। বোতলজাতের পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ও খোলা পাম তেলের দামও বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী ও বনস্পতি উৎপাদক সমিতি এ নতুন খুচরা দর নির্ধারণ করে গতকাল মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে সাতবার। গত জানুয়ারিতে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১১৫ টাকা।

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বিবেচনায় নিয়ে নতুন দর নির্ধারণ করা হয়েছে বলে দাবি সমিতিটির। সমিতিটি গতকাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্ধারণ করা হয়েছে নতুন দর।

এ ছাড়া প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১২৯ টাকার বদলে ১৩৬ টাকা এবং খোলা পাম তেল ১১৬ টাকার বদলে ১১৮ টাকায় বিক্রি করা হবে এখন থেকে। তবে পরিবেশক ও খুচরা পর্যায়ে পুরোনো মজুতের ক্ষেত্রে নতুন দর প্রযোজ্য হবে না।

প্রতি মাসে এক লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে দেশে। এক টনে হয় এক হাজার লিটার। লিটারে ৭ টাকা বাড়তি এলে মাসে ৭০ কোটি টাকা বাড়তি মুনাফা পাবেন ব্যবসায়ীরা।

খুচরার পাশাপাশি ভোজ্যতেলের মিলগেট মূল্য ও পরিবেশক মূল্যও নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন খোলা সয়াবিন তেলের এক লিটারের মিলগেট মূল্য ১৩৪ ও পরিবেশক মূল্য ১৩৫ টাকা, এক লিটার বোতলের মিলগেট মূল্য ১৫০ ও পরিবেশক ১৫৪ টাকা, পাঁচ লিটার বোতলের মিলগেট মূল্য ৭২০ ও পরিবেশক মূল্য ৭৪০ টাকা। এ ছাড়া এক লিটার পাম তেলের মিলগেট মূল্য ১১৬ ও পরিবেশক মূল্য ১১৭ টাকা।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ঢাকার বিভিন্ন বাজারে সয়াবিন তেল খোলা ১৩৫ থেকে ১৪২ টাকা, বোতলজাত ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকা এবং ৫ লিটারের বোতল ৬৮০ থেকে ৭২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। টিসিবির গতকালের বাজারদরের তথ্যে খোলা পাম তেলের দাম অবশ্য ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা প্রতি লিটার উল্লেখ রয়েছে।

দর নির্ধারণ করতে গত রোববার ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল যে দর নির্ধারিত হয়েছে, তা ওই বৈঠকে প্রস্তাব আকারে ছিল। অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বৈঠক শেষে ওই দিনই সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, প্রথমে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ ও পরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি অনুমোদন করলে এটি চূড়ান্ত হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রী ও সচিব অনুমোদন করার পরই সমিতি গতকাল বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। তবে ভোজ্যতেলের নতুন দর বিষয়ে ৪ অক্টোবর বিটিটিসি যে প্রতিবেদন পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে, সেখানে দাম বৃদ্ধির কারণের মধ্যে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলার শক্তিশালী হওয়া ও পণ্য পরিবহনে জাহাজভাড়া বৃদ্ধির কথা বলা হয়।

নতুন যে দাম নির্ধারিত হয়েছে, তা কার্যকর করতে মিলগেট, পরিবেশক ও খুচরা বাজারে তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করার সুপারিশও করেছে বিটিটিসি।