খুলনায় পানির হাহাকার চরমে

বেশ কয়েকদিন ধরেই ঘাম ঝরে টিউবওয়েলের হ্যান্ডেল চাপতে চাপতে তবু পানি উঠে না। পানির জন্য অমানবিক চেষ্টা ও পরিশ্রম করতে হয়। গ্রীষ্মের শুরুতেই পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

বাংলা নিউজ টুয়েন্টি ফোর থেকে জানা যায়, মহানগরীর আলী ক্লাব সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, মার্চ মাসের শুরু থেকেই সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় পানি পাই না। মাঝে মধ্যে বাসার লোকজন পানির অভাবে গোসলও করতে পারেন না।

বাইতিপাড়া এলাকার বাসিন্দা হরে কৃষ্ণ বলেন, গরম শুরুর পর থেকেই হস্তচালিত নলকূপে আগের মতো পানি উঠছে না। রাতে অথবা ভোরে সামান্য পানি ওঠে। পানি নিয়ে সীমাহীন কষ্টে আছি। যা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে।

ভুক্তভোগী নগরবাসীরা জানান, বাসাবাড়িতে খাবার পানি নেই, রান্নার পানি নেই, নেই গোসলের পানি। পানির জন্য অনেকেরই প্রাণ এখন ওষ্ঠাগত। ওয়াসার পানি নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা হয়। এ পানি পান করা যায় না। এতোদিন নলকূপের পানি পান করেছি। এখন নলকূপে পানি উঠছে না। প্রতিবেশীদের নলকূপ (সাবমার্সিবল পাম্প) থেকে পানি আনতে হচ্ছে। কিন্তু সাবমার্সিবল পাম্পে পানি উঠাতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হওয়ায় অনেকে পানি দিতে চান না। বৃষ্টি না হলে পানির স্তর আরও নিচে নামবে এবং তাতে নগরীর ৯০ শতাংশ নলকূপ দিয়ে পানি না ওঠার পরিস্থিতি তৈরি হবে।

আক্ষেপ করে অনেকে বলেন, অধিকাংশ এলাকায় পাইপলাইনে মধুমতি নদীর পরিশোধিত পানি সরবরাহ করছে খুলনা ওয়াসা। কিন্তু সে পানি খাওয়ার যোগ্য নয়। ওয়াসা নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও খাবার পানির কষ্ট আগের মতোই থেকে গেছে।

খুলনা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, মহানগরীর ৩৮ হাজার বাড়িতে ওয়াসা পাইপলাইনে পানি দিচ্ছে। গ্রীষ্ম এলেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক এলাকার নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ওয়াসার নিজস্ব নলকূপেও পানি উত্তোলনের পরিমাণ কমেছে। এতে পানির জন্য নগরবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এদিকে নগরী ছাড়াও সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। শহর থেকে গ্রাম সবখানেই রয়েছে সুপেয় পানির সঙ্কট। পুকুর ও জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় জেলার বিভিন্ন গ্রামে পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। এতে চৈত্রের খরতাপে হাঁপিয়ে উঠছে মানুষ ও প্রাণীকূল। বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে দাকোপ, বটিয়াঘাটা, কয়রা ও পাইকগাছায়। এসব এলাকার অগভীর নলকূপগুলো অধিকাংশই অকেজো। যে কয়েকটি সচল রয়েছে সেগুলোর পানি লবণাক্ত ও আর্সেনিকে ভরা। যার কারণে খাবার পানি আনতে দেড়-দুই কিলোমিটার দূরে যেতে হচ্ছে নারীদের।

ভুক্তভোগীরা পানির জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন বলে জানান। পানি সংরক্ষণ ও নিরাপদ পানি সরবরাহে জেলা পরিষদের পুকুর/দীঘি ও জলাশয় পুনঃখনন/সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

তবে পানির অভাবে চৈত্রের কাঠফাটা রোদে মাঠ, ঘাট, পথ, খাল, বিল ও প্রান্তর ফেটে চৌচির। দিনভর সূর্যতাপে নুইয়ে পড়ছে গাছের পাতাও। নেতিয়ে পড়েছে সবজি। ফসলি ক্ষেত বৃষ্টির অভাবে ক্ষতির সম্মুখীন। সেচের অভাবে বাদামী রং ধারণ করছে ইরি ধানক্ষেত।