লক্ষ্মীপুরের বাজারগুলোতে মাছ-মাংসে ক্রেতাদের অস্বস্তি

মীর ফরহাদ হোসেন সুমন: লক্ষ্মীপুরের বাজারগুলোতে মাছ, গরুর মাংস এবং মুরগির দাম বেড়েই চলছে। বিশেষ করে গরুর মাংস সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাহিরে চলে যাচ্ছে। এছাড়া বাজারে চাল, আটা, ডাল, ডিম, গুড়োদুধ, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি মালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতাদের নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে। 

তবে এসব পণ্য ক্রয়ে ক্রেতাদের অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হলেও কাঁচা বাজারে গেলে কিছুটা স্বস্তি পান ক্রেতারা। শাক-সবজির উৎপাদন কিছুটা বেশি হওয়ায় দাম একেবারে পড়ে গেছে।

যদিও কৃষকরা বলছে, সবজির দাম কমে যাওয়ায় তাদের উৎপাদন খরচও উঠছে না। 

সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকা। লেয়ার মুরগির কেজি ৩০০, সোনালী কক মুরগি ২৮০, বয়লার ১৫০-১৬০ টাকা। রুই মাছের কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, তেলাপিয়ার কেজি ১৬০-১৮০ টাকা, পাঙ্গাসের কেজি ১৫০ টাকা, ইলিশ আকার ভেদে কেজিপ্রতি ৮০০-১২০০ টাকা।

ধানের ভরপুর মৌসুমেও বৃদ্ধি পেয়েছে চালের দাম। গত দুই মাসের ব্যবধানে ৫০ কেজির বস্তায় বেড়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করে। বাজারে দেখা গেছে, পাইজাম চালের ৫০ কেজি ওজনের বস্তুার দাম ২২০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৪৫০ টাকা, স্বর্ণা ২০০০ টাকা থেকে বেড়ে ২২৫০ টাকা। ২৮ সরু মিনিকেট ২৩০০ থেকে বেড়ে ২৫০০ টাকা, জিরা মিনিকেট ছিলো ৩ হাজারের নীচে, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩৩০০ টাকায়। তবে নতুন মিনিকেটের দাম কিছুটা কম, ৫০ কেজি ওজনের বস্তুা ৩১০০ টাকা। 

ব্যাপক হারে বেড়েছে আলুর দাম, ২০ টাকা কেজির আলু এখন ২৭-২৮ টাকা। ক্রেতাদের নাগালের বাহিরে যাবার পথে ডিম, যার ডজন বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকা করে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ২২০-২২৫ টাকা। চিনির কেজি ৮৫ টাকা, খোল আটার কেজি ৪০ টাকা, প্যাকেট আটা ৪৬ টাকা, ছোট মুশরী ডাল ১৩০ টাকা, গুড়োদুধ (মার্কস) আধাকেজির প্যাকেট ৩৬০-৩৭০ টাকা। কম আছে পেয়াজের দাম, প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৩-৩৫ টাকায়। 

নিত্য প্রয়োজনীয় এসব পণ্য কিনতে গিয়ে ক্রেতারা যখন হাঁপিয়ে ওঠে, তখন সবজি বাজারে গিয়ে কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে কমে গেছে সবজির দাম। 

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি পটল ২০ টাকা, ঢেঁড়স ১৫-২০ টাকা, শসিন্দার কেজি ২০ টাকা, ধুন্দুল ১৫-২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ২৫ টাকা, জালি কুমড়ার কেজি ২০ টাকা, কচুর লতির কেজি ২৫-৩০ টাকা, পেঁপের কেজি ২৫ টাকা, বরবটির কেজি ৩০ টাকা, করল্লার কেজি ৩০ টাকা, কাঁকরল ৩০-৩৫ টাকা, চিচিঙ্গা ২৫-৩০ টাকা কেজি, বেগুন ২০ টাকা কেজি, কাঁচামরিচের কেজি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। 

শাকের মধ্য পুই শাকের আঁটি ১০ টাকা, কুমড়া শাক ১৫-২০ টাকা, পাটের শাকের আঁটি ৫ টাকা, কলমি শাকের আঁটি ৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর বাজারে শাক সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষক আবদুর রহমান ও নুর নবী বলেন, মাঝে মধ্যে বৃষ্টিপাত হওয়ার শাক সবজির উৎপাদন বেশি হচ্ছে। তাই বাজারে চাহিদার তুলনায় পণ্যের পরিমাণ বেশি। এতে দাম পড়ে গেছে। এখন আমাদের উৎপাদন খরচও উঠছে না। 

তারা বলেন, বর্ষায় টানা বৃষ্টিপাত হলে সবজি উৎপাদন কম হবে। ক্ষেতে পামি জমে গেলে যেকোন সবজির গাছ মরে যায়। তখন আবার দাম বেড়ে যাবে। 

একই বাজারে সবজি ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সবজি আসছে, আবার এখানেও সবজি চাষ হচ্ছে। তাই দাম পড়ে গেছে। 

সদর উপজেলার জকসিন বাজারের মুদি দোকানী সফিকুল ইসলাম বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রত্যেকটি পণ্যের দাম দিন দিন বেড়েই চলছে। তাই ক্রেতাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

একই বাজারে গরুর মাংস বিক্রেতা আবদুল খালেক বলেন, সামনে কোরবানির ঈদ, তাই গরুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া খৈল, ভূষি সহ গো-খাদ্যের দাম বেশি থাকা গরুর দামও বেশি। ফলে আমাদেরকে বেশি দামে গরুর মাংস বিক্রি করতে হচ্ছে। 

নুরুল ইসলাম নামে এক মুরগীর দোকানী বলেন, রমজানের ঈদের পর থেকেই মুরগীর দাম বেড়েছে। এরপর আর কমেনি। খামারে মুরগীর উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম বেশি বলে জানান তিনি।

নিজাম উদ্দিন নামের এক ক্রেতা বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই দাম হাতের নাগালের বাহিরে চলে গেছে। তাই আয়ের সাথে ব্যায়ের হিসেব মিলছে না। আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।