চট্টগ্রামে ৩২০ ইটভাটার ১৮২টিই অনুমোদনহীন

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:
প্রভাবশালীদের ছত্রছায়া, অল্প খরচে অধিক মুনাফা এবং কাঁচামালের সহজলভ্যতায় চট্টগ্রামে যত্রতত্র গড়ে উঠছে ইটভাটা। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রে পড়ছে প্রভাব।

প্রশাসনের নামমাত্র অভিযান ইটভাটার সাময়িক উৎপাদন থামাতে পারলেও মিলছে না দীর্ঘমেয়াদী সুফল।

পরিবেশ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় মোট ইটভাটার সংখ্যা ৩২০টি। এর মধ্যে ১৩৮টি ইটভাটার বৈধ কাগজপত্র থাকলেও বাকি ১৮২টিরই নেই অনুমোদন। ১৪ উপজেলার মধ্যে একটি ইটভাটা রয়েছে পটিয়া উপজেলায় এবং সবচেয়ে বেশি ৬৮টি ইটভাটা সাতকানিয়া উপজেলায়।

এছাড়া রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ৫০টি, ফটিকছড়ি উপজেলায় ৩৩টি, লোহাগাড়া উপজেলায় ৩৩টি, রাউজান উপজেলায় ৩২টি, হাটহাজারী উপজেলায় ৩১টি, চন্দনাইশে ২৮টি, মিরসরাইয়ে ১৩টি, কর্ণফুলী এলাকায় ১০টি, সন্দ্বীপে ৬টি, বাঁশখালীতে ৫টি, সীতাকুণ্ডে ৪টি, বোয়ালখালীতে ৪টি, আনোয়ারায় ২টি ইটভাটা রয়েছে।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ৫ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনও ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে কৃষিজমি বা পাহাড় বা টিলা হতে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া ৬ ধারায় বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কোনও জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করতে পারবেন না। ’

দেখা গেছে, চট্টগ্রামের ৩২০ ইটভাটার মধ্যে ২৭৫টি পাহাড়বেষ্টিত উপজেলা সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান এবং চন্দনাইশে অবস্থিত। এই সাত উপজেলায় গড়ে ওঠা ৮০ শতাংশ ইটভাটার প্রধান কাঁচামাল মাটির যোগান আসছে পাহাড়ি মাটি বা টিলা থেকে। এছাড়া জ্বালানি হিসেবে এখনও বিভিন্ন ইটভাটায় ব্যবহার হচ্ছে পাহাড় থেকে কেটে আনা কাঠ।

পাহাড়ি অঞ্চলে ইটভাটা স্থাপনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে বলে জানান গবেষকরা। এছাড়া এসব এলাকায় ইটভাটা থাকায় বায়ু দূষণের পাশাপাশি পাহাড় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি তাদের।

ইটভাটার পরিবেশগত ক্ষতি নিয়ে গবেষণা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল বলেন, ইটভাটার কারণে পরিবেশের কি ক্ষতি হচ্ছে- তা যাচাইয়ে আমরা বেশকিছু স্টাডি করেছি। ইটভাটায় যেসব কয়লা ব্যবহার করা হয় তা অত্যন্ত নিম্নমানের। এছাড়া তারা টায়ার ও গার্মেন্টের ঝুট কাপড় জ্বালিয়ে ইট পুড়িয়ে থাকে। ফলে ব্যাপক পরিমাণ বায়ু দূষণ হচ্ছে। ইটভাটায় পোড়ানো জ্বালানির ছাই উড়ে গিয়ে আশপাশে কৃষি উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে। ইটভাটাবেষ্টিত এলাকায় কোনও ধরনের ফসল উৎপাদন হয় না।