আড়াই মাসে বন্দর দিয়ে এলো সাড়ে তিন লাখ টন তেল

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: বছরে দেশে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকলেও অর্থবছরের প্রথম সাড়ে আট মাসে আমদানি হয়েছে এর চেয়েও বেশি। এর মধ্যে গত আড়াই মাসে আমদানি হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন। যার বেশিরভাগ আমদানি করেছে দেশের শীর্ষ পাঁচ শিল্প গ্রুপ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে দাম বাড়লেও আমদানিকারকদের হাতে থাকা ভোজ্যতেলের দাম বাড়েনি। সম্প্রতি যে পরিমাণে আমদানি হয়েছে, আগামী রমজানে ভোজ্যতেলের সংকট হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

তবে আমদানিকারকরা বলছেন, দেশে অভিযানের নামে মফস্বল এলাকার ব্যবসায়ীদের যেভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও মাঠ পর্যায়ের বিক্রেতাদের অনীহার কারণে রমজানে সংকটের আশঙ্কা রয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত সাড়ে আট মাসে ২৪ লাখ ৪৬ হাজার ৪৭ টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে পাম অয়েল ক্রুড এসেছে ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ৮৬৭ টন। পরিশোধিত পাম অয়েল খালাস হয়েছে ১০ হাজার টন। অন্যদিকে সয়াবিন অয়েল ক্রুড এসেছে আট লাখ ৫০ হাজার ১৮৭ টন। এর মধ্যে দেশের শীর্ষ পাঁচ শিল্প গ্রুপ আমদানি করেছে ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ১৬২ টন ভোজ্যতেল।

এছাড়া এখনো শুল্কায়ন হয়নি এমন ভোজ্যতেল নিয়ে দুটি জাহাজ বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করছে বলে বন্দর সূত্রে জানা গেছে। তাতেও প্রায় ৬০ হাজার টন ভোজ্যতেল খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে গত আড়াই মাসে (১ জানুয়ারি থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত) বন্দর থেকে ভোজ্যতেল খালাস হয়েছে তিন লাখ ৫৮ হাজার ৮৯৯ টন। যার বেশিরভাগই আমদানি করেছে পাঁচ শিল্প গ্রুপের আটটি প্রতিষ্ঠান।

তথ্য অনুযায়ী, গত আট মাসে দেশের শীর্ষ ভোজ্যতেল আমদানিকারকদের মধ্যে এস আলম গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড ও এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড অর্থবছরের প্রথম সাড়ে আট মাসে বন্দর থেকে খালাস করেছে চার লাখ ৪৭ হাজার ৪০১ টন ভোজ্যতেল। এর মধ্যে গত ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত খালাস করেছে এক লাখ দুই হাজার ১৫৪ টন। প্রথম সাড়ে আট মাসে টিকে গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠান বে ফিশিং করপোরেশন লিমিটেড, শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ এবং সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড খালাস করেছে আট লাখ ৭৩ হাজার ৬৭৯ টন ভোজ্যতেল। এর মধ্যে শেষ আড়াই মাসে খালাস করেছে এক লাখ দুই হাজার ৫৯১ টন।

একইভাবে সিটি গ্রুপের সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেড এবং ভুট অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড সাড়ে আট মাসে আমদানিকৃত ভোজ্যতেল খালাস করেছে চার লাখ ৩১ হাজার ৩০৬ টন। এর মধ্যে চলতি আড়াই মাসে (১৪ মার্চ পর্যন্ত) খালাস করেছে ৬৫ হাজার ৪৭৪ টন ভোজ্যতেল। পাম অয়েল আমদানি না করলেও আরেক শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপের মেঘনা এডিবল অয়েলস রিফাইনারি লিমিটেড সয়াবিন ক্রুড খালাস করেছে ৫০ হাজার ৯৯৩ টন। তবে শেষ আড়াই মাসে তারা কোনো সয়াবিন আমদানি করেনি।

অন্যদিকে সম্প্রতি ভোজ্যতেলের বাজারে আসা দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ বসুন্ধরা তাদের বসুন্ধরা এডিবল অয়েল লিমিটেডের নামে প্রথম সাড়ে আট মাসে এক লাখ ৫০ হাজার ৭৮৩ টন ভোজ্যতেল খালাস করেছে। এর মধ্যে শেষ আড়াই মাসে ৪২ হাজার চার টন ভোজ্যতেল বন্দর থেকে নিজেদের ট্যাংকে নিয়েছে শিল্পগ্রুপটি। তাছাড়া দেশের আরেক জনপ্রিয় ভোজ্যতেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড পাম অয়েল আমদানি না করলেও এক লাখ ৬০ হাজার ৭৩৬ টন ভোজ্যতেল খালাস করেছে প্রথম সাড়ে আট মাসে। এর মধ্যে গত ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত খালাস করেছে ৩২ হাজার ৮৯ টন অপরিশোধিত সয়াবিন।

দেশে ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের শীর্ষ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের একটি আর এম এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আলমগীর পারভেজ  বলেন, সরকার এরই মধ্যে ভোজ্যতেলের ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে। মিলারদের (আমদানিকারক) কাছেও ভোজ্যতেলের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। রমজানে অন্যান্য অনেক ভোগ্যপণ্যের মতো তেলের চাহিদা বেশি থাকে। রমজান সামনে রেখে বড় বড় মিলাররাও আগাম আমদানি করে থাকেন। সম্প্রতি আশানুরূপ আমদানিও হয়েছে। এতে রমজানে ভোজ্যতেলের সংকটের কোনো কারণ নেই বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে দেশের শীর্ষ ভোজ্যতেল আমদানিকারী প্রতিষ্ঠান টিকে গ্রুপের ম্যানেজার (বিপণন) জসিম উদ্দিন মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সন্ধ্যায়  বলেন, বর্তমানে মিলারদের কাছে কী পরিমাণ ভোজ্যতেল মজুত রয়েছে তার সঠিক চিত্র দেওয়া সম্ভব নয়। তবে বর্তমানে বাজার স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে।

এরপরও সংকটের আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মফস্বলে যেভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে, ২০ থেকে ৫০ ড্রাম তেল থাকলে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মজুতদারির অভিযোগ এনে জরিমানা করা হচ্ছে। সে কারণে মফস্বলের ব্যবসায়ীরা তেল নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এতে পর্যাপ্ত আমদানি কিংবা মিলারদের কাছে মজুত থাকলেও রমজানে ভোক্তারা সুফল নাও পেতে পারেন। এতে ভোক্তা পর্যায়ে বাজারে স্বল্পতা তৈরি হতে পারে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে হু হু করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে। এখন অনেকে বলছেন, বর্তমানে যে তেল মজুত রয়েছে, তা আগে আমদানি করা। আর এখন বুকিং দিলে এ তেল বাজারে আসতে আসতে নিশ্চিতভাবে লোকসান গুনতে হবে। যখন বাজার পড়ে যায়, কম দামে বিক্রি করে লোকসানে পড়তে হয়, তখন মিলারদের পাশে কেউ থাকে না। শুধু বাড়লেই হই চই হয়। বেশি দামে কেনার পর বাজার কমে যাওয়ায় কম দামে বিক্রির কারণে চট্টগ্রামে একসময়ের আলোচিত অনেক প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছেও বলে দাবি করেন তিনি।