করোনায় ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে- ঋণ পরিশোধে সময় চান ব্যবসায়ীরা

আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের টাকা ফেরত দিতে চান না ব্যবসায়ীরা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে দাবি করে এ সুযোগ চেয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

সংগঠনটি বলছে, করোনায় আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অধিকাংশ শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঋণের কিস্তি সময়মতো জমা দিতে পারছে না। এ জন্য চলতি বছরও ঋণের কিস্তি পরিশোধে ছাড় চায় এ সংগঠন। ঋণ পরিশোধ না করলেও যাতে ব্যাংক খেলাপি না করে, সেই সুবিধা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চালু রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন এফবিসিসিআইয়ের নতুন সভাপতি জসিম উদ্দিন।

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জসিম উদ্দিনের এটাই প্রথম দাবি। গত বুধবার গভর্নর ফজলে কবিরকে দেওয়া এক চিঠিতে তিনি এ দাবি জানান।
করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের পুরো সময়ে এই সুবিধা পান ঋণগ্রহীতারা। চলতি বছরও কিছু সুবিধা চালু আছে, তবে আগের মতো নয়। এখন এফবিসিসিআই সব ধরনের ব্যাংকঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সব ধরনের সুবিধা চলতি বছরের পুরো সময়ে চালু রাখার দাবি জানিয়েছে।

এদিকে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। তাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮.০৭ শতাংশ।

জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি ফোন না ধরায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। করোনায় বিভিন্ন নীতিসুবিধা দেওয়ায় গভর্নরকে ধন্যবাদ জানিয়ে এফবিসিসিআইয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কোভিড-১৯–এর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় অর্থনীতির বাস্তব সমস্যা অনুধাবন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সময়োপযোগী আর্থিক ও নীতিসহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কোভিভ-১৯–পরবর্তী ধকল সন্তোষজনকভাবে মোকাবিলা করার সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে।

এফবিসিসিআই বলছে, বিভিন্ন প্রণোদনা তহবিল অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। দেশের রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখার স্বার্থে শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি বাবদ সরকারি তহবিল থেকে বিশেষ প্রণোদনা প্রদান, শিল্প ও সেবা খাতে চলতি মূলধন হিসেবে ঋণ প্রদান, প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট খাতে পুনঃ অর্থায়ন স্কিম, কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের জন্য বিশেষ সুবিধাসহ কৃষি খাতে চলতি মূলধন সরবরাহ, নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পুনঃ অর্থায়ন অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।

এফবিসিসিআই বলছে, করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব বিদ্যমান রয়েছে। অধিকাংশ শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তাদের ঋণের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেওয়া সুবিধার মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হলে অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনিচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহকে পরিণত হবে।

বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে এফবিসিসিআই জানায়, করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব বিদ্যমান রয়েছে। অধিকাংশ শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তাদের ঋণের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেওয়া সুবিধার মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হলে অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনিচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহকে পরিণত হবে। এতে ব্যাংকিং খাতসহ পুরো অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ জন্য দেশের শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট সব খাতের ঋণ বিরূপ, মানে শ্রেণীকরণ প্রক্রিয়া আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত রাখার জন্য দাবি জানিয়েছে এফবিসিসিআই।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় ঋণ পরিশোধে ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে আপাতত ঋণ শোধ না করলেও কেউ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে না। তবে এবার আগের মতো গণসুবিধা না দিয়ে কিছুটা কৌশলী ভূমিকা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গণসুবিধা বহাল না থাকায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। তাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮.০৭ শতাংশ।

সুত্র: প্রথম আলো/এমএস