গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণশুনানি চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা:

শুরু হয়েছে গ্যাসের আকাশচুম্বি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের উপর গণশুনানি। অনেক বিকল্প থাকলেও সেদিকে না গিয়ে করোনা মহামারির সময়ে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের কঠোর সমালোচনার মধ্যেই গণশুনানি শুরু হচ্ছে।

সোমবার (২১মার্চ) রাজধানীর বিয়াম অডিটরিয়াম গণশুনানি গ্রহণ করছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন(বিইআরসি)। কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে শুনানি গ্রহণে উপস্থিত রয়েছেন সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী, বজলুর রহমান, মোহাম্মদ আবু ফারুক ও মো. কামরুজ্জামান।

দিনের শুরুতে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। এরপর কমিশন তাদের মূল্যায়ণ রিপোর্ট পেশ করবে। কমিশনের মুল্যায়ন রিপোর্ট শেষে ইতোমধ্যে যারা তালিকাভুক্ত করেছেন তারা আলোচনায় অংশ নেবেন। সবশেষে উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকবে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের। বিধান রয়েছে গণশুানানির পর ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জ্বালানি বিভাগের হাতে একাধিক বিকল্প ছিল। তারা সেদিকে না গিয়ে দাম বাড়ানোর মতো জটিল পথে পা দিয়েছে। গ্যাস সরবরাহ আসছে প্রধানত দু’টি উৎস থেকে। একটি হচ্ছে দেশীয় গ্যাস ফিল্ড থেকে উত্তোলন, দ্বিতীয়টি হচ্ছে বিদেশ থেকে আমদানি। বিদেশ আমদানি দুই ধরণের চুক্তির আওতায় আনা হচ্ছে। একটি হচ্ছে জিটুজি ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায়, আর স্পর্ট মার্কেট (দরপত্রের মাধ্যমে বর্তমান দর) থেকে। দেশীয় উৎসের গ্যাসের দাম বাড়েনি, জিটুজি ভিত্তিতে আনা গ্যাসের দামও বাড়েনি। দাম বেড়েছে শুধু স্পর্ট মার্কেট থেকে আনা গ্যাসের। যার পরিমাণ সামান্যই।

বর্তমানে দৈনিক ২৯৫৬ এমএমসিএফ (৭ মার্চ ২০২২)গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। একই দিনে স্পর্ট মার্কেট থেকে আমদানি করা গ্যাসের পরিমাণ ছিল মাত্র ১০১.৬৭ এমএমসিএফডি। যার অনুপাত বের করলে দাঁড়ায় মাত্র ৪ শতাংশের মতো।

ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেছেন দাম বেড়েছে স্পর্ট মার্কেট থেকে আনা কমবেশি ৫-৬ শতাংশ। সিস্টেমের ৫-৬ শতাংশের দাম বেড়েছে বলে পুরো গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বাড়াতে হয় এটা বিশ্বাসযোগ্য! তারা গোজামিল দিয়ে হিসেব দেখাচ্ছে, এসব হিসাব বাস্তব সম্মত না। প্রয়োজন হলে ওই পরিমাণ এলএনজি আমদানি না করার পক্ষে আমরা। তবুও দাম বাড়ানো উচিত হবে না।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন, স্বচ্ছতা এবং গ্যাস চুরি ঠেকিয়েও দাম অপরিবর্তিত রাখা যায়। প্রায় ২৯’শ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহের বিপরীতে সিস্টেম লস প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ। ৫ শতাংশ সিস্টেম লস কমানো গেলেও চড়াদামে ১৫০ এমএমসিএফডি আমদানি করতে হয় না। আর আমদানি করতে না হলে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ে না।

গ্যাসের দাম দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। একচুলা ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০০ টাকা, দুই চুলা ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২১০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আবাসিকে প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারি গ্রাহকদের প্রতি ঘনমিটারের বিদ্যমান মূল্য ১২.৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৭.৩৭ টাকা, সিএনজি প্রতি ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৬.০৪ টাকা, হোটেল-রেস্টুরেন্টে ২৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৯.৯৭ টাকা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ১৭.০৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৭.০২ টাকা, ১০.৭০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৩.২৪ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১৩.৮৫ টাকা থেকে ৩০.০৯ টাকা, চা শিল্পে ১০.৭০ টাকা বাড়িয়ে ২৩.২৪ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও সার কারখানায় থাকা বিদ্যমান দর ৪.৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯.৬৬ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ভারিত বিদ্যমান গড় ৯.৩৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০.৩৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অতীতে কখনই এতো বেশি পরিমাণে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয় নি। যে কারণে একে নজীর বিহীন বলে উল্লেখ করেছে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

পেট্রোবাংলা তার লিখিত প্রস্তাবে বলেছেন, রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্স ও সিলেট গ্যাস ফিল্ডের গ্যাসের প্রতি ঘনমিটারের গড় ক্রয়মূল্য পড়ছে ১.২৬ টাকা, শেভরনের থেকে কিনতে হচ্ছে ২.৮৯ টাকা, তাল্লো থেকে ৩.১০ টাকা করে। অন্যদিকে এলএনজির প্রকৃত ক্রয়মূল্য ৩৬.৬৯ টাকা অন্যান্য চার্জ দিয়ে ৫০.৩৮ টাকা পড়ছে। দৈনিক ৮৫০ মিলিয়ন ঘন ফুট এলএনজি আমদানি বিবেচনায় এই দর।