পাসপোর্ট অফিস দালালে ভরা, ভোগান্তিতে সেবাগ্রহীতারা

খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস চালাচ্ছে যেন দালাল ও তদবিরকারীরা। চিকিৎসা, হজ, ভ্রমণ, শিক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কাজে পাসপোর্ট করতে প্রতি দিন ওই কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা লোকদের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে দালাল কিংবা তদবিরকারীর কাছে।

ওই কার্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদে কর্মরত কর্মচারী-কর্মকর্তারা দালালচক্র দিয়ে অফিস খরচ ও পুলিশ তদন্তের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে দুই/তিন হাজার টাকা। আর সবকিছুর নিয়ন্ত্রক ওই কার্যালয়ের উপ সহকারী পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকার।

জানা যায়, গেল বছরের ২১ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম পাসপোর্ট কার্যালয়ে সেবাগ্রহীতা এক নারীকে যৌন হয়রানির দায়ে উপ সহকারী পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকারকে খাগড়াছড়ি বদলি করা হয়। খাগড়াছড়িতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দালালচক্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই কর্তার বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত পাসপোর্ট কার্যালয়ে গিয়ে যার সত্যতা মিলেছে।

মো. হোসেন নামে খাগড়াছড়ি বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, নিজের ও ছেলের পাসপোর্টের জন্য অফিসে যোগাযোগ করা হলে কোর্ট বিল্ডিং এলাকার এক কম্পিউটার কম্পোজ দোকানের ঠিকানা দেওয়া হয়।
ফারুক নামে ওই ব্যক্তির মাধ্যমে ফরম পূরণ, ব্যাংকের টাকা জমা ও অফিসের কাজ করেছি। পুলিশের তদন্তের কাজও উনি করে দেবেন। কত টাকা নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুশি হয়ে এ টাকা দিয়েছি। কাজ সহজ করার জন্য।

রামগড় থেকে পাসপোর্ট করতে আসা বিবি মরিয়ম জেলি নামে এক নারী বলেন, সকাল ১০টা থেকে পাসপোর্ট অফিসে এসেছি। দুইটা বাজলেও কোনো খবর নেই। আমার পরে এসে অনেকে কাজ করে নিয়ে যাচ্ছেন। অফিসের লোকজনই তাদের কাজ করে দিচ্ছেন।

জাহিদুল ইসলাম নামে আরেকজন বলেন, শাপলা চত্বরে একটি কম্পিউটার দোকান থেকে ফরম পূরণ করেছি। এটি জমা দেওয়ার পর ভুল হয়েছে, তথ্য মিলছে না বলে ফিরিয়ে দিয়েছে। কীভাবে সমাধান করব জানতে চাইলে তাদের পরিচিত এক কম্পিউটার ব্যবসায়ীকে দেখিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। পাসপোর্টের জন্য তিনি আমার কাছ থেকে ছয় হাজার টাকা নিয়েছে। পুলিশ ভেরিফেকশনে আর কোন খরচ দিতে হবে না বলে জানান তিনি।

পাসপোর্ট অফিসের ১০২ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায় ডাটা এন্ট্রি, ছবি তোলা, আঙ্গুল ও চোখের চাপ নিচ্ছেন সাইফুল ইসলাম নামে একজন।

সেবাগ্রহীতাদের দীর্ঘলাইনে অপেক্ষা রাখার অভিযোগ স্বীকার করে তিনি বলেন, ডিএডি স্যার সুপারিশ দিয়ে যাদের পাঠাচ্ছেন তাদের আগে সেবা দিতে হচ্ছে। স্যারের নির্দেশ অমান্য করার কোন সুযোগ নেই।
দালালচক্রের সক্রিয়তার প্রমাণ মিলে ওই কক্ষে। পাসপোর্ট অফিসের মনোনীত কম্পিউটার কম্পোজ ব্যবসায়ী ফারুক কয়েকজনকে নিয়ে এসে ছবি তুলিয়ে নিয়ে গেছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ সহকারী পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আব্দুল আজিজ বলেন, পুলিশ ভেরিফেকশনে কোনো আর্থিক লেনদেন হয় না। তদন্তের জন্য পুলিশের নাম ভাঙিয়ে কেউ যদি টাকা নেয় তার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।