বাগানে দৈনিক ২০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের চা পাতা নষ্ট হচ্ছে: বিটিএ

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: চা শ্রমিকদের ধারাবাহিক কর্মবিরতি ও আন্দোলনের কারণে সিলেট ও চট্টগ্রামের ১৬৮টি চা বাগানে দৈনিক ২০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যমানের চা পাতা নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি বাগান মালিকদের।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় চা-বাগান মালিকপক্ষদের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের চা-শিল্প যখন বিশ্ব বাজারে প্রভাব বিস্তার করছে। ঠিক তখনই আন্দোলনের নেমে তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকার বাজারকে ঝুঁকিতে ফেলছে বলে আশঙ্কা করছেন চা সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা।

চা-বাগানে শ্রমের দৈনিক ৩শ টাকা মজুরির দাবি করা হলেও একজন শ্রমিক দৈনিক প্রায় ৪০০ টাকা সমপরিমাণ সুবিধা পেয়ে থাকেন। প্রত্যক্ষ সুবিধার মধ্যে দৈনিক নগদ মজুরি ছাড়াও ওভারটাইম, বার্ষিক ছুটি ভাতা, উৎসব ছুটি ভাতা, অসুস্থজনিত ছুটি ভাতা, ভবিষ্যৎ তহবিল ভাতা, কাজে উপস্থিতি ভাতা, ভবিষ্যৎ তহবিলের ওপর প্রশাসনিক ভাতার মাধ্যমে সর্বমোট গড়ে দৈনিক মজুরির প্রায় দ্বিগুণ নগদ অর্থ দেওয়া হয়।

বিটিএর উদ্যোক্তারা গণমাধ্যমকে বলছেন, শ্রমিকদের সামাজিক উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য দৈনিক ১৭৫ টাকার বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশে এখন ১৬৮টি বাণিজ্যিক ভাবে চা উৎপাদনের বাগান কাজ করছে। যেখানে দেড় লাখেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে। উপরন্তু, বাংলাদেশ বিশ্বের তিন শতাংশ চা উৎপাদন করে। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী- বাংলাদেশি চায়ের বাজারের মূল্য প্রায় তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা জিডিপিতে এই শিল্পের অবদান প্রায় ১ শতাংশ।

চা শ্রমিকদের মজুরিসহ নানা সুবিধার ব্যাখ্যা দিয়ে তারা জানান, খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভর্তুকির মাধ্যমে দুই টাকা কেজি দরে মাস প্রতি শ্রমিককে প্রতি মাসে প্রতি ৪২ দশমিক ৪৬ কেজি চাল অথবা গম রেশন দেওয়া হয়। তাছাড়া শ্রমিকদের খাদ্য নিরাপত্তা আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে প্রায় ৯৪ হাজার ২০০ বিঘা জমি চাষাবাদের জন্য বন্টন করা হয়েছে।

১৯০ বছরের পুরানো শিল্প হিসেবে বাংলাদেশের অন্যান্য যেকোনো শিল্পের তুলনায় অনেক আগে থেকেই শ্রমিক আইন অনুসরণ করা হচ্ছে প্রতিটি চা বাগানে। শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য নিশ্চিতে ১৬ সপ্তাহের মজুরিসহ মাতৃত্বকালীন ছুটির পাচ্ছেন নারী শ্রমিকরা।

একজন শ্রমিকের বসত-বাড়ির জন্য পরিবার প্রতি এক হাজার ৫৫১ স্কয়ার ফুট করে বাড়িসহ সর্বমোট পাঁচ হাজার ৮০০ বিঘা জায়গা দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দুটি বড় গ্রুপের ও ৮৪টি বাগানের হাসপাতালে ৭২১ শয্যার ব্যবস্থা, ১৫৫টি ডিসপেনসারসহ সর্বমোট ৮৯১ জন মেডিকেল স্টাফ নিয়োজিত রয়েছেন।

শ্রমিকদের সন্তানদের সুশিক্ষা নিশ্চিতকরণে প্রাথমিক, জুনিয়র ও উচ্চ বিদ্যালয় মাইল সর্বমোট ৭৬৮টি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে যেখানে এক হাজার ২৩২ জন শিক্ষকের মাধ্যমে এখন ৪৪ হাজার ১৭১ জন শিক্ষার্থী বিনামূল্যে পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছেন।

এছাড়াও, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকের ভাতা, বিভিন্ন রকম শ্রমিক কল্যাণ সূচি যেমন বিশুদ্ধ খাবার পানি, ম্যালেরিয়া প্রতিষেধক, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, পূজা, বিনোদন প্রভৃতি কর্মকাণ্ডে সামগ্রিক আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। তাছাড়াও, চা শ্রমিকের অবসরের পর তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা চাকরিতে নিয়োগ পেয়ে থাকে, যা একজন চা শ্রমিকের চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকে।

এর আগে ২০১২ সাল থেকে ১০ বছরে চায়ের নিলাম মূল্যের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে শূন্য দশমিক ১৬ হারে বাড়লেও চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয় ৯৪ দশমিক ২০ শতাংশ।