বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সুপারিশ লুণ্ঠনমূলক : ক্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি টিমের করা বিদ্যুতের দাম ৫৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশকে অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক দাবি করে কিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

এসব প্রস্তাবসমূহ গৃহীত হলে বাল্ক বিদ্যুতে ৪০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি সমন্বয়ের পর তিন হাজার ৩৭২ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন ক্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. এম শামসুল আলম।

বুধবার রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে গণশুনানিতে ক্যাবের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়।

ক্যাব এর প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে-
১. বাল্ক বিদ্যুতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি সমন্বয়ে মূল্যহার বৃদ্ধি বা ভুর্তকি প্রদান না করে অন্যায়, অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয় বৃদ্ধি যথা- ৬ শতাংশ ট্যাক্স নতুন ভাবে আরোপ না করে, তেলে শুল্ক-করাদি অব্যহতি সুবিধা পুনর্বহাল করে, কয়লার ওপর ৫ শতাংশ নতুন ভাবে আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার করে এবং ব্যক্তি খাতের পরিবর্তে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত তেল বিপিসি’র মাধ্যমে আমদানি করে মোট আট হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা ঘাটতি কমানোর প্রস্তাব করা হলো। এবং সেই সাথে অবৈধ ভাবে নির্ধারিত ডিজেল ও ফার্নেস ওয়েলের বর্ধিত মূল্য এবং কুইক রেন্টালের বিদ্যুৎ অবৈধ ভাবে ক্রয়কৃত মূল্য বাল্ব বিদ্যুতের মূল্যহার সমন্বয় না করে ঘাটতি ১৪ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা, পিডিবি’র কম্বাইন্ড সাইকেল প্লান্টসমূহ ৫৩ শতাংশ এর পরিবর্তে ৬৭ শতাংশ পিএফ এ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ঘাটতি ১৫ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা, ১৩২ কেভি থেকে তদুর্দ্ধের ভোল্টেজ লেভেলের ভোক্তাদের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার ভর্তুকিমুক্ত করে এবং বিতরণ ইউটিলিটি ভেদে তা অভিন্ন করে ঘাটতি এক হাজার ৩২৮ কোটি টাকা এবং ১৯টি পিবিএস এর ক্ষেত্রে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার যৌক্তিক করে ঘাটতি তিন হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হলো।

২. অবৈধ ভাবে নির্ধারিত ডিজেল ও ফার্নেস ওয়েলের বর্ধিত মূল্য এবং কুইক রেন্টালের বিদ্যুৎ অবৈধ ভাবে ক্রয়কৃত মূল্য বিইআরসি কর্তৃক পুনঃমূল্যায়নক্রমে নির্ধারিত যৌক্তিক বর্ধিত মূল্য ও পুনর্নির্ধারিত মূল্য পিডিবি’র পরিবর্তে সরকারি ভর্তুকি দ্বারা পরিশোধের প্রস্তাব করা হলো।

৩. লসে আরইবিকে বিদ্যুৎ দেয়ায় যে ঘাটতি, সে ঘাটতি সরকারি ভর্তুকি দ্বারা সমন্বয় হবে- এই মর্মে অত্র শুনানিতে ভোক্তা পক্ষের প্রস্তাব মতে আদেশের প্রস্তাব করা হয়।

৪. পিডিবি মুনাফাভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়। পিডিবি’র রাজস্ব চাহিদায় মুনাফা ও কর্পোরেট ট্যাক্স অন্তর্ভূক্তির ব্যাপারে বিইআরসি’র কারিগরি কমিটি (টিসি)’র প্রস্তাবে আপত্তি করা হয়।

৫. সরকারি, যৌথ ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্লান্টসমূহে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট ব্যয়সমূহে অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় চিহ্নিত ও পরিমাণ নির্ধারণ এবং প্রতিকারের লক্ষ্যে স্বার্থ সংঘাতমুক্ত পক্ষগণ প্রতিনিধি নিয়ে একটি কমিটির প্রস্তাব করে ক্যাব। এই প্রস্তাব নওপাজেপাকো’র খুলনা ডিজেল বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং যৌথ মালিকানাধীন পায়রা কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে প্রযোজ্য।

৬. আরই উন্নয়নের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বাজার আরই-এর জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড হতে হবে। সেজন্য বিইআরসি থেকে বিদ্যুৎ বিভাগে সুপারিশ প্রেরণের জন্য প্রস্তাব করা হলো।

৭. পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানে যে-পরিমান অর্থ বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল থেকে ইকুইটি বিনিয়োগ করা হয়, সে-পরিমান অর্থের অনুপাতিক শেয়ার ভোক্তাদের পক্ষে পিডিবি’কে দেয়ার আদেশের প্রস্তাব করা হলো।

৮. বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিলের অর্থ কেবলমাত্র পিডিবি’র গ্যাস ও আরই বিদ্যুৎ উন্নয়নে ভোক্তাদের ইকুইটি হিসেবে বিনিয়োগ নিশ্চিত করার প্রস্তাব করা হলো।

৯. আরইবি ও সামিট পাওয়ার লি: এর সাথে সম্পাদিত অবৈধ সম্পূরক চুক্তি বাতিলের জন্য আরইবিকে আদেশ প্রদানের প্রস্তাব করা হলো।

১০.বিইআরসি’র নিকট পেশকৃত ক্যাবের সকল অভিযোগ জরুরি ভিত্তিতে নিষ্পিত্তি করার প্রস্তাব করা হলো।

১১. বিদ্যু খাতে সুশাসন, দক্ষতা ও সক্ষমতা উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ খাতের প্রতিটি লাইসেন্সের প্রায় শতভাগ শেয়ারের মালিক পিডিবি। তাই এসব লাইসেন্সীদের ওপর পিডিবি’র কর্তৃত্ত্ব এবং পিডিবি ও বিইআরসি’র তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং বিইআরসি’র নিকট পিডিবি’র জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যুৎ খাতকে স্বার্থ সংঘাতমুক্ত হতে হবে। তাই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত প্রশাসনকে আমলামুক্ত করার প্রস্তাব করে ক্যাব।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) ৬৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল। এর বিপরীতে ৫৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করে কারিগরি টিম। পাইকারি রেটে প্রতি ইউনিট ৩ টাকা ৩৯ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় বিউবো। অন্যদিকে এ প্রস্তাবের বিপরীতে ২ টাকা ৯৯ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করে কারিগরি টিম।

বর্তমানে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পাইকারি রেটে ইউনিট প্রতি বিক্রি করছে ৫ টাকা ১৭ পয়সা। সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে আরও ৩ টাকা ৩৯ পয়সা। কিন্তু ভর্তুকিবিহীন প্রতি ইউনিট বাড়িয়ে ৮ টাকা ৫৬ পয়সা করার প্রস্তাব দেয় বিউবো। বিপরীতে ৮ টাকা ১৬ পয়সা করার সুপারিশ করেছে বিইআরসি।