ভ্যাট প্রত্যাহার হলেও সহসাই কমছে না ভোজ্যতেলের দাম

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: সয়াবিন তেলের আমদানি এবং ভোক্তা পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু সহসাই তেলের দামে এ সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, বাজারে থাকা তেলের সম্পূর্ণ ভ্যাট ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংগ্রহ করেছে, নতুন করে বন্দরে তেল না আসা পর্যন্ত বাজারে এই সিদ্ধান্তের ফল দেখা যাবে না।

বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) সরকারি ক্রয় কমিটিতে ট্রেড করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য একাধিক নিত্যপ্রয়োজনীয় ক্রয়ের প্রস্তাব শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জানান, দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে ভোজ্যতেলসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার করা হচ্ছে। পরে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম ভোজ্যতেলে ৩০ জুন পর্যন্ত আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করা হয়েছে বলে জানান।

তবে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে তেলের মজুদ নিয়ে কারসাজির যেসব অভিযোগ আসছে তার সবটাই সত্য নয়। আর অর্থমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী যদি তেলের ওপর আরোপিত ভ্যাট কমানোও হয়, তবু সহসাই বাজারে এর প্রভাব পড়বে না। কারণ যেসব তেল ইতোমধ্যে বন্দর থেকে খালাস হয়ে গেছে এবং বাজারে আছে, সেগুলোতে কোনো দাম কমানোর সুযোগ নেই। ফলে নতুন করে বন্দরে তেল না ঢোকা পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তের প্রভাব বাজারদরে পড়বে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন তেল ব্যবসায়ী বলেন, ‘আপনারা এনবিআরের কাছে ভ্যাট কমানোর কাগজ চান। কাগজ না দেখে কিছু বলার সুযোগ নেই। কারণ এখনো এমন কোনো নির্দেশনাই আমরা পাইনি। মিডিয়াতে তেলের দামের বিষয়ে যেভাবে আসছে তার কিন্তু তেমন ভিত্তি নেই।’

শীর্ষস্থানীয় ভোজ্যতেল বিপণনকারী সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘আমরা এখন ১৬৮ টাকা লিটার বোতলজাত তেল বিক্রি করছি। আমরা ভোক্তাদের আজও ফ্যাক্টরি ঘুরিয়ে দেখিয়েছি, আমাদের যে পরিমাণ তেল আছে তা আমরা বাজারে দিচ্ছি। আমাদের কমিটমেন্ট আমরা রাখছি। তবে এনবিআর থেকে এখনো কোনো কাগজ পাইনি। পেলে নতুন কোনো দাম নির্ধারণ করা যাবে কি না সেটি হিসাব করে জানাতে পারবো।’

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের মার্কেটে বা রিফাইনারিতে (পরিশোধনাগারে) এখন যে তেল আছে এনবিআর কিন্তু সেসব তেলের ভ্যাট কেটে নিয়েছে। এখন বন্দরে যেসব তেল ঢুকবে সেখানে তেলের দাম ১৪শ’ ডলার হলে বাজারে কত টাকা হবে বা দুই হাজার ডলার হলে বাজারে কত টাকা হবে, সেগুলোর ওপর ডিপেন্ড (নির্ভর) করবে। সেই তেল ঢোকার পর রিফাইন (পরিশোধিত) হয়ে মার্কেটে আসবে। এটা ডিপেন্ড করছে নতুন করে রিফাইনারিরা কখন এই তেল বাজারে ঢোকাবে।’

সহসাই বাজারে তেলের দাম কমবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তেলের দাম ১৬৮ টাকা লিটার নির্ধারণ করেছিলাম যখন ১৩শ’ ৬০ ডলার রেট ছিল, এখন যদি তাদের আমদানি দর পড়ে ১৬শ’ ডলার, তাহলে সে অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করবো। ভ্যাট যেটা ১৫ শতাংশ মওকুফ হবে সেটা বাদ দিয়ে হয়তো ১৮০ টাকা লিটারও হতে পারে বা ১৬৮ টাকাও লিটার থাকতে পারে। তাদের কত টাকার মাল ঢুকছে সেটার ওপর নির্ভর করে। সাধারণ মানুষ মনে করতে পারে ভ্যাট মওকুফের পরও তারা ফল পাচ্ছে না, কিন্তু বাস্তবতা হলো তেল দেশে আসার সময় রেট অনুযায়ী বাজারের দাম নির্ধারণ করা হয়। তবে তেলের দামে সাইকোলজিক্যালি এখন কিছুটা প্রভাব পড়বে। যারা (মজুতদার) তেল ধরে রেখেছিল তারা ভাববে এখন সেই (নতুন) তেল বাজারে ঢুকলে দাম কমবে, সেজন্যই হয়তো এখন দ্রুত বাজারে তেল ছেড়ে দেবে। তাহলেই মার্কেটে কম্পিটিশন (প্রতিযোগিতা) হবে এবং দামে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।’

সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, বাজারে এখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৩ টাকা। বোতলজাত সয়াবিনের পাঁচ লিটার তেলের দাম ৭৯৫ টাকা এবং পাম তেলের দাম ১৩৩ টাকা।

২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ছিল ১৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল ছিল ১৩৬ টাকা। আর বোতলজাত সয়াবিনের পাঁচ লিটার তেলের দাম ছিল ৭৬০ টাকা এবং পাম তেলের দাম ছিল ১১৮ টাকা।