মার্চে অপরাধ বেশি তেজগাঁও-ওয়ারীতে, বেশি খুন ওয়ারী-মিরপুর-গুলশানে

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্কঃ

রাজধানীতে গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে মার্চে বেড়েছে খুন, ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি। একই সঙ্গে বেড়েছে অপরাধের মামলা। মার্চে খুনের ঘটনা বেশি ঘটেছে ডিএমপির ওয়ারী, মিরপুর ও গুলশান বিভাগে।

সার্বিকভাবে তেজগাঁও ও ওয়ারী বিভাগে অপরাধের ঘটনা বেশি ঘটেছে। গুলশান বিভাগে ঘটেছে গরু চুরির ঘটনাও। ভাসমান মানুষ বসবাসকারী এলাকায় সব ধরনের অপরাধ বেশি। এপ্রিলের পূর্ণাঙ্গ পরিসংখ্যান এখনো না পাওয়া গেলেও অপরাধের মাত্রা বাড়তি বলেই জানা যায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মামলার উপাত্ত বিশ্লেষণে এ চিত্র উঠে এসেছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চের অপরাধচিত্র বিশ্লেষণ করে ডিএমপির কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীর যেসব এলাকায় নিম্ন আয় ও ভাসমান মানুষের বসবাস বেশি, সেখানে অপরাধের ঘটনা বেশি ঘটে। এর বহুমুখী কারণ রয়েছে। তবে বড় কারণ দারিদ্র্য ও অপরাধপ্রবণতা। রয়েছে কিশোর অপরাধও।

সম্প্রতি ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি করে তাদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে বড় অংকের টাকা উত্তোলন কিংবা গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিবহনের ক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে।

পাশাপাশি ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি করে তাদের গ্রেফতারের নির্দেশনাও দেন তিনি।

মার্চে ডিএমপিতে মামলার উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে-

রাজধানীর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ৫০টি থানাকে আটটি অপরাধ বিভাগে ভাগ করে কাজ করে ডিএমপি। বিভাগগুলো হলো- রমনা, লালবাগ, ওয়ারী, মতিঝিল, তেজগাঁও, মিরপুর, গুলশান ও উত্তরা। তাই ওয়ারী, মিরপুর ও গুলশান বিভাগে খুনের যে হিসাব, তা শুধু ওই থানাগুলোতেই নয়, বরং ওয়ারী, মিরপুর ও গুলশান বিভাগের মধ্যে সবগুলো থানার হিসাব।

ডিএমপির এই আট বিভাগে মার্চ মাসে অপরাধের মামলা হয়েছে দুই হাজার ৬৪৬টি। সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে মাদক নিয়ে। এরপর রয়েছে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, দস্যুতা ও নারী নির্যাতনের মামলা। রাজধানীতে মার্চে ১৭টি খুনের ঘটনা ঘটে, যা আগের মাসের চেয়ে পাঁচটি বেশি। পুলিশ বলছে, মার্চে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ১৯৯টি মামলা হয়েছে, যা আগের মাসের চেয়ে বেশি ৫৮টি।

বিভিন্ন অপরাধে মার্চে সব মিলিয়ে গ্রেফতার করা হয় পাঁচ হাজার ২২৯ জনকে। আগের মাসের সংখ্যাটি ছিল ৪ হাজার ৩৫৯।

ডিএমপির হিসাব বলছে, রাজধানীতে অপরাধ দমন করতে গিয়ে মার্চে ১২ পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গুলশান বিভাগে। ফেব্রুয়ারিতে ডিএমপির আট বিভাগে বিভিন্ন অপরাধের মামলা হয় দুই হাজার ৪৭৫টি। ফেব্রুয়ারিতে ১২টি খুনের ঘটনা ঘটে। নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ১৪১টি মামলা হয়।
তার আগের মাস অর্থাৎ জানুয়ারিতে ডিএমপির আট বিভাগে বিভিন্ন অপরাধের মামলা হয় দুই হাজার ৫৪৮টি। জানুয়ারিতে ৯টি খুনের ঘটনা ঘটে। আর নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ১৭০টি মামলা হয়।

খুন বেশি ওয়ারী, মিরপুর ও গুলশানে
ঢাকা মহানগরীতে গত মার্চে যে ১৭টি খুনের ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে তিনটি হয়েছে ডিএমপির ওয়ারী বিভাগে, তিনটি মিরপুরে, তিনটি গুলশানে, দুটি মতিঝিলে, দুটি উত্তরায়, দুটি তেজগাঁওয়ে, একটি লালবাগে ও রমনায় একটি।

শুধু মার্চে নয়, আগের মাস ফেব্রুয়ারি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওয়ারী, মিরপুর ও গুলশান বিভাগে খুনের ঘটনা বেশি। সবচেয়ে বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছিল মিরপুর ও গুলশান বিভাগে। যথাক্রমে পাঁচ ও তিনটি করে খুন হয়। জানুয়ারিতে খুনের ঘটনা ঘটে ৯টি, সবচেয়ে বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছিল ওয়ারী বিভাগে তিনটি।

ডিএমপির ওয়ারীর উপ-পুলিশ কমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ওয়ারী বিভাগের আওতাধীন কদমতলী ও শ্যামপুর এলাকায় প্রচুর ভাসমান মানুষ বসবাস করে। ছিন্নমূল এসব মানুষ নানা অপরাধের শিকার হয়। আবার নিজেরাও অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

পুলিশ বলছে, ডিএমপির মিরপুর বিভাগে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ বসবাস করে। সেখানেও নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস বেশি। পল্লবী থানা এলাকায় বিহারি ক্যাম্প রয়েছে। মিরপুরের বিভিন্ন জায়গায় মাদকের আখড়া। সবমিলিয়ে সেখানে খুন ও ধর্ষণের মতো অপরাধ বেশি।

ডিএমপির গুলশান বিভাগে পড়েছে বাড্ডা ও ভাটারা থানা। বনানীর সাততলা বস্তি ও কড়াইল বস্তিও এর আওতাধীন। পুলিশ বলছে, বাড্ডা ও ভাটারায় জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধ ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে খুনোখুনির ঘটনা বেশি ঘটে। বাড্ডায় কয়েকটি ভাড়াটে খুনির দল রয়েছে। বিদেশ থেকে কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী এসব দল পরিচালনা করে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করায়।