শূন্য থেকে সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকার পুঁজিবাজার

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উন্নয়নের রোল মডেলে বাংলাদেশ। দেশের সার্বিক অর্থনীতি ত্বরান্বিত করতে ৪৫ বছর ধরে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে পুঁজিবাজার। স্বাধীনতার পাঁচ বছর পর মাত্র ১৩ কোটি টাকায় শুরু হওয়া এ বাজারের আকার বর্তমানে দাঁড়িয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকায়।

দিন যত যাচ্ছে দেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের অবদান তত বাড়ছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানও এখন তালিকাভুক্ত হচ্ছে এখানে। দেশের সাধারণ মানুষও উন্নয়নের মালিকানায় অংশীদার হচ্ছেন।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ বছর পর ১৯৭৬ সালে প্রথমবারের মতো ডিএসই’র কার্যক্রম শুরু হয়। ওই সময় তালিকাভুক্ত মাত্র নয়টি প্রতিষ্ঠানের বাজার মূলধন ছিল ১৩ কোটি টাকা। গত ৪৫ বছরে এ বাজারে আরও ৬১৫টি প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ বছর পর ১৯৭৬ সালে প্রথমবারের মতো ডিএসই’র কার্যক্রম শুরু হয়। ওই সময় তালিকাভুক্ত মাত্র নয়টি প্রতিষ্ঠানের বাজার মূলধন ছিল ১৩ কোটি টাকা। ৪৫ বছরে এ বাজারে আরও ৬১৫টি প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকায়। বাজারটিতে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ও বেক্সিমকো লিমিটেডের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হয়েছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের দেখাদেখি গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা ও ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকোর মতো বিদেশি প্রতিষ্ঠানও তালিকাভুক্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে দেশি-বিদেশি ৩৭৫টির বেশি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।

এছাড়া ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ২২২টি ট্রেজারি বন্ড ও দুটি করপোরেট বন্ড এবং আটটি ডিভেঞ্চারসহ মোট ৬১৫টি প্রতিষ্ঠান এ বাজারের তালিকাভুক্ত। ফলে ডিএসই’র বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকায়। এতে একদিকে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে মানুষের অংশগ্রহণ যেমন বাড়ছে, তেমনি লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের সুনাম বাড়ছে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে তেমন কোনো অবকাঠামো ছিল না। স্বাধীনতার পাঁচ বছর পর নয়টি প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তির মাধ্যমে ১৯৭৬ সালের ১৬ আগস্ট যাত্রা শুরু হয় পুঁজিবাজারের। তবে সর্বপ্রথম ১৯৫৪ সালের ২৪ এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ নামে যাত্রা শুরু হয় প্রতিষ্ঠানটির। এরপর নাম পরিবর্তন করে ১৯৬৪ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) নামে পথচলা শুরু করে এটি।

১৯৭৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাজারটির আকার ছিল খুবই ছোট। ১৯৯০ এর পর দেশে কলকারখানা চালু হতে থাকে। উদ্যোক্তাদের প্রয়োজন হয় অর্থের। তারা ব্যাংক ঋণের বিপরীতে বিনা সুদে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও পরিচালনা করতে থাকেন। এরপর বাজারটি সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করতে ১৯৯৩ সালে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন গঠন করা হয়। যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নামে পরিচিতি পায়।

অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পুঁজিবাজার এখন একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। এটি যে দেশের সার্বিক অর্থনীতির মূল উৎস, তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।
শেয়ার হোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য গঠিত কমিশনের দুই বছর পর ১৯৯৫ সালে প্রতিযোগিতামূলক পুঁজিবাজার গঠনের লক্ষ্যে চট্টগ্রামকেন্দ্রিক আরও একটি পুঁজিবাজার গঠন করা হয়। যার নাম রাখা হয় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)।