সড়কে ফিটনেসবিহীন সাড়ে ৫ লাখ গাড়ি, বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:

ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। দফায় দফায় কর মওকুফের পরও মালিকরা গাড়ির ফিটনেস হালনাগাদ করছেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব গাড়িতে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। বারবার অভিযানে নেমেও কমছে না এ ধরনের গাড়ির সংখ্যা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্রে জানা গেছে, দেশে ফিটনেসবিহীন গাড়ি রয়েছে অন্তত পাঁচ লাখ ৪০ হাজার ৭৭টি (৩০ নভেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত)। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এমন গাড়ি ছিল চার লাখ ৮১ হাজার ২৯টি।

কেন ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানাগেছে,  ফিটনেসবিহীন গাড়ির মালিকদের খুদে বার্তা বা এসএমএসের মাধ্যমে ফিটনেস হালনাগাদের জন্য নিয়মিত তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। সংস্থাটির বিভিন্ন সার্কেল কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, তাদের পক্ষ থেকে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অর্থদণ্ড, কারাদণ্ড, ডাম্পিংসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তারপরও মালিকদের একটি বড় অংশ বিষয়টি কর্ণপাত করছেন না।

এ বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এসব গাড়ির মালিকদের অর্থদণ্ড করা হচ্ছে। ১০ বছর বা এর বেশি সময় ধরে ফিটনেসবিহীন গাড়ির তথ্য বিআরটিএ’র ভান্ডার থেকে ধাপে ধাপে মুছে ফেলা হচ্ছে।

বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের জুলাই থেকে তিন দফায় জরিমানা ছাড়াই কর দিয়ে ফিটনেস হালনাগাদের নির্দেশনা জারি করা হয়। এরপরও গাড়ির মালিকদের একটি অংশ নিয়মিতভাবে কর দিচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ অভিযান জোরদারের পাশাপাশি অন্য তদারকি কার্যক্রমও হাতে নিয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবে, ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর অন্যান্য কারণের মধ্যে ছিল ৬৬ হাজার ৬৬১টি অনুপযোগী (ফিটনেসবিহীন) গাড়ি। এখনও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ এটি। ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ ফিটনেসবিহীন গাড়ি। ভারী গাড়ির ফিটনেস তুলনামূলকভাবে কম। আমরা আমাদের গবেষণায় দেখতে পেয়েছি, ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ভারী গাড়ি বাস ও ট্রাকের সংশ্লিষ্টতা ছিল ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২০ সালে তা বেড়ে হয় ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ফিটনেসহীন এমন গাড়ি বেড়ে যাওয়ায় সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যাও বাড়ছে।

বিআরটিএ প্রধান কার্যালয়ের পরিদর্শন ও পরীক্ষা ছাড়া কোনো গাড়ির ফিটনেস সনদ দেওয়া হচ্ছে কি না, তা তদারকিতে কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার গত ২৯ নভেম্বর এ সংক্রান্ত আদেশপত্র জারি করেন।

‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ এর ২৫ ধারা অনুযায়ী, বিআরটিএ থেকে মোটরযানের ফিটনেস সনদ নেওয়ার বিধান রয়েছে। তারপরও ১০ বছরের বেশি সময় ধরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মোটরযানের ফিটনেস নবায়ন করা হয়নি। এ অবস্থায় মোটরযান মালিকদের স্ব-স্ব মোটরযানের ফিটনেস নবায়নের জন্য অনুরোধ করে বারবার আদেশ দিয়েছে বিআরটিএ।