৪০ ধরনের সেবা প্রাপ্তিতে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: আয়কর নির্দেশিকা ২০২২-২০২৩ অনুযায়ী করযোগ্য আয় করা ছাড়াও ৪০ ধরনের সেবা প্রাপ্তিতে একজন ব্যক্তির আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

যার মধ্যে রয়েছে- গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে অবশ্যই রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। শুধু তাই নয়, রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকারের প্রমাণ দেখাতে না পারলে বিচ্ছিন্ন করা হবে করদাতার গ্যাস কিংবা বিদ্যুতের লাইন।

রিটার্ন দাখিলের ব্যর্থতায় চাকরিজীবী করদাতাদেরও বেতন-ভাতা প্রাপ্তিতে অসুবিধার মুখোমুখি হতে হবে। করের আওতা বৃদ্ধিতে নতুন নতুন উদ্যোগগুলোকে বাস্তবায়ন করতেই সরকার এমন কঠিন পথে হাঁটছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। পাশাপাশি রিটার্ন দাখিলের ব্যর্থতায় সুদ ও জরিমানার যে বিধান রয়েছে সে নির্দেশনাও রয়েছে নতুন আয়কর নির্দেশিকায়।

জরিমানা ও সুদ আরোপের বিষয়ে এনবিআরের ইস্যু করা আয়কর নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে আয়কর অধ্যাদেশের ১২৪ ধারা অনুযায়ী এক হাজার টাকা অথবা আগের বছরের ট্যাক্সের ১০ শতাংশ জরিমানা করা যাবে। এ দুটির ভেতরে যেটি পরিমাণে বেশি সেই অঙ্কটি জরিমানা হতে পারে। 

এছাড়াও ৭৩ ধারা অনুযায়ী, জরিমানা ছাড়াও যতদিন ধরে তিনি রিটার্ন দেননি ওই পুরো সময়ের দিনপ্রতি ৫০ টাকা করে জরিমানা হতে পারে। তবে তা যত দিনই হোক না কেন নতুন করদাতা হলে সবমিলিয়ে জরিমানার পরিমাণ পাঁচ হাজার টাকার উপরে নেওয়া হবে না। আর পুরানো করদাতা হলে আগের বছর যে পরিমাণ অর্থ আয়কর হয়েছে সেটিসহ ওই অর্থের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি দিতে হতে পারে। এবং ৭৩-এ ধারা অনুযায়ী, ২ শতাংশ বিলম্ব সুদ আরোপ হবে। সেই সঙ্গে যতদিন দেরি হবে, প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা হারে বাড়তি মাশুল গুনতে হবে।

অন্যদিকে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করা সম্ভব না হলে করদাতা রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য নির্ধারিত ফরমে উপযুক্ত কারণ উল্লেখ করে উপ-কর কমিশনারের কাছে সময়ের আবেদন করতে পারেন। উপ-কর কমিশনার কর্তৃক মঞ্জুর করা বর্ধিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করলে করদাতার ওপর জরিমানা আরোপিত হবে না। তবে অতিরিক্ত সরল সুদ ও বিলম্ব সুদ আরোপিত হবে।

আর আগে চলতি বছরের ০৯ জুন জাতীয় সংসদে করযোগ্য বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে করের আওতায় আনা এবং আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা বাড়াতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে ছয়টি বিশেষ প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে যা সংসদে পাস করা হয়।

প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ উপস্থাপন বাধ্যতামূলক করা; স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড, অনুমোদিত গ্র্যাচুইটি ফান্ড, পেনশন ফান্ড, অনুমোদিত সুপার এনুয়েশন ফান্ড এবং শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ছাড়া অন্যান্য ফান্ডের রিটার্ন দাখিল; যেসব এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ভার্সন চালু রয়েছে তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের বিধান প্রবর্তন; অনস্পট কর নির্ধারণের বিদ্যমান বিধানকে কেবলমাত্র গ্রোথ সেন্টারগুলো সীমাবদ্ধ না রেখে সব পর্যায়ে এর প্রয়োগ বিস্তৃত করা; ধারাবাহিক তিন বছর বা ততোধিক সময়ব্যাপী কোনো কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ থাকলে পরিচালকদের কাছ থেকে বকেয়া অবিতর্কিত কর আদায়ের বিধান করা এবং সরকারের অবিতর্কিত রাজস্ব দাবি পরিশোধে ব্যর্থ হলে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিধান প্রবর্তন।