মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার বেরোবি শিক্ষার্থীদের

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ১ নম্বর ও ২ নম্বর গেট সংলগ্ন লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম-রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের নেই কোনো ফুটওভার ব্রিজ। অপরদিকে গতিরোধকগুলো ক্ষয়ে যাওয়ায় দ্রুত গতিতে চলে সবধরণের পরিবহন। এতে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত ব্যস্ত সড়কটি পার হচ্ছে হাজারো শিক্ষক-শিক্ষার্থী। ফলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে শঙ্কা করছেন অনেকেই।

শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধার অভাবে অধ্যয়নরত প্রায় সাড়ে আট হাজার শিক্ষার্থীর অধিকাংশই এই ঝুঁকিপূর্ণ মহাসড়কের ওপারের মেসগুলোতে অবস্থান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশের জন্য ব্যবহৃত দুটি ফটকই এই সড়কের সাথে হওয়ায় পারাপারে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি।

সরেজমিনে দেখা যায়, বুড়িমারী ও সোনাহাট স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সংযোগকারী একমাত্র এই মহাসড়কে প্রতি মুহূর্তে ভারী যানবাহন পাল্লা দিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নম্বর ও ২ নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকায় এই রাস্তায় রয়েছে ত্রিমুখী সংযোগস্থল। এখানে দুর্ঘটনার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, অথচ এই স্থানে নেই কোন গতিরোধক। নামে মাত্র কয়েকটি জায়গায় গতিরোধক থাকলেও ক্ষয়ে যাওয়ার কারণে সেগুলো কার্যকারিতা হারিয়েছে অনেক আগেই। এতে করে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া আহসান বলেন, ২০১৫ সালে কয়েকটি দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর রাস্তার উপরে যে গতিরোধক দেওয়া হয়েছিল সেগুলোও এখন আর নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে হচ্ছে আমাদের।’

রসায়ন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী কবির আনাম বলেন, ‘রাস্তায় গতিরোধক না থাকায় গাড়ির চালকরা আমাদের দিকে খেয়াল করে না। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর রাস্তা পার হতে হয়, তাও ঝুঁকি নিয়ে। আমরা যেন নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারি তার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’

ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী লাভলী জান্নাত বলেন, ফুটওভার ও গতিরোধক না থাকায় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় গাড়িগুলোর গতি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ দ্রুত গতিরোধ নিমার্ণ এবং ট্রাফিক পুলিশ রাখার ব্যবস্থা করুন।

লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক জুবায়ের ইবনে তাহের বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে অর্থাৎ ক্যাম্পাসের ভেতরে একজন ছাত্রের মৃত্যু ঘটেছে, এ ধরনের ঘটনা যেন কোনো শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে না ঘটে। সে ব্যাপারে আমাদের এখনি সচেতন হতে হবে। যেহেতু পার্কমোড় এলাকাটি সবসময় শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে, এই জায়গাটিতে কোনো যানবাহন ১০ কি.মি. অধিক বেগে চলাচল করা উচিত বলে মনে করিনা। অথচ দেখছি, লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কটি বাস-ট্রাকগুলো ৫০ থেকে ৬০ কি:মি: বেগে ছুটে চলছে। যা অত্যান্ত বিপদজনক এবং শিক্ষার্থীদের জীবনের জন্য হুমকি স্বরুপ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রব্বানী বলেন, ‘প্রশ্নটা যখন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার, তখন ন্যূনতম সময় নষ্ট না করে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এ ব্যাপারে কথা বলব। এজন্য যা যা করা দরকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা করবে।’

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগ রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলমের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ‘যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের সামনে স্পিড ব্রেকার নির্মাণের প্রয়োজন হয়। তাহলে জেলা প্রশাসন কিংবা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর আবেদন করতে হবে। আবেদন গৃহীত হলে আমরা এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’