ভাঙনের মুখে তিন গ্রাম তুলা হচ্ছে অবৈধভাবে বালি

অবৈধভাবে বালি তোলায় শহর রক্ষা বাঁধসহ তিন গ্রাম ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় অবৈধভাবে এসব বালি তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হলেও থামানো যাচ্ছে না বালিখেকো সিন্ডিকেটের তত্পরতা।

সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দিয়াকুল, দেউরি ও ধানসিড়ি ইউনিয়নের কিস্তাকাঠি গ্রাম নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছে । লঞ্চঘাট ও এসব গ্রামের আশপাশে নদীতে ড্রেজার বসিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত বালি তোলা হচ্ছে। ফলে লঞ্চঘাট এলাকার শহর রক্ষা বাঁধটিও হুমকির মুখে।

ঝালকাঠি শহরে ১৬ জনের একটি চক্র এ বালি তোলার সঙ্গে জড়িত। চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করেন শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল হক খলিফা ও তার ছেলেরা। তাদের প্রত্যেকের বালি তোলার অনুমোদনহীন খননযন্ত্র-ড্রেজার ও বালি বহন করার বাল্কহেড রয়েছে। ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুগন্ধা নদী থেকে বালি তোলার জন্য বালুমহাল ঘোষণা বা কাউকে ইজারা না দেয়া সত্ত্বেও একটি চক্র প্রভাবশালীদের নাম ভাঙিয়ে অবৈধভাবে বালি তুলছে। প্রতিদিন খননযন্ত্রের সাহায্যে ৪০/৫০টি বালিবাহী বাল্কহেড ভর্তি করে পুকুরসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভরাটের কাজে সুগন্ধা নদীর বালি বিক্রি হচ্ছে।

কয়েকজন বালি ব্যবসায়ী জানান, বালি তোলার ব্যবসার জন্য তিন ধরনের নৌযান ও খননযন্ত্র রয়েছে। নদী থেকে বালি তোলার জন্য রয়েছে খননযন্ত্র, এ বালি নিয়ে যাওয়ার জন্য রয়েছে নৌযান (বাল্কহেড) এবং নৌযান থেকে পুকুর, জলাশয় ও স্থাপনা ভরাটের জন্য রয়েছে আরেকটি যন্ত্র। বালি তোলার ক্ষেত্রেও ব্যবসায়ীরা সামর্থ্য অনুযায়ী এ তিন ভাগে বিনিয়োগ করেন। ফুটপ্রতি বালিতে সিন্ডিকেট নেতারা ২০/৩০ পয়সা করে আদায় করেন। এতে দৈনিক কয়েক লক্ষাধিক টাকা আয় হয়। এ টাকা দিয়ে প্রশাসনসহ সবাইকে ম্যানেজ করা হয়।

যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল হক খলিফা বলেন, সুগন্ধা নদী থেকে যদি বালি না তোলা হয়, তবে সরকারের সব উন্নয়ন কাজ বন্ধ থাকবে। আমরা বৈধভাবে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে সুগন্ধা নদী থেকে বালি তোলার জন্য সুনির্দিষ্ট জায়গা থেকে বালুমহাল হিসেবে ইজারা নিতে চাই। এতে সরকারের রাজস্ব আয় হবে।

স্থানীয়রা জানায়, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এখন রাতেও খননযন্ত্রের মাধ্যমে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। তাই হুমকির মুখে পড়েছে লঞ্চঘাট শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ, কুতুবনগর বাসস্ট্যান্ড, কিস্তাকাঠি সাইক্লোন শেল্টার, শতশত বসতবাড়ি, দেউরি গ্রামের প্রায় ৫০০ একর আবাদি জমি এবং দিয়াকুল খেয়াঘাট এলাকার চলাচলের সেতু। এরই মধ্যে নদীতে ভেঙে গেছে কিস্তাকাঠি জামে মসজিদ ও খেয়াঘাট, দিয়াকুলের মসজিদ, মাদ্রাসা ও কয়েক হাজার একর ফসলি জমি।

দিয়াকুল গ্রামের ইউপি সদস্য শাহিন আকন বলেন, আমার বাড়িও নদীর কাছাকাছি চলে এসেছে। আগে দিনে বালি উত্তোলন হলেও এখন রাতেই বেশি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপেও বন্ধ না হওয়ায় অবৈধ বালি উত্তোলন রোধে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী, পানি সম্পদমন্ত্রী, র্যাবের আইন শাখাসহ বিভিন্ন স্থানে এলাকাবাসীর স্বাক্ষরিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। এর আগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে দিনের বালি তোলার তত্পরতা বন্ধ করা হয়েছে। রাতে অভিযানের প্রস্তুতি নিয়ে সেখানে যাওয়ার আগেই তারা পালিয়ে যায়। তাই বালি উত্তোলন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি চলছে।