বিদ্যুৎ সরবরাহে অগ্রাধিকার পাবে শিল্প-কৃষিখাত: জ্বালানি উপদেষ্টা

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: চলমান বিদ্যুৎ রেশনিংয়ে শিল্প ও কৃষিখাত অগ্রাধিকার পাবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। 

বৈশ্বিক সংকটকালে দেশের অর্থনীতিকে চাঙা রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি (এফবিসিসিআই) কার্যালয়ে ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ তথ্য জানান ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।

তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদ্যুৎ রেশনিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কৃষি ও শিল্পখাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতেই এ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এ সময় আবাসিক গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান জ্বালানি উপদেষ্টা। একই সঙ্গে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ারও তাগিদ দেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, শিল্প ও সেবাখাতে সরকারের আলাদা নজর রয়েছে। বিদ্যুৎ রেশনিংয়ে শিল্প এলাকা বিবেচনায় লোডশেডিংয়ের পরিকল্পনা করা হলেও আবাসিক এলাকায় কিছু শিল্পকারখানা থেকে যায়।

‘আবাসিক এলাকার এসব শিল্প কারখানা লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে কোনো কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর অনুরোধ করা হচ্ছে।’

স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সরকারের উচিত কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেওয়া। বিশ্বের অনেক দেশেই পরিবেশ ঠিক রেখে কয়লাভিক্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। বাংলাদেশও সেদিকে যেতে পারে।

তিনি বলেন, শিল্পোন্নত দেশগুলোর অনেকেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফিরে যাচ্ছে। বাংলাদেশেরও কয়লা অনুসন্ধান-উত্তোলনে জোর দেওয়া উচিত।

এফবিসিসিআই সভাপতি একই সঙ্গে গ্যাসসংকট মোকাবিলায় স্থলের পাশাপাশি, সমুদ্রেও অনুসন্ধান পরিচালনা ও কূপ খননের তাগিদ দেন। এ লক্ষ্যে বাপেক্সকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- এফবিসিসিআইয়ের প্যানেল উপদেষ্টা ও বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন।

তিনি জানান, দেশের শিল্পখাত চাহিদা অনুসারে গ্যাস পাচ্ছে না। এতে শিল্পের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ওপর একক নির্ভরতা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যাপকভিত্তিতে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা, বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার বাড়ানো বিশেষ করে, নিজস্ব কয়লার ব্যবহার বাড়ানো, সাশ্রয়ী জ্বালানি কৌশল ব্যবহারের পরামর্শ দেন অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন।

সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভূতত্ত্ব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম স্থল ও সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন।

কয়লাভিক্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি সমুদ্রে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে গ্যাসের অনুসন্ধানের আহ্বান জানান এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও এমসিসিআইয়ের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম।

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ভোলার গ্যাসক্ষেত্র থেকে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে বলে জানান বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী।

তিনি আরও জানান, ২০২৫ সাল নাগাদ আরও ৬১৮ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এজন্য তিনি দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা ও পার্বত্য চট্টগ্রামে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে পাঁচটি অনুসন্ধান কূপ খনন পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন।

সেমিনারে অংশ নেওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান- এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী।

অন্যদের মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন আলমগীর, মো. হাবীব উল্লাহ ডন, মহাসচিব মাহফুজুল হক, সংগঠনটির একাধিক পরিচালক, বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।