সম্পূর্ণ গ্যাস সেক্টরকে দেউলিয়া করে ফেলা হয়েছে: এম শামসুল আলম

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পুরো গ্যাস সেক্টরটা প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে দাবি করে কনজুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেছেন, সম্ভাবনা নেই এমন সব ব্লকে বাপেক্সে নামিয়ে ভোক্তার টাকা খরচ করে সম্পূর্ণ গ্যাস সেক্টরকে দেউলিয়া করে দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ভোক্তারা যে গ্যাস ব্যবহার করে তার থেকে অতিরিক্ত টাকা দেন। সেই টাকার পরিমান প্রায় দেড় থেকে ২ হাজার কোটি। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানী লিঃ (বাপেক্স) এর ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান করতে এবং নিজেরাই শতভাগ গ্যাস উত্তোলনে সক্ষমতা অর্জন করবে, সেই লক্ষ্যে এই টাকা দেয়া হয়েছে। ৫ বছরের জন্য একটি পরিকল্পনা জমা দিয়ে সেই টাকা খরচ করার কথা। সেই পরিকল্পনা পেট্রো বাংলা, জ্বালানি বিভাগ কেউ জমা দেয়নি। এই টাকা তারা নিজেরা নিয়ে চলে গেছে। এখন তারা সেই টাকাকে ৩ শতাংশ সুদে খরচ দেখাচ্ছে এবং দায় দেখাচ্ছে। সম্ভাবনা নেই এমন সব ব্লকে বাপেক্সে নামানো হচ্ছে, তাদের খরচ হচ্ছে, গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। এমন সব যুক্তি দেখিয়ে তারা দাবি করছে তারা ঋণগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে পুরো গ্যাস সেক্টরকে দেউলিয়া করে দেয়া হচ্ছে। পুরো গ্যাস সেক্টরটা প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধি এবং বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সুপারিশ যৌক্তিকতা নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

এম শামসুল আলম বলেন, ২০১৫ সালের অবৈধ গ্যাস সংযোগ, গ্যাস চুরি, বাসা বাড়িতে মিটার ছাড়া যে সমস্ত গ্যাস গেয়া হয়, তাদের গিয়ে ধরা হয় এবং দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়। তার তুলনায় অর্ধেক গ্যাসও তারা খরচ করে না। অর্ধেক গ্যাস সেখানে খরচ হলে বাকি অর্ধেক গ্যাস বিভিন্ন সংযোগের মাধ্যমে চুরি করে। বিআরইসির হিসেবে বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা এভাবে চুরি হয়। ২০১৫ সালে যখন গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলো তখন আমরা প্রস্তাব করলাম, যে এই গ্যাস চুরিকে বন্ধ করতে হবে। তখন তারা দুটি আদেশ দেয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার লাগাতে হবে। ইন্ডাস্ট্রিতে গ্যাসের ইভিসি মিটার লাগানোর কথা বলা হয়। সেখানে গ্যাসের প্রেসার থাকে না। স্বাভাবিকভাবেই গ্যাস কম থাকলে গ্যাসের প্রেসার কমে যায়। প্রেসার কম থাকায় ইন্ডাস্ট্রি এনালক মিটারের মাধ্যমে যে গ্যাস খরচ করে তার থেকে গ্যাসের দাম বেশি দেয়। এছাড়াও একটি অভিযোগ আছে, গ্যাসের সঙ্গে বাতাসও দেয়া হয়।

তিনি বলেন, সরকার অবৈধ সংযোগ নিষিদ্ধ করে রাখছে। তার পরেও কানেকশন চলমান আছে। নানানভাবে টাকার বিনিময়ে এসব অবৈধ কানেকশনকে বৈধ করা হয়। গত ২ বছর আগে হিসেব ছিল এভাবে ১০ লাখ অবৈধ কানেকশন দেয়া হয়েছে। অবৈধ কানেকশনের সংখ্যা এখন আরও বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক রায়ে ২০১৪ এবং ২০১৬ সালে গ্যাসের সমুদ্রসীমা বিরোধ নিস্পত্তি হয়েছে। তার পরেই ভারত গভীর সমুদ্রে বেশ কয়েকটি জায়গায় বড় গ্যাস ফিল্ড পেয়েছে। মিয়ানমারও গ্যাস পেয়েছে। আমাদের সমুদ্র সীমার পাশে বিশেষ করে মায়ানমার সীমান্তে যে ব্লগগুলো আছে সেগুলোতে গ্যাসের প্রসপেক্ট আছে। কনকো-ফিলিপস এবং দাইয়ু বাংলাদেশ সমুদ্র সীমায় গ্যাস পেয়েছে। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী যা আছে তার থেকে দাম বেশি চেয়েছে। কিন্তু আমরা বেশি দিতে পারিনি বলে তারা চলে গেছে। তাহলে আমরা প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাচ্ছি আমাদের সমুদ্র সীমানায় গ্যাস আছে।

তিনি আরও বলেন, পিএসসি’র আওয়াতায় স্থলভাগের সাঙ্গুর গ্যাস ৩ ডলারের নিচে প্রতি সেপটি কিনতাম, তখন তাদের গ্যাস আইন ভায়োলেট করে সাড়ে ৪ ডলারে কেনার সিদ্ধান্ত দিলাম। তাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয় যতদিন এখানে গ্যাস থাকবে তারা আমাদের কাছে বিক্রি করবে। কিন্তু তারা মাঝখানে আমাদের কাছে দাবি করলো দাম বাড়ায়ে দিতে হবে। আমরা দাম বাড়ায়ে দিলাম। এতে করে তারা চাহিদার তুলনায় গ্যাস বেশি করে তুলে আমাদের কাছে গ্যাস বিক্রি করে তারা চলে গেল। রিজার্ভ যা ছিল তার থেকে বেশি ব্যবহার করতে পারলাম না। কিন্তু দাম হয়ে গেল সাড়ে ৪ ডলার।

আরইউ

বিস্তারিত ভিডিও তে দেখুন…