‘দেশের প্রায় ১০ ভাগ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক’

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘দেশে থ্যালাসেমিয়ার বাহক প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ বা ১০ ভাগ মানুষ। থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর রক্ত পরীক্ষা করা জরুরি।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘থ্যালাসেমিয়া রোগীর চিকিৎসায় বোনমেরু ট্রান্সপ্লান্ট করার জন্য পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে সকল ধরনের সহযোগিতা করবে।’

থ্যালাসেমিয়া হলো এমন একটি রোগ, যা শরীরের হিমোগ্লোবিন ও লোহিত রক্তকণিকা তৈরির ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। থ্যালাসেমিয়া ধারণকারী ব্যক্তি সাধারণত রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতা বা অ্যানিমিয়াতে ভুগে থাকেন।

বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘থ্যালাসেমিয়া একটি রক্তরোগ। বিয়ের আগের পাত্র-পাত্রীর রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে তারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না তা জানা সম্ভব। রক্তের সঙ্গে সঙ্গে চোখেরও পরীক্ষা করা উচিৎ। পাত্র-পাত্রী যদি উভয়ই চোখের মাইনাস পাওয়ারের হয় তবে তাদের সন্তানের চোখও মাইনাস পাওয়ারের হবে। থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে ভর্তির সময় এবং বিয়ের সময় কাজী অফিসে বর-কনের রক্ত পরীক্ষার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।’

সংসদ সদস্য ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, ‘জন্মের পর পরই নবজাতকের রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে থাইরয়েড, বি-ভাইরাসসহ বেশ কিছু রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। দেশে অটিস্টিক শিশুদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১০ বছর পরে কী অবস্থা দাঁড়ায় তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে রুটিন পরীক্ষার উপর জোর দিতে হবে এবং এ বিষয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’

পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি এন্ড অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও এমটিইবি’র সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ টি এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘থ্যালাসেমিয়া একটি বংশানুক্রমিক রোগ। দেশের জনগণের প্রায় ৬-১২ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন ধরনের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। এছাড়াও প্রতি বছর প্রায় সাত হাজার নতুন শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগের জীনসহ জন্মগ্রহণ করে থাকে। থ্যালাসেমিয়া রোগীরা সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী অন্যটি থ্যালাসেমিয়ার বাহক।’

তিনি বলেন, ‘যারা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী তাদেরকে প্রতি মাসেই এক/দুই বার রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয় এবং তারা সারা জীবন এ রোগ বহন করে বেড়ান। এদের অনেকেই ২০-৩০ বছর বয়সের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেন। বোনম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন করে তাদেরকে চিকিৎসা করা হলে সুস্থ হবার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এই দেশে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন জটিল ও ব্যয়বহুল এবং এটা অপ্রতুল।’

তিনি আরও বলেন, ‘অন্যদিকে যারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক তারা এই রোগ বহন করেন এবং আরেকজন বাহককে বিবাহ করলে তাদের সন্তানদের এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু একজন থ্যালাসেমিয়া বাহক যদি একজন নরমাল ব্যক্তিকে (বাহক নয়) বিবাহ করেন তবে তাদের সন্তানদের থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা নেই।’

ডা. এ টি এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘সমাজের সর্বস্তরে এই রোগের ব্যাপকতা এবং একজন বাহক যাতে অন্য একজন বাহককে বিবাহ না করেন, একজন নরমাল ব্যক্তিকে বিবাহ করেন তা নিশ্চিত করা জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘থ্যালাসেমিয়া বিষয়ে জনসচেতনা বৃদ্ধির MTEB (Movement for Thalassemia Eradication in Bangladesh) নামক সামাজিক সংগঠন গঠন করা হয়। এই সংগঠন ও শিশু হেমাটোলজি এন্ড অনকোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ’র যৌথ উদ্যোগে দেশের প্রায় ৪০ জন শিশু রক্তরোগ ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ এবং শিশু বিশেষজ্ঞগণের সমন্বয়ে একটি সুষ্ঠু কর্মশালা সম্পন্ন করে। কর্মশালায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। সিদ্ধান্তসমূহ হলো- দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরা থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না তা জানার ব্যবস্থা করা ও এ ব্যাপারে একজন নরমাল ব্যক্তি এবং থ্যালাসেমিয়া বাহকের বিবাহের ব্যাপারে উৎসাহমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা; জাতীয় ভাবে থ্যালাসেমিয়া স্ক্রীনিং প্রোগ্রাম এবং MIP Couple এর সম্পর্কে জনমত সৃষ্টির জন্য প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক একটি উদ্বোধনমূলক অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থা করা; থ্যালাসেমিয়ার বাহক নির্ণয় ও থ্যালাসেমিয়া নির্মূলের ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগে একটি থ্যালাসেমিয়া Disease Control & Prevention Program গ্রহণ করা; থ্যালাসেমিয়া বাহকগণ যাতে কিছুতেই অন্য একজন থ্যালাসেমিয়া বাহককে বিবাহ করতে না পারেন এ ব্যাপারে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা; দেশে শিশু রক্তরোগ ও ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসার প্রয়োজনে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আহ্বান জানানো।