রং মেশানো লাল চিনি, ২০০ কেজি ধ্বংস

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: স্বাস্থ্য সচেতন অনেকেই নিয়মিত বাজার থেকে লাল চিনি কিনে খাচ্ছেন। তবে বাজারের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এসব লাল চিনি কতটা নিরাপদ বা আসল তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বেশি লাভের আশায় সাদা চিনিতে ক্ষতিকর রং মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে লাল চিনি। বিভিন্ন কোম্পানির নাম দিয়ে সেগুলো রাজধানীসহ সারা দেশে বাজারজাত করা হচ্ছে। এসব চিনি মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে জানা গেছে।

রাজধানীর কাওরানবাজারে বেশ কয়েকটি দোকান থেকে ২০০ কেজির অধিক লাল চিনি জব্দ করে ধ্বংস করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

বৃহস্পতিবার নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে কাওরানবাজারে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার। অভিযানের নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান, সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল, সহকারী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম এবং মো. শাহ আলম।

অভিযানের শুরুতে কাওরানবাজারের কয়েকটি খুচরা দোকানে সতেজ এবং গাংচিল নামে লাল চিনি বিক্রি হতে দেখে ভোক্তা কর্মকর্তারা। পরে এসব চিনির মূল হোতাকে ধরতে এক খুচরা ব্যবসায়ীকে সঙ্গে নিয়ে পাইকারী বিক্রেতার সন্ধানে নামে ভোক্তা অধিদপ্তর। কাওরানবাজারের আরেক প্রান্তে মেসার্স বেলায়েত স্টোর নামের পাইকারী বিক্রেতা এসব লাল চিনি খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। সেখানে অভিযান চালিয়ে ২০০ কেজির বেশি ক্ষতিকর লাল চিনি জব্দ করা হয়।

 এসব লাল চিনি আসল না নকল যাচাই করতে বেলায়েত স্টোরেই পানি আনা হয়। পানির মধ্যে এসব চিনি দিলে চিনি থেকে রং আলাদা হয়ে যায়। চিনি সাদা হয়ে যায় এবং পানি কিছুটা লাল রং ধারণ করে।

এসব চিনি কোথা থেকে আনে বেলায়েত স্টোর, এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটির মালিক। তার কাছে কোনো ক্যাশ মেমোও নেই। একজন ব্যক্তি এসে নাকি এসব চিনি দোকানে পৌঁছে দিয়ে যায় এমনটা দাবি করেন।

পরে সব চিনি উপস্থিত জনসাধারণের সামনে ধ্বংস করা হয়। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠানে ইন্ডাসট্রিতে ব্যবহারের রং পাওয়া যায়। এসব অপরাধে বেলায়েত স্টোরকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এছাড়া কাওরানবাজার কিচেন মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় এ আর এন্টার প্রাইজে ৩৯ বস্তা লাল চিনি পাওয়া যায়। প্রতি বস্তায় ২৫ কেজি চিনি রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানকে সাত দিন জনস্বার্থে বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এবং ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যালয়ে ডাকা হয়।

এছাড়া টেস্টিং সল্টে আমদানীকারকের সিল এবং মূল্য লেখা না থাকায় হাফিস স্টোর এবং মহিউদ্দিন স্টোরকে ৫ হাজার করে মোট ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অভিযানের বিষয়ে আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, বাংলাদেশ চিনি শিল্পের যে লাল চিনি রয়েছে তার আদলে সাদা চিনির মধ্যে টেক্সটাইল রং ব্যবহার করে লাল চিনি প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা হচ্ছিল। এখানে দুটি প্রতিষ্ঠানে এমন চিনির পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। এসব চিনি যদি কোনো ভোক্তা খায় তাহলে ক্যান্সার বা কিডনির ক্ষতি হতে পারে। এসব ক্ষতিকর চিনি বিক্রি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এসব চিনি যারা প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি করছে তাদের নির্ধারিত কোনো ঠিকানা প্যাকেটের মোড়কে নেই। প্যাকেটে শুধু ঠিকানা হিসেবে ঢাকা, বাংলাদেশ লেখা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা একেক সময়  একেক ঠিকানা দিচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা মূল হোতাকে ধরতে সহযোগিতা করছে না। তবে এসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যহত থাকবে। আমরা মূল উৎপাদনকারীকে ধরতে চাই।