ভোক্তা পর্যায়ে আলুর দাম ৩৫ টাকার বেশি যোক্তিক নয়

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: ভোক্তা পর্যায়ে আলুর দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকার বেশি হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ে বুধবার থেকে মনিটরিং জোরদার করবে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজারে অন্যান্য সবজির দাম বাড়ায় আলু ভোগের পরিমাণ বেড়েছে। যার প্রভাবে আলুর সরবরাহ কমেছে এবং দাম বেড়েছে।

এছাড়া, খুচরা ব্যবসায়ীরাও স্বাভাবিকের তুলনায় আলুর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মুনাফা করছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

অন্যদিকে, খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে পাইকারি ব্যবসায়ীদের সরবরাহ সংকটের অজুহাতকে দায়ী করেন। আবার কেউ কেউ হিমাগার থেকে আলু সরবরাহ কমার কথা বলেন।

হিমাগারে যে পরিমাণ খাবারের আলু সংরক্ষণ করা হয় তার ৫৫ শতাংশের মালিক ব্যবসায়ী ও কৃষক। চার শতাংশ আলু শিল্পে ব্যবহারের জন্য। মাত্র এক শতাংশ আলু হিমাগার মালিকদের। বাকি ৪০ শতাংশ বীজ আলু বলে দাবি করে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, হিমাগারে শুধু ব্যবসায়ীরা আলু সংরক্ষণ করেন। দাম বৃদ্ধির বিষয়ে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, কৃষকরা মাঠ পর্যায়ে এ মৌসুমে ১০ থেকে ১২ টাকার মধ্যে আলু বিক্রি করেছেন। যা অন্যান্য খরচসহ ব্যবসায়ীরা হিমাগারে ১৮ থেকে ২০ টাকা দামের মধ্যে সংরক্ষণ করেছিলেন। প্রতি কেজি আলুতে হিমাগারে সংরক্ষণের খরচ পাঁচ টাকা। এরপর সেটি রাজধানীতে পাইকারি ও খুচরা বাজার হয়ে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছাতে সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে খুচরা বাজারে আলুর দাম ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, যা অযৌক্তিক।

তিনি বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে মনিটরিং বাড়ানোর জন্য সব পক্ষের কাছে আগামীকাল (বুধবার) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা যাবে। কৃষি মন্ত্রণালয় কাজ করছে, আমরা কাজ করছি, আশা করা যায় আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আলুর বাড়তি দাম কমিয়ে আনতে সক্ষম হবো।

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, কোনো হিমাগারে অস্বাভাবিক পরিমাণের আলু মজুত থাকলে সে তথ্য আমাদেরকে দিন। এটা নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। আমরাও বিষয়টি দেখবো।

তিনি বলেন, আমরা যেটা দেখেছি মাঠ পর্যায়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ও তথ্য দিয়েছে অন্যরাও যে তথ্যগুলো দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে এবার মাঠ পর্যায়ে ১০-১২ টাকা উৎপাদন খরচের আলু ব্যবসায়ীরা ১৮-২০ টাকা খরচের মধ্যে হিমাগারে সংরক্ষণ করেছে। বাজারে প্রতি কেজি আলুতে খরচ পাঁচ টাকা এছাড়া পরিবহন ও অন্যান্য খরচ দিয়ে সর্বোচ্চ আলুর দাম ২৭ থেকে ২৮ টাকা হলেও ব্যবসায়ীদের মুনাফা থাকে। সেই আলু রাজধানীর পাইকারি বাজারে এসে অন্যান্য খরচ দিয়ে ৩১-৩২ টাকা এবং ব্যবসায়ীদের মুনাফা ধরে ভোক্তা পর্যায়ে এসে সর্বোচ্চ ৩৫-৩৬ টাকা হতে পারে। তবে এখনকার দাম যৌক্তিক নয়।

তিনি আরও বলেন, আমরা দেখছি আলুর দামে ১০-১২ টাকার গ্যাপ রয়ে গেছে। এটা কমানোর জন্য আমরা বুধবার থেকে বাজার মনিটরিং কঠোর ভাবে শুরু করবো। তবে আমরা আলুর দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছি না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুধু আমদানি নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করা যায় আইনে। আলুর মতো কৃষি পণ্যের নয়।

এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, তবে বাজারে যে দামের তারতম্য তৈরি হয়েছে সেটি নিয়ে আমরা কাজ করবো। বুধবার থেকে পাকা রশিদ ছাড়া আলু কেনাবেচা করতে দেওয়া হবে না। ঢাকার শ্যামবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ বাজার মনিটরিং করা হবে।

কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া বলেন, আমরা ভোক্তাদের নিয়ে কাজ করি। ভোক্তা যেন সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পায় এটাই আমাদের দাবি। এফবিসিসিআই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে জেনে আমরা খুশি হয়েছি। ভোক্তা অধিদপ্তর এই ক্ষেত্রগুলোতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। ভোক্তা অধিদপ্তরকে তাদের কার্যক্রমের জন্য ধন্যবাদ জানাই। ভোক্তা-অধিকার নিশ্চিতে সকল সংস্থার সমন্বিত ভাবে কাজ করতে হবে।

সভায় আলুর স্টোরেজ মালিক, পাইকারি ব্যবসায়ী, আড়তদার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

-এসআর