গণবিরোধী নীতি গ্রহণে নিত্যপণ্যের বাজার ও গণপরিবহনে নৈরাজ্য চলছে: ক্যাব

চট্টগ্রাম প্রতনিধি:

সরকারের নীতি নির্ধারকদের বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়োর কারণে গণবিরোধী বেশ কিছু নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। ফলে দেশে নিত্যপণ্যের বাজার ও গণপরিবহণে নৈরাজ্য চলছে। একারণে খাদ্য-পণ্যের অতিরিক্ত মল্য আদায়কারী অসাধু ব্যবসায়ী এবং পরিবহণমালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ক্যাব) চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ।

সোমবার (২২ নভেম্বর) নগরীর বন্দর এলাকার ইপিজেড মোড়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ইপিজেড, বন্দর ও পতেঙ্গা থানার উদ্যোগে আয়োজিত ‘নিত্যপণ্য মূল্যের ক্রমাগত উর্ধ্বগতি ও গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্যের প্রতিবাদে গণঅবস্থান কর্মসূচি’ পালনকালে বক্তারা এসব দাবি জানান।

এ সময়ে বক্তারা বলেন, জ্বালানি তেলের মুল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষি উৎপাদন, রূপ্তানীমুখি শিল্প প্রতিষ্ঠান, নিত্যপণ্যের দাম ও গণপরিবহণের ভাড়া বৃদ্ধিসহ সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকার অনেকগুলি বিষয়ের সাথে জড়িত। আবার জ্বালানী তেলে দাম বাড়ানোর কারনে গণপরিবহন, পণ্য পরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি করে দাম নির্ধারন করে দিলেও গণপরিবহন মালিক, শ্রমিকরা এই ভাড়া মানছে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে ভাড়ার চার্ট বিভিন্ন গণপরিবহনে সাটানো ও পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ হয় নি।

গণপরিবহন, নিত্যপণ্য ও সেবার মূল্য অস্বাভাবিক বাড়ার কারণে সাধারণ ও সীমিত আয়ের মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারের প্রদেয় বেতন দিয়ে সংসার চালাতে না পেরে বিজিবির এক সদস্য আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিতে হয়েছে। গণপরিবহনে হাফ ভাড়ার দাবিতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে শিক্ষার্থীদের সড়কে বিক্ষোভ, অবরোধ ও আন্দোলনর করতে বাধ্য হচ্ছেন।

দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির স্বার্থের কথা চিন্তা করে জ্বালানী তেলে ভর্তুকি প্রদান করা প্রয়োজন। তাই নিত্যপণ্যের বাজার ও গণপরিবহণে ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে সরকারের কঠোর তদারকি নিশ্চিত করে সরকারের নির্ধারিত ভাড়া আদায় করা ও খাদ্য-পণ্যের অতিরিক্ত মল্য আদায়কারী অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, নিত্যপণ্য ও গণপরিবহনের ভাড়া নৈরাজ্য তদারকিতে নিয়োজিত সরকারের মাঠ পর্যায়ের লোকজনের অবহেলা ও দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে সবকিছু ঠিক আছে মর্মে ওপর মহলে তথ্য প্রদান করে সব কিছু ব্যবসায়ীদের ছেড়ে দিয়েছে, ফলে ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামতো দাম-বাড়ায় আর কমায়। সাধারণ মানুষের কান্না সরকারের নীতি নির্ধারকদের কাছে পৌঁছায় না। ফলে জন অসন্তোষ বাড়লেও সরকারের সংস্লিষ্ঠ বিভাগ নীরব। ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিলেও চাল, সয়াবিন তেল, এলপি গ্যাসের দাম কমলেও দেশের বাজারে তার প্রতিফলন নেই। টিসিবির কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করে সীমিত আয়ের মানুষের জন্য রেশনিং সুবিধা বাড়ানোর দাবি করা হলেও সরকার বিভিন্ন সময় টিসিবির পণ্যেরও দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

বক্তাগণ আরও অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায় সময় গণপরিবহন শ্রমিকদের হাফ পাস বা হাফ ভাড়া নিয়ে বাকবিতন্ডা চলমান থাকছে। অথচ গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা মুখে মুখে বুলি আওড়াই, শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়ার নিয়ম অনুসারেই ভাড়া নিচ্ছেন চালকরা। কিন্তু বাস্তবে সেই চিত্রের কোনো ছিটেফোঁটাও নেই। এছাড়া ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পর নগরের বিভিন্ন সড়কে চলাচল করা গণপরিবহনগুলো অর্ধেক ভাড়ার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করে চলেছে পুরো বর্ধিত ভাড়াও। এ যেন রীতিমতো ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসাবে আর্বিভুত হয়েছে। একই সংগে দরিদ্র, অস্বচ্ছল-শির্ক্ষাথী, প্রতিবন্ধী ও গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য গণপরিবহনে হাফ ভাড়া নিয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন।

ক্যাব ৩৯ নং ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি আলহাজ মোঃ ইদ্রিসের সভাপতিত্বে গণঅবস্থান কর্মসুচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন ও মুখ্য আলোচক ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, পরিবেশবিদ অধ্যপাক ডঃ ইদ্রিস আলী। ক্যাব সংগঠক ও প্রজন্ম চট্টগ্রামের প্রধান নির্বাহী চৌধুরী জসিমুল হকের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশনেন ক্যাব বন্দর পতেঙ্গা থানা সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী সিকদার, ক্যাব ইপিজেড থানার আলমগীর বাদসা, ক্যাব খুলসীর সভাপতি প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান, ক্যাব চান্দগাঁও থানা সভাপতি মুহাম্মদ জানে আলম, ক্যাব পাঁচলাইশ থানা সাধারণ সম্পাদক সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব পাহাড়তলীর হারুন গফুর ভুইয়া, ক্যাব মহানগরের নেত্রী শিরিন শাহীন, ক্যাব জামালখানের হেলাল চৌধুরী, ৪১ নং ওয়ার্ড ক্যাব নেতা মোঃ নাসিরুল আলম, সাংবাদিক বাবুল হোসেন বাবলা, ক্যাব ৪০ নং ওয়ার্ড সভাপতি আজিজুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।