দেশে প্রতি ১০ লাখে করোনা পরীক্ষার সুযোগ মিলছে ৮০ জনের

ভোক্তাকন্ঠ প্রতিবেদন: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসের পরীক্ষার ওপর জোর দিয়ে আসছে। সংস্থাটি প্রকাশিত সর্বশেষ করোনাভাইরাস প্রতিরোধবিষয়ক কৌশলপত্রে বলেছে, এখন পর্যন্ত এ রোগের কোনো টিকা বা সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। পরীক্ষার মাধ্যমে দ্রুত রোগী শনাক্ত করা এবং তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা গেলে এই ভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হবে।

কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের তুলনায় এ রোগের পরীক্ষায় বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে। দেশে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে গড়ে ৮০ জনের কোভিড-১৯ শনাক্তকরণের পরীক্ষা হচ্ছে। মোট জনসংখ্যার অনুপাতে যা একেবারেই কম। বিশ্বের বেশি শনাক্তকারী দেশগুলোতে যার হার প্রতি ১০ লাখে ১০ হাজারেরও বেশি।

গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নমুনা পরীক্ষা আরও বাড়ানো হবে। তাতে সারা দেশের পরিস্থিতি বোঝা যাবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

বর্তমানে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মোট ১৭টি ল্যাবরেটরিতে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণের পরীক্ষা হচ্ছে। এসব ল্যাবরেটরিতে দিনে সাড়ে চার হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করার সক্ষমতা থাকলেও এখন পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ পরীক্ষা হয়েছে ২ হাজার ১১৯টি। ফলে বিদ্যমান ল্যাবরেটরিগুলোর সক্ষমতার অর্ধেকের বেশি অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। কোভিড–১৯ শনাক্তকরণে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৪ হাজার ৮৬৮ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৫৭২ জনের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা বাড়লে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যাও বাড়বে। পর্যাপ্ত পরীক্ষা না হওয়ায় করোনা–আক্রান্ত ব্যক্তি আইসোলেশনে না থেকে সাধারণভাবে চলাফেরা করেন। এতে একজনের মাধ্যমে আরও অনেকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।

করোনা পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার শুরু থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখে ৮০ জনের করোনার পরীক্ষা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাব অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা হচ্ছে মালদ্বীপে। দেশটিতে প্রতি ১০ লাখে ৫ হাজার ৩৬৩ জনের পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রথম রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৭ মার্চ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগী ২১ জন।

এছাড়া ভুটানে প্রতি ১০ লাখে ১ হাজার ৫১১, পাকিস্তানে ৩৩২, শ্রীলঙ্কায় ২২৩, নেপালে ২১৬ এবং ভারতে ১৭৭ জনের পরীক্ষা করা হচ্ছে। ভারতে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৩০ জানুয়ারি। এ পর্যন্ত শনাক্ত মোট রোগী সাড়ে ১১ হাজার ছাড়িয়েছে।

আবার বাংলাদেশের চেয়ে কিছুটা কম পরীক্ষা হচ্ছে আফ্রিকার দেশগুলোতে। এসব দেশে সংক্রমণ এখনো ততটা বিস্তৃত হয়নি। প্রতি ১০ লাখ মানুষের বিপরীতে ৫০ জনের কম পরীক্ষা হচ্ছে এমন দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে নাইজেরিয়া, হাইতি, জিম্বাবুয়ে, ইথিওপিয়া।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানিয়েছেন, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে আরও ১১টি নতুন পরীক্ষাকেন্দ্র চালু করা হবে। কেন্দ্রগুলো হলো কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, মুগদা মেডিকেল কলেজ, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুরের এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ এবং বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ।

পরীক্ষার সংখ্যা বাড়লে করোন শনাক্তকরণ কিটের প্রয়োজন হবে। ১১ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে জানানো হয়, দেশে করোনা শনাক্তকরণ কিটের মজুত রয়েছে ৭১ হাজার। এরপরে আরও চার দিন স্বাস্থ্য বুলেটিন হলেও কিটের মজুত কত, তা জানানো হয়নি।