বইয়ের অক্ষর নয়, যেন স্বপ্ন পুড়ে ছাই

মো. রাকিব:

বহুদিনের লালিত স্বপ্ন যেন নিমেষেই পুড়ে ছাই। চোখের সামনে এইভাবে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে অসহায় আর্তনাদ জীবন নামের এক বই বিক্রেতার। শুধু জীবনের নয়, এভাবে নিজেদের সামনে নীলক্ষেত বই মার্কেট আগুনে ভস্মীভূত হওয়াকে মেনে নিতে যেন কষ্ট হচ্ছে উপস্থিত মানুষের।

রাজধানীর নীলক্ষেত বই মার্কেটে গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ৪৩ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটসহ, বিএনসিসি, এবং কয়েকটি সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায় প্রায় দুই ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। কিন্তু ততক্ষণে ৩০টিরও বেশি দোকান আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়৷ এতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত করে জানানো হয়নি।

ব্যাবসায়ীদের কেউ কেউ ক্ষতির পরিমাণ বলছে ৩০ কোটিরও বেশি। এমন সময় তারা সরকারির প্রতি বিশেষ আবেদন জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া হয়, তাহলে হয়তো তাদের কষ্ট কিছুটা লাগব করা সম্ভব হবে। অন্যথায় পথে বসার মতো অবস্থা বলে জানিয়েছেন সুমন নামের অন্য এক ব্যাবসায়ী।

করোনাকালীন সময় দেশের সবকিছুই বন্ধ ছিলো। বন্ধ ছিল দেশের অন্যতম বৃহৎ বই মার্কেট নীলক্ষেতও। করোনা পরবর্তী সময়ে বই ব্যবসায়ীরা আড়মোড়া দিয়ে ব্যবসায় মনোনিবেশ করে নিচ্ছিলো। নতুন বছরে সব নতুন বই সাজিয়ে ক্রেতার জন্য অপেক্ষা। তারপর আবার কোভিড-১৯-এর কারণে স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হলো। করোনাকালীন সময় ব্যবসায়ীরা মাসে মাসে দোকান ভাড়া টেনে নিঃস্ব প্রায়।

এসময় নিজেদের সাথে সংগ্রাম করে পার পাচ্ছিলেন না অনেকে, যার ফলে ব্যবসা গুটিয়ে পথে বসে গেছে। ব্যবসা ছেড়ে অনেকে দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করছে। যারা মোটামুটি ব্যবসা গুছিয়ে উঠছে তাদের চোখেমুখে আতঙ্ক, কবে অব্দি স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি খুলবে। স্কুল, কলেজ খোলার ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এক দোকানে ঝালাইয়ের কাজ করার সময় আগুন লেগে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস এসে যতক্ষণ আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছেন ততক্ষণে ৩০টি দোকান পুড়ে ছাই। এভাবে নিজের কথাগুলো ভোক্তা কণ্ঠকে জানাচ্ছিলেন রাসেল নামে এক ব্যাবসয়ী।

ব্যবসয়ী সূত্রে জানা যায়, বেশিরভাগ-ই নতুন করে ঋণ করে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তাদের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। এই মুহুর্তে ব্যবসায়ীরা সরকারের দিকে তাকানো ছাড়া কোন উপায় নেই বলে জানানো হয়।

সরকারের পাশাপাশি তারা স্থানীয় মার্কেট কমিটি এবং দোকান মালিকদের দিকেও তাকিয়ে আছে।

আরইউ