বাজার নিয়ন্ত্রণে ক্যাব’র তিন প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জাতীয় পরিচয় পত্রের (এনআইডি) ভিত্তিতে রেশন কার্ডের অনুরূপ কার্ডের মাধ্যমে টিসিবি’র পণ্য বিপণন কেন্দ্র থেকে পণ্য সংগ্রহ করতে পারবেন নিম্ন ও মধ্যআয়ের ভোক্তারা।

বুধবার বিকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এই প্রস্তাব করেছে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ, আমদানি, মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে ক্যাবের পক্ষ থেকে তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেন কাজী আব্দুল হান্নান।

ক্যাবের পক্ষ থেকে প্রস্তাব
১) আমদানি নির্ভর পণ্যের ক্ষেত্রে প্রতিদিনের বিশ্ব বাজারের দামের পরিবর্তন এবং আমদানী ব্যয় মিলিয়ে তার পাইকারী বাজারের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করুন। এসব পণ্যের খুচরা মূল্য নির্ধারণের বিষয়টিসহ একটি মডিউল তৈরী করে তার ভিত্তিতে প্রতিদিনের ডাটা একটি সফটওয়ারের মাধ্যমে সরবরাহ করুন। আপনাদের সেই তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ব বাজারের দর পরিবর্তন, দেশে সেই পণ্যের মজুদ পরিস্থিতি, দিনের পাইকারী মূল্য ও খুচরা মূল্য প্রতিদিন প্রকাশ করার দায়িত্ব নেবে ক্যাব। যা প্রতিবেশী ভারতসহ অনেক দেশই করে। আমরাও এই কাজটা করতে পারলে জনসাধারণ নিজেই বাজার নিয়ন্ত্রণে বড় নিয়ামক হয়ে উঠবে। সরকারের বাজার তদারকির দায়িত্ব অনেক কমে যাবে।

২) বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিটি আমদানি চালানের একটি ন্যূনতম অংশ বাফার স্টক হিসেবে আমদানিকারীর কাছেই সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করুন। যা বিভিন্ন সময়ের বর্ধিত চাহিদা মেটাতে, কিংবা আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যবৃদ্ধিজনিত সংকট মোকাবেলার জন্য কেবলমাত্র সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী ছাড়া যাবে। এই ব্যবস্থা করা গেলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাড়তি মুনাফা তুলে নেয়ার জন্য সিন্ডিকেট করার প্রবণতা অনেক কমে যাবে।

৩) খোলাবাজারে তথা ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি ক্রমশ নানা দুর্নীতিগ্রস্ত ও ক্ষেত্র বিশেষে তামাশায় পরিণত হচ্ছে। অতিদারিদ্র্য সীমার নীচের যারা তাদের জন্য এটা সহায়ক একটি ব্যবস্থা হলেও এর মধ্যেই কালোবাজারে এসব পণ্যের বেঁচাকেনা শুরু হয়ে গেছে। অথচ অতিদরিদ্ররা ছাড়া অধিকাংশ দারিদ্র সীমার আশপাশের মধ্যবিত্ত চাকরিজীবি ভোক্তাদের জন্য এই ব্যবস্থা কোন ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারছে না। তাদের জন্য বিপণন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। টিসিবির উচিত তাদের জন্য কর্মদিবসে অফিস সময়ের পর এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নিয়মিত নির্ধারিত স্থান থেকে আলাদাভাবে বিপণনের ব্যবস্থা করা। হতে পারে সেটা এক সময়ের কসকরের ন্যায্যমূল্যের দোকানের মত বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকায় আউটলেট খুলে টিসিবি এটা করতে পারে। সেক্ষেত্রে নিম্ন ও মধ্যআয়ের ভোক্তাদের জন্য এনআইডির ভিত্তিতে রেশন কার্ডের অনুরূপ কিছু ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যার মাধ্যমে এসব পণ্য তারা বিপণন কেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করতে পারবে।

এসময় কাজী হান্নান বলেন, করোনার কারণে মধ্য ও নিম্ন বেতনের বেসরকারি খাতের কর্মচারীদের বেকারত্ব অথবা বেতন হ্রাসের ফলে ভোক্তা হিসেবে তাদের আর্থিক সঙ্গতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। মধ্যবিত্ত থেকে একটা বড় অংশ নেমে যাচ্ছে দারিদ্র্য সীমায়। তাছাড়াও জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার এবং গড় মাথাপিছু আয় বাড়ার কারণে অর্থনৈতিক নিয়মেই দেশে ভোক্তাদের মধ্যে আয় বৈষম্য বাড়ছে। এ অবস্থায় ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া ভোক্তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি হিসাবে রেখে নিত্যপণ্যের বাজার ব্যস্থাপনা কার্যক্রমের পরিকল্পনায় নিয়মিত কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, সামনে রমজানে বর্ধিত চাহিদাকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা বাড়তি মুনাফার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে, যা এ দেশে স্বাভাবিক প্রবণতা হয়ে গেছে। সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের বৈশ্বিক প্রভাব। তাই বাজার মনিটরিং এর ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনুন। আপনারা বাজার মনিটরিং করেন। ক্যাবও করে। আপনাদের হয়েই করে। এক্ষেত্রে তথ্যের বহুমুখী প্রবাহের ভিন্নতায় এই মনিটরিং থেকে ভোক্তাদের কার্যত কোন উপকার হচ্ছে না।

আরইউ