ভেজাল দিয়েন না অভিযানও হবে না : খাদ্যমন্ত্রী

ভেজালবিরোধী অভিযান নিয়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানিয়েছেন, আপনারা প্রতিজ্ঞা করেন ভেজাল দিবেন না, সঠিক নিয়ম মেনে মানুষকে খাদ্য সরবরাহ করবেন, তাহলে আপনাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করার প্রয়োজনই হবে না।

মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) ঢাকায় ইন্টার কন্টিনেন্টাল গ্রান্ড বলরুমে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আয়োজিত ‘নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ ও বিধি-প্রবিধি সম্পর্কে অবহিতকরণ এবং জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যম’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান ভেজালবিরোধী অভিযানের নামে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ভোক্তা অধিদফতরসহ বিভিন্ন সংস্থার অভিযানের নামে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। আইন তৈরি করে আমাদের না বুঝিয়ে প্রয়োগ করা হচ্ছে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার সাত বছর হয়েছে। তারা নিজেরাই এখনো গোছাতে পারেনি। আইন করা হয়েছে এর বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারে না। একজন ম্যাজিস্ট্রেট যার খাদ্যের ভেজাল বিষয়ে ধারণা নেই; তিনি গিয়ে জরিমানা করছেন। আর জরিমানার অর্থ দিতে না পারলে তাকে সাজা দিয়ে জেলে পাঠাচ্ছেন। জামিন অযোগ্য এই আইন আমাদের ভোগাচ্ছে। আমরা সব রেস্তোরাঁর মালিক এখন ঐক্যবদ্ধ। আমাদের নিয়ে বসে এটার সমাধান করেন। কি আইন বানিয়েছেন আমরা জানি না, তাহলে কেন শাস্তি পাব?

এর পরিপ্রেক্ষিতে হোটেল-রেস্তোরাঁ ও ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা বলছেন ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন, এটা ভালো। তবে এ ঐক্যবদ্ধ হয়ে যদি শুধুমাত্র সরকারের ভুল ধরা, আইন প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করা আর আইনের বরখেলাপ করা হয় তাহলে আমি মনে করি আপনাদের এই ঐক্যবদ্ধ দেশের জন্য ক্ষতিকর, মানুষের জন্য ক্ষতিকর। আর মানুষের জন্য যা ক্ষতিকর তা নিয়ন্ত্রণে আমরা সবসময় সোচ্চার আছি, থাকব।

মন্ত্রী বলেন, একজন ম্যাজিস্ট্রেট যখন গিয়ে দেখেন আপনার ফ্রিজে দুইদিন আগে রান্না করা বাসি খাবারের সঙ্গে কাঁচা মাংস রাখা, পোড়া তেল পরেরদিন রান্না করার জন্য রেখে দিয়েছেন, খাবার অনুপোযোগী খাদ্যপণ্য বিক্রি করছেন তখনই আপনাকে জরিমানা বা শাস্তি দেওয়া হয়। তাই আপনারা প্রতিজ্ঞা করেন ভেজাল দিব না, আমরা সঠিকভাবে মানুষকে খাদ্য সরবরাহ করব। তাহলে আমি মনে করি আপনাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করার প্রয়োজনই হবে না।

নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ, বিপণন এবং গ্রহণের সুঅভ্যাস তৈরির প্রচেষ্টা সরকার চালিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, জনসচেতনতা এই প্রচেষ্টাকে আরও সার্থক ও সফল করতে পারে। এসময় তিনি দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

মন্ত্রী বলেন, উৎপাদন থেকে শুরু করে খাদ্য শৃঙ্খলের সব পর্যায়ে খাদ্যের নিরাপত্তা রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। নিরাপদ খাবার নিশ্চিত হলেই একটি সুস্থ, সবল, কর্মঠ এবং মেধাবী জনগোষ্ঠী তৈরি করা সম্ভব হবে। আর সেই লক্ষ্যেই ২০১৩ সালে প্রণয়ন করা হয় নিরাপদ খাদ্য আইন-যা কার্যকর হয় ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি।

তিনি বলেন, আট বিভাগে মোবাইল ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হচ্ছে। এর ফলে উপজেলা পর্যায়ে খাদ্য পরীক্ষা করে তা নিরাপদ কি না জনগণকে অবিহত করা সম্ভব হবে। শিগগিরই নারায়ণগঞ্জে জাইকার অর্থায়নে এশিয়ার বৃহৎ টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে খাদ্যের মান নির্ণয় করে সনদ দেওয়া সহজ হবে। এসময় তিনি যার যার অবস্থান থেকে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকারের সভাপতিত্বে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম এবং চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা সম্পাদক শাইখ সিরাজ সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।

খাদ্য সচিব বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার কাজটি ধাপে ধাপে এগোচ্ছে। ইতোমধ্যে সব জেলায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আট বিভাগীয় শহরে নিরাপদ খাবার টেস্টিং ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে গ্রাহকের কাছে নিরাপদ খাবার পৌঁছে দেওয়া আরও সহজ হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম থেকেই নিরাপদ খাদ্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে শাইখ সিরাজ বলেন, মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করে কৃষক তার অজান্তেই খাদ্যকে বিষাক্ত করে তুলছেন। আবার প্রয়োজনেরও বেশি সার ব্যবহার করে তিনি মাটির উর্বরতাও নষ্ট করে ফেলছেন। তিনি উৎপাদক পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে যৌথভাবে কৃষি, খাদ্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে কার্যক্রম গ্রহণের অনুরোধ জানান।