লকডাউনে লম্বা লাইন ওএমএসে, খালি হাতেও ফিরতে হচ্ছে

করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টায় যে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে, তা ওএসএসের লাইনে নিম্ন আয়ের মানুষদের ভিড় বাড়িয়েছে। আর চাহিদা বাড়লেও জোগান না বাড়ায় দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অনেককে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে।

শনিবার সকালে ঢাকার মালিবাগে টিসিবির পণ্য বিক্রির কেন্দ্রের সামনে থাকা শাহনাজ বেগম জানালেন, কয়েক দিন তাকে নিস্ফল হয়ে ফিরতে হয়েছে।

মালিবাগ রেললাইনের পাশের একটি বস্তিতে থাকেন এই নারী। এসেছিলেন চাল-আটা কিনতে।

শাহনাজের স্বামী একজনের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ছিলেন। লকডাউন শুরু হওয়ায় তার চাকরি গেছে। পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে এক বিপদেই তারা।

শাহনাজ বলেন, “চারদিন হল হের (স্বামী) ডিউটি নাই। এখন তো আয়-রোজগারের কোনো পথও নাই। চারটা বাচ্চা আছে ঘরে। দিনে আড়াই কেজি চাল লাগে।

“আমরা তো খাই শুধু ভাতটাই, অন্যকিছু তো কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নাই। এই চালও ঠিকমতো পাই না। এখানে (ওএমএস কেন্দ্র) একদিন পাইলে তিন দিন পাই না। খালি হাতে ফেরত যেতে হয়।”

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দীর্ঘ লাইনের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা শাহনাজ কথা বলার সময় অস্থির চোখে সামনে তাকাচ্ছিলেন। বুঝতে চাইছিলেন, আজ পাবেন কিনা।

তিনি বললেন, “আইজ ঘরে এক মুটো চালও নাই। এখানে ১টা বাজলেই চাল শেষ হয়ে যায়। যদি চাল না পাই তাহলে বাইরে থেকে কেনার সামর্থ্য আমার নাই। তখন বাচ্চাগুলোরে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।”

শাহনাজের পরিবারের মতো অনেকেরই লকডাউনের প্রভাবে আয়ের পথ বন্ধ হয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষগুলো কম মূল্যে বিক্রি হওয়া সরকারের খোলা বাজার বিক্রি (ওএমএস) দোকানে চাল-আটার জন্য ভিড় করছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে ওএমএসের ট্রাকগুলোতে নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর ভিড় আগের তুলনায় দ্বিগুণেও বেশি বেড়েছে।

খাদ্য অধিদপ্তর পরিচালিত ওএমএসের দোকানে কিংবা ট্রাকে ৩০ টাকা কেজিতে চাল ও ১৮ টাকা কেজিতে খোলা আটা বিক্রি করা হয়। এসব কেন্দ্রে থেকে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি চাল ও পাঁচ কেজি আটা নিতে পারেন।

ঢাকা নগরীর ৯৪টি ওএমএস দোকান ও ১০টি ট্রাকে এসব চাল ও আটা ডিলারদের মাধ্যমে সরকার বিক্রি করছে।

বাজার থেকে কম মূল্যে চাল এবং আটা কিনতে এসব ওএসএম কেন্দ্রে সকাল থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

শনিবার মালিবাগ বিশ্বরোড এলাকার ওএমএস কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, দুটি আলাদা লম্বা লাইনে চাল-আটা কিনতে নারী ও পুরুষদের ভিড়।

কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশের পরিবারেই উপার্জনক্ষম ব্যক্তি চাকরি হারিয়েছে। যে কারণে কম দামে চাল-আটা কিনতে সেখানে এসেছে।

লাইনে শাহনাজের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন তালতলা থেকে আসা স্বামীহারা আরেক নারী আছিয়া আক্তার। কয়েক বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে তার চারজনের সংসার।

তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার এখানে এসেছিলাম চাল-আটা কিনতে, পাইনি। পরে বাজার থেকে কিনে নিয়েছিলাম। আজ আবার আসলাম, জানি না পাব কি না?”

অন্যের বাড়িতে কাজ করা আছিয়াও মহামারীর কারণে দুই সপ্তাহ আগে চাকরি হারিয়ে এখন কম দামে নিত্যপণ্য কেনার লাইনে দাঁড়িয়েছেন।

চালের জন্য লাইনে দাঁড়ানো দিনমজুর মো. হাসান বলেন, “এখন একেবারেই কাজ নাই, যে কয়েকটা টাকা জমানো ছিল, তা নিয়ে আসলাম চাল কিনতে। পাব কি না জানি না?

“দুইদিন এখানে আইসা লাইনে কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম, ১টা বাজলে জানালো আজকে মত শেষ, পরের দিন আবার আসতে বলে বিদায় করে দিল। আজকে আবার আসলাম।”

ওএমএসের ডিলারদের দাবি, লকডাউন শুরু হওয়ার আগে নগরীর ৯৪টি ওএমএস কেন্দ্র ও ১০টি ট্রাকে যে পরিমাণ বরাদ্দ ছিল, তা বাড়ানো হয়নি। যে কারণে এসব চাল ও আটার চাহিদাসম্পন্ন লোকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।