প্রসাধনী ফাঁদে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে তরূনীরা

বর্তমানে আধুনিক তরুণীদের রূপ চর্চা করার বিশ্বস্ত জায়গা হচ্ছে বিভিন্ন বিউটি পার্লার। বিয়ে বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য তরুণীরা সাধারণত বিউটি পার্লারে লিপস্টিক, লিপ লায়লার, আইলেনার, মার্সকারা, আইসেট, কাজল, ফাউন্ডডিশন, সাইনিং মেকআপ, এবং ত্বকের ধরন বুঝে বিভিন্ন ধরনে মেকআপ ইত্যাদি প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকে।

ফেসিয়ালের জন্য ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনে ফেসিয়াল ক্রীম যেমন, নিম ফেসিয়াল,গোল্ডেন ফেসিয়াল। ফেসিয়াল ক্রীমগুলোর মধ্যে হলো, মার্সাস ক্রীম, এলোব্রেরা ক্রিম, নিম ক্রিম,ম্যাংগো ক্রিম, স্ক্যাব ক্রিম, ব্যানানা ক্রীম, রোজ ক্রীম ইত্যাদি।আর এই সুযোগে সারা পৃথিবীর প্রসাধনীর কোম্পানিগুলো কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে নিচ্ছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে এই সকল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে সৌন্দর্যের সংজ্ঞাই পরিবর্তন করে দিচ্ছে। টেলিভিশনের, বিলবোর্ড, এমনকি ইন্টারনেটে দেওয়া বিজ্ঞাপন আর মডেলদের জমকালো শারীরিক উপস্থাপন সাধারণ মানুষের মধ্যে নিজেদের নিয়ে হীনম্মন্যতা আর নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে তাদেরকে মানসিকভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে।

Collected From Internet

প্রসাধনী ব্যবহারের সবচেয়ে বড় হুমকিগুলোর একটি হলো ক্যান্সারের সম্ভাবনা। লিপস্টিকে থাকে অ্যালুমিনিয়াম, যা ঘটাতে পারে রক্তশূন্যতা আর শর্করার প্রতি অসহনশীলতা। অনেক প্রসাধনী দীর্ঘদিন খোলা আবহাওয়াতে ভালো রাখার জন্য যে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, তা ত্বকের ক্যান্সারের সম্ভাবনাকে অনেক বেশি বাড়িয়ে তোলে। এছাড়া প্রসাধনী ও মেক আপ সামগ্রীতে থাকা জিংক অক্সাইড, বেরিয়াম সালফেটের মতো উপাদানও হতে পারে ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। এসকল উপাদান বয়ে আনতে পারে কিডনি আর যকৃতের বিভিন্ন জটিলতাও। এমনকি অঙ্গ বিকলকরণের মতো ভয়াবহ ফলাফল আনতে পারে এগুলোর একটানা দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার।

মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে প্রসাধনী আর মেক আপ পণ্যের দৈনন্দিন ব্যবহার। ইউরিয়া ডায়াজোডিনিলের মতো অনেক রাসায়নিক উপাদান বেশিরভাগ প্রসাধনী তৈরির প্রধান উপাদান। এছাড়া ব্যবহার করা হয় এসব প্রসাধনী দীর্ঘদিন ভালো রাখার জন্য আরো অনেক অণুজীবরোধক রাসায়নিক উপাদান। এসকল প্রসাধনী যখন সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে আসে, তখন আরো অনেক ক্ষতিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দিতে পারে মাথাব্যথা। আবার এসব প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত চোখের প্রভাবেও দেখা দিতে পারে মাথাব্যথা। বিশেষ করে মাইগ্রেন আর আগে থেকেই মাথাব্যথায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য প্রসাধনী ব্যবহারে সচেতন হওয়া কিন্তু বেশ জরুরি। এছাড়া মাথাব্যথা হতে পারে প্রসাধনী থেকে ক্ষতিগ্রস্ত চোখ থেকেও।

এ কথা তো নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে এসব প্রসাধনীর ব্যবহার অনেক বেশি। আর মেয়েদের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাবও ছেলেদের তুলনায় অনেক বেশি। এমনকি মেয়েদের গর্ভধারণ ক্ষমতাও এই কারণে নিদারুণ ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারে। পাউডার যদি কখনো দেহের ভেতরে চলে যায়, তবে সারা শরীরের সাথে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বংশবৃদ্ধির ক্ষমতাকে।

পার্লারগুলো রুপসজ্জায় যেসব প্রসাধনী ব্যবহার করছে তার বেশিরভাগই নকল। দেশের তৈরি এসব পন্য বিদেশি বলে প্রতারনা করছে। মানুষের ত্বক ও স্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তাদের ব্যবহার করা বেশির ভাগ পন্য মেয়াদ ফেল। অনেক পন্যের গায়ে উৎপাদনের তারিখও নেই। তারা মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য নিচ্ছে কিন্তু ভোক্তাদের যথাযথ সেবা দিচ্ছে না এমন অভিযোগ অনেক গ্রহকের ।

Navrang Cosmetic Bangles Artificial Jewellery, Shivarampalli - Cosmetic  Dealers in Hyderabad - Justdial
Collected From Internet

বিভিন্ন মার্কেটে ১০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে লেকমি ব্র্যান্ডের কাজল (লেকমি)। বিক্রেতার ভাষ্য, পণ্যটি সরাসরি ভারত থেকে আমদানি করা। অথচ এর গায়ে দাম লেখা ১৮০ রুপি (ভারতীয় মুদ্রা)।

বর্তমানে বাংলাদেশের ১০০ টাকার মূল্যমান ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮০ রুপি। প্রসাধন সামগ্রী বিক্রেতার সঙ্গে কুলিয়ে ওঠা যাবে না। হাতে গোনা যে কয়টি দোকানে প্রকৃতই বিদেশি প্রসাধনী পাওয়া যায়, সেখানে এই রুপি-টাকার মূল্যমানের বিপদ। নকল পণ্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে বাড়তি দামে আসল পণ্য কেনার চেষ্টা করেন ক্রেতারা। সে ক্ষেত্রে দ্বিগুণের বেশি টাকা খরচ করতে হয়।সৌন্দর্য প্রকৃতপক্ষে যে দেখে, তার দৃষ্টিতে থাকে। সৌন্দর্যের আসল উৎস আসলে মানুষের মন।সামান্য বাড়তি সৌন্দর্যের প্রতি লোভ জীবনে অভিশাপ হয়ে আসতে পারে।